পিএনএস ডেস্ক : আমার লাইফ ধ্বংস করেছে বিয়ে করে, আর ওদের লাইফ ধ্বংস করেছে বিয়ে না করে-ঠিক এভাবেই বলেছেন বনানী ধর্ষণকাণ্ডের অন্যতম আসামি সাফাতের সাবেক স্ত্রী মডেল কন্যা ও টেলিভিশনের উপস্থাপিকা ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা।
তিনি অকপটে স্বীকার করেছেন সাফাতের অবাধ ও বিকৃত যৌনাচারের জন্য সঙ্গী খোজা ও সার্বিক ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে থাকতেন নাঈম আশরাফ।
টেলিভিশন উপস্থাপিকা ও মডেল কন্যা ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা বলেন, ইয়াবা আসক্ত সাফাত ও তার বন্ধুরা বনানীর ফিউশন হান্ট হোটেলে নিয়মিত নেশার আসর বসাতেন। ওই হোটেলের ‘যে কোনো ওয়েটারকে জিজ্ঞাসা করলেই’ তাদের কর্মকাণ্ডের বিবরণ পাওয়া যাবে।
পিয়াসা জানান, বেশ কিছুদিন প্রেমের পর ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি সাফাতের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। বিয়ের পরই পরিচিত এক বড় ভাই বলেছিল, সাফাত ইয়াবা খায়। ওকে বিয়ে করা ঠিক হয়নি। বিয়ে হয়ে গেছে দেখে ওই সময় আর কথা বলিনি।
পিয়াসা জানান, গত ৮ মার্চ হঠাৎ বিয়ে বিচ্ছেদের চিঠি পাঠিয়ে ভারতে চলে যান সাফত। এরপর এক মাস পার হওয়ার আগেই তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওরা সবাইকে বলেছিল জন্মদিন করতে বন্ধুরা মিলে সিলেট যাবে। একটা ক্রাইম করবে বলেই সবাইকে মিথ্যা বলেছিল।
পিয়াসা বলেন, এ মামলার আরেক আসামি নাইম আশরাফ ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের কাজ করতেন। তিনিও ইয়াবায় আসক্ত। আর সাদমান সাকিফ বড় ভাই হিসেবে দেখত সাফাতকে। সে ইয়াবা খেত না। যে দুই তরুণী ধর্ষণের মামলা করেছেন, তাদের সঙ্গেও পরিচয় ছিল পিয়াসার। ধর্ষণের ঘটনার পর তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
পিয়াসা বলেন, সাফাত আমাদের ডিভোর্সের কথা কাউকে বলত না। আমার বিরুদ্ধে অনেক মেয়েকে খারাপ কথা বলে তাদের মনোযোগ কাড়তে চাইত। ধর্ষণের পর ভিকটিমরা আমাকে বলেছে, ওই রাতে বারবার ইয়াবা খেয়ে ওরা ধর্ষণ করেছে… গালাগাল করেছে… মারধর করেছে… ভিডিও করেছে। মারধরের একপর্যায়ে ধর্ষকদের একজন বলে উঠে আয় গ্রুপ সেক্স করি। ওরা দিবে না। সবাই মিলে একজনকে ধরলে দিবে না মানে। ভিকটিমরা আমাদের ডিভোর্সের কথা জানত না।
তিনি জানান, গত ৭ মার্চ গুলশানের আমরি রেস্তোরাঁয় এক অনুষ্ঠানে ওই দুই তরুণীর সঙ্গে সাফাতের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন সাদমান সাকিফ। ওই অনুষ্ঠানে তিনিও ছিলেন। পরদিন কিছু না বলেই সাফাত ‘ডিভোর্সের কাগজ’ পাঠিয়ে চলে যান বলে পিয়াসার ভাষ্য।
সাফাত ডিভোর্সের চিঠি দিয়ে ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানে এক মডেলের সঙ্গে মদ খাচ্ছে-এরকম একটা ভিডিও প্রকাশ পায়। তখনই আমি সিদ্ধান্ত নেই, ওর সঙ্গে থাকা সম্ভব না।
এরপরও চেষ্টা করেছি, ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। ওর একটা গাড়ি আমাদের বসুন্ধরার বাসায় ছিল। সাফাতের বাবা পুলিশ দিয়ে ওই গাড়ি নিয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর অভিযোগ অনুযায়ী, রেইনট্রি হোটেলেই ঘটে ধর্ষণের ঘটনা। অভিযোগ অনুযায়ী, এই রেইনট্রি হোটেলেই ঘটে ধর্ষণের ঘটনা। পিয়াসা বলেন, আগেও একবার বিয়ে করেছিলেন সাফাত। আগের সেই স্ত্রী এখন যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। সব কিছু ভুলে তাকে বিয়ে করেছিলাম। অথচ বিয়ের পর আমাকে সব কিছু থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
তিনি জানান, তাদের বিয়ের পর সাফাতের বাবা আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদ বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। বিয়ের পর আমাকে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়েছিল ওর বাবা। তখন সাফাত ভাটারা থানায় জিডি করে।
ধর্ষণ মামলার এজাহারে পিয়াসাকে বাদীর খালাতো বোন লেখা হলেও তাদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেন এই টেলিভিশন উপস্থাপক। তার অভিযোগ, এর পেছনে সাফাতের বাবার হাত রয়েছে।
ভিকটিমরা আমার সম্পর্কে কিছুই বলেনি। এখন সাফাতের বিরুদ্ধে যখন ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে, বনানী থানার ওসিকে দিয়ে ওর বাবা কৌশলে আমার নামটা বসিয়ে দিয়েছে। যখন আমার পাওনা (বিচ্ছেদ সংক্রান্ত) নিয়ে কথা বলার কথা, তখন আমার অন্যের অভিযোগ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে হচ্ছে।
পিয়াসা বলেন, সাফাতের বাবা মেয়েগুলোকে (ভিকটিম) খারাপ বলার চেষ্টা করছে। ওরা খারাপ হলে তো টাকা নিয়ে চুপ থাকত। ঘটনার পর ওদের এক মাস থ্রেট করা হয়েছে, যেন তারা ওদের সঙ্গে আবারও হোটেলে যায়, তা না হলে ভিডিও ছেড়ে দেবে। সাফাত আমার লাইফ ধ্বংস করেছে বিয়ে করে। আর ওদের দুইজনের লাইফ ধ্বংস করেছে বিয়ে না করে।
জানা গেছে, সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের দাওয়াত পেয়ে গুলশানের ‘দি রেইনট্রি’ হোটেলে গিয়ে ঢাকার দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগে গত ৬ মে মামলা হয় ঢাকার বনানী থানায়।
এজাহারে সাফাত ছাড়াও এক ঠিকাদারের ছেলে নাঈম আশরাফ (৩০), পিকাসো রেস্তরাঁর অন্যতম মালিক মোহাম্মদ হোসেন জনির ছেলে সাদমান সাকিফ (২৪) এবং সাফাতের দেহরক্ষী ও গাড়িচালককে আসামি করা হয়। দুই ছাত্রীর অভিযোগ, ওই হোটেলে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে রাতভর আটকে রেখে সাফাত ও নাঈম তাদের ধর্ষণ করেন। অন্য তিনজন তাতে সহায়তা করেন।
পিএনএস/জে এ /মোহন
‘আয় সবাই মিলে গ্রুপ সেক্স করি’
18-05-2017 09:20PM