সেই রাতে আরও তিন তরুণীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত কাটিয়েছিল সাফাত

  18-05-2017 10:09AM

পিএনএস ডেস্ক:রাজধানীর বনানীতে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় গ্রেপ্তার আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ সেলিমের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার গাড়ি চালক বিল্লাল, গানম্যান রহমত ও নির্যাতিতা দুই তরুণীর বন্ধু সাদমান সাকিফকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এরই মধ্যে ডিবি কার্যালয়ে রিমান্ডে বিভিন্ন রকম তথ্য দিয়েছে সাফাত। উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশকে সে জানিয়েছে, তার অগণিত বান্ধবীর কথা। জিজ্ঞাসাবাদে তার মধ্যে ঘনিষ্ঠ অন্তত দুই ডজন বান্ধবীর তথ্য দিয়েছে সাফাত আহমেদ। যাদের সঙ্গে সময়ে-অসময়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে মিলিত হতো সাফাত ও বুধবার রাতে মুন্সীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার হওয়ার তার বন্ধু নাঈম আশরাফ।

আলোচিত দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের সেই রাতে আরো তিন তরুণীর সঙ্গে ফুর্তি করেছিল সাফাত আহমেদ। এর আগে শরীরে শক্তি বাড়াতে ইয়াবা সেবন করে নেয়। শুধু তাই নয়, এমন আরো দুই ডজন তরুণীর সঙ্গে সময়ে-অসময়ে মিলিত হতো।

মাত্র ব্যতিক্রম ঘটেছে আলোচিত দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ক্ষেত্রে। তাদের জন্মদিনের পার্টির কথা বলে নিয়ে গিয়েছিল সাফাত। আর ভয়ভীতি দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে লুটে নেয় ইজ্জত। এতেই ঘটে বিপত্তি।

জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, বান্ধবীদের সবাই মডেল, উপস্থাপক, অভিনেত্রী, শিল্পী কিংবা সুন্দরী তরুণী। তবে শুধু সাফাত নিজে নয়, তার বেপরোয়া জীবনযাপন সম্পর্কে গাড়িচালক বিল্লালও চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে বলে জানা গেছে। সেই সঙ্গে সাফাতের বডিগার্ড রহমতের কাছ থেকে ওই রাতের ঘটনার সত্যতা পেয়েছে গোয়েন্দারা।

এর আগে, সোমবার রাতে সাফাত আহমেদ ও তার গাড়িচালক বিল্লালকে কিছু সময়ের জন্য মুখোমুখি করেছিলেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। তখন সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল জানান, সেই রাতে সাফাত আহমেদ নিজেই বিল্লালকে উপরের রুমে ডেকে নেন। এসময় সাফাত আহমেদ তাকে (বিল্লাল) বাথরুম সংলগ্ন ড্রেসিং রুমে গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চিত্র ভিডিও করতে বলেন।

বিল্লাল আরও জানায়, সাফাত এবং তার বন্ধু পলাতক নাঈম আশরাফ যখন দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেন, তখন পুরো দৃশ্য সে (বিল্লাল) মোবাইল ফোনে ধারণ করেছিল। পরে এ ঘটনায় মামলা দায়ের ও মিডিয়ায় একের পর এক খবর ছাপা হতে থাকলে সাফাতের নির্দেশেই তিনি (বিল্লাল) ওই ভিডিও ডিলিট করে দেয়।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ঘটনার রাতে অস্ত্র নিয়েই হোটেলটিতে (দ্য রেইনট্রি) প্রবেশ করেছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন সাফাতের বডিগার্ড রহমত আলী। পুলিশ ইতিমধ্যেই গাড়িচালক বিল্লালের ওই মোবাইল ফোনটি জব্দ করেছে। একই সঙ্গে ডিলেট করা ওই ভিডিও পুনরুদ্ধারের জন্য তদন্ত সংশ্লিষ্টরা সিআইডির ফরেনসিক ল্যাবে পাঠিয়েছে।

ধর্ষণের আগে ভিডিও ধারণের কথা স্বীকার করে গত রবিবার সাফাত আহমেদ গোয়েন্দাদের জানিয়েছিল, অভিযোগকারী দুই ছাত্রীর সঙ্গে আসা শাহরিয়ার নামে এক চিকিৎসককে মারধরের দৃশ্য তারা ভিডিও করেছে। আর ধর্ষণ করার আগে গাড়ি চালক বিল্লাল হোসেন ওই দুই ছাত্রীর সঙ্গে তাদের ওঠাবসার দৃশ্য ভিডিও করেছেন। তবে এর বাইরে ধর্ষণ করার সময় সেই দৃশ্য গাড়িচালক ভিডিও করেছে কি না তার জানা নেই।

যদিও রেইনট্রি হোলেটের ৭০১ নম্বর কক্ষে মোবাইল ফোনে ভিডিও করার দৃশ্য এখনও পুলিশ উদ্ধার করতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ মার্চ বনানীর রেইনট্রি হোটেলে সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে দাওয়াত দিয়ে দুই তরুণীকে ধর্ষণ করার অভিযোগ ওঠে। ঘটনার ৪০ দিন পর গত ৬ মে এক তরুণী বনানী থানায় একটি মামলা করেন।

বনানীর ‘দ্যা রেইন ট্রি’ হোটেলের জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ করে ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ৬ মে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা দায়ের করা হয়। এতে পাঁচ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ২৮ মার্চ রাত ৯টার দিকে রেইনট্রি হোটেলে আহমেদ শাফাতের জন্মদিনের নিমন্ত্রণে যান ওই দুই তরুণী। মধ্যরাতে জন্মদিনের অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর শাফাত ও নাঈম হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে রেখে তাদের ধর্ষণ করে। সাদমান সাকিফ, বিল্লাল ও আজাদ ধর্ষণে সহায়তা করেছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন