পিএনএস ডেস্ক : থানায় মা-বাবাকে দেখেই চিৎকার করে কেঁদে ওঠে শিশু সুমাইয়া। বলে, ‘আব্বু-আম্মু আসছ? আমাকে তোমরা খুঁজেছিলে?’ পুলিশের ধারণা, ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে সুমাইয়াকে (৫) অপহরণ করা হয়েছিল। সুমাইয়ার গায়ে মারধরের চিহ্ন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার মা-বাবা।
গতকাল বুধবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে সুমাইয়াকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বৃষ্টি নামের এক নারী ও তাঁর বাবা সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেছে।
প্রসঙ্গত, ২ এপ্রিল কামরাঙ্গীরচরের বড়গ্রাম এলাকায় বাড়ির সামনে থেকে সুমাইয়া অপহৃত হয়। এ ঘটনায় সুমাইয়ার বাবা জাকির হোসেন ২৪ এপ্রিল কামরাঙ্গীরচর থানায় অপহরণের মামলা করেন। নিখোঁজ হওয়ার ২২ দিন পর পুলিশের সব কটি বাহিনী সুমাইয়ার খোঁজে মাঠে নামে।
সুমাইয়াকে উদ্ধারের পর ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লালবাগ জোনের উপকমিশনার ইব্রাহীম খান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপহরণের অভিযোগে গ্রেপ্তার বৃষ্টির একাধিকবার ভারতে যাওয়া-আসার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন ফকির বলেন, গত রাতে সুমাইয়াকে কদমতলী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। শিশুটি এখন পুলিশের হেফাজতে আছে। তিনি বলেন, গতকাল সকাল আটটা থেকে তাঁরা চূড়ান্ত অভিযান শুরু করেন। বৃষ্টিকে চেনেন, এমন তিনজন ব্যক্তিকে প্রথমে আটক করা হয়। পরে তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কদমতলী থানার কামালের বাড়ি থেকে বৃষ্টি ও তাঁর বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, ভোর চারটার দিকে তাঁরা ওই এলাকার সব কটি বাড়ি ঘিরে ফেলে। পরে কামালের বাড়িতে ঢুকে সুমাইয়াকে দেখতে পায়। সুমাইয়া তখন ঘুমাচ্ছিল। লালবাগ অঞ্চলের উপকমিশনার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ ঘুমন্ত সুমাইয়াকে কোলে তুলে নেন। ওই সময় গ্রেপ্তার করা হয় বৃষ্টি ও তাঁর বাবাকে। ভোর পাঁচটার দিকে সুমাইয়ার মা-বাবাকে কামরাঙ্গীরচর থানায় ডেকে পাঠায় পুলিশ।সুমাইয়ার মা মুনিয়া বেগম বলেন, ‘ভোরবেলা থানায় আমাদের দেখে সুমাইয়া বলে, “আব্বু-আম্মু আসছ? আমাকে তোমরা খুঁজেছিলে?” এই বলেই সে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।’
সুমাইয়ার গায়ের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের দাগ রয়েছে বলে তার মা-বাবা জানান। চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে পাঠানোর কথা রয়েছে বলে জানান তাঁরা।
সুমাইয়ার বাবা জাকির হোসেন স্টিল কারখানার কর্মচারী এবং মা মুনিয়া বেগম গৃহিণী। এর আগে সুমাইয়ার বাবা বলেছিলেন, ঘটনার দিনই তাঁরা কামরাঙ্গীরচর থানায় জিডি করেন। কিন্তু মেয়েকে পাচ্ছিলেন না। নিজেই এলাকায় মাইকিং করেছেন, পোস্টার সেঁটেছেন। কয়েক দিন আগে তাঁদের বাসার পাশের একটি বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, বাসার সামনে থেকে সুমাইয়া কালো বোরকা পরা এক নারীর হাত ধরে স্বচ্ছন্দে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফুটেজে নারীর মুখ দেখা যাচ্ছে না। তবে সুমাইয়ার মা-বাবা ও প্রতিবেশীরা ওই নারীকে আগেও দেখেছেন বলে দাবি করেন। সুমাইয়ারা এখন যে বাসায় থাকে, ওই নারী একসময় সেই বাসাতেই ভাড়া থাকতেন। সামনের মুদির দোকান থেকে তিনি বাকিতে কেনাকাটা করতেন। সেখানে তাঁর নাম লেখা আছে অথৈ আক্তার বৃষ্টি। একটি মুঠোফোন নম্বরও দেওয়া আছে। তবে ঘটনার পর থেকে ওই মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
অথৈ আক্তার বৃষ্টি যে টিনের ছাউনির বাড়িতে থাকতেন, সেই বাড়িওয়ালা হাসনাহেনা বলেন, ভাড়া নেওয়ার সময় তাঁরা বলেছিলেন, হাজারীবাগে তাঁদের একটা কাপড়ের কারখানা আছে। স্বামী-স্ত্রী প্রতিদিন ঝগড়া করতেন। শেষে বাধ্য হয়ে বাড়ি থেকে তুলে দেন। পরে বাসাটি সুমাইয়াদের ভাড়া দেওয়া হয়। এই বাসা ছেড়ে গেলেও বৃষ্টি এর আগেও দু-একবার সেখানে বেড়াতে এসেছেন।
সুমাইয়ার মা মুনিয়া বেগম বলেন, ঘটনার দিন বৃষ্টি এসে বাড়িওয়ালার খোঁজ করছিলেন। বাড়ির মালিক ছিলেন না। তিনি বৃষ্টিকে পরে আসতে বলেন। কিন্তু বৃষ্টি সুমাইয়াদের ঘরের বাইরের বারান্দায় বসে অপেক্ষা করছিলেন। সুমাইয়ার সঙ্গে তিনি যে গল্প করছিলেন, সে কথা শুনতে পাচ্ছিলেন মুনিয়া। একপর্যায়ে মূল ফটক বন্ধের শব্দ পান। বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেন সুমাইয়া নেই।
পিএনএস/জে এ /মোহন
‘আব্বু-আম্মু আসছ? আমাকে তোমরা খুঁজেছিলে?’
27-04-2017 08:24PM