ফেরিওয়ালার ছেলে যেভাবে হয়ে উঠে আজকের ভয়ঙ্কর নাঈম আশরাফ!

  18-05-2017 09:49PM

পিএনএস ডেস্ক : ১৫ মে সোমবার রাতে মামলার অপর আসামি সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ করা হয়। বনানীর রেইনট্রি হোটেলে দুই তরুণী ধর্ষণ মামলার দ্বিতীয় আসামি নাঈম আশরাফকে মুন্সিগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে পুলিশের মহাপরিদর্শক একেএম শহীদুল হক সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।


বুধবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স ও ডিবি পুলিশের সমন্বিত একটি বিশেষ দল গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকা থেকে নাঈমকে গ্রেফতার করে ।


এর আগে গত ১১ মে বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় সিলেটের মদিনামার্কেট এলাকার রশীদ ভিলা নামের বাড়ি থেকে মামলার প্রধান আসামি সাফাত আহামেদ ও তৃতীয় আসামি সাদমান সাকিফকে গ্রেফতার করে পুলিশ সদর দফতরের গোয়েন্দা দল এলআইসি।


১৫ মে সোমবার রাতে মামলার অপর আসামি সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ করা হয়।


গত ২৮ মার্চ দ্য রেইন ট্রি হোটেলে জন্মদিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ করে ওই দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়। ৬ মে শনিবার রাতে ভুক্তভোগীদের একজন বনানী থানায় সাফাতসহ ওই পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে।


যেভাবে ফেরিওয়ালার ছেলে থেকে নাঈম আশরাফ
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাঈম আশরাফের প্রকৃত নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম। সে সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল গ্রামের ফেরিওয়ালা আমজাদ হোসেনের একমাত্র ছেলে। প্রতারণা করতে সে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাজিপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের ছেলে নাঈম আশরাফের নাম ব্যবহার করতো।

হালিমের শিক্ষা জীবনের হাতেখড়ি কাজিপুর উপজেলার গান্ধাইল আহম্মদ আলী উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই স্কুলে অধ্যয়নরত অবস্থায় দশম শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অপরাধে তাকে জুতাপেটা খেতে হয় প্রধান শিক্ষকের হাতে।

২০০৪ সালে এসএসসি পাস করে ভর্তি হয় বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে। সেখানে নিজেকে সিরাজগঞ্জ শহরের একজন ধনাঢ্য ঠিকাদারের ছেলে পরিচয় দিয়ে এক ধনীর দুলালিকে বিয়ে করে। কিছুদিনের মধ্যে আসল পরিচয় ফাঁস হলে শ্বশুর বাড়ির লোকেরা তাদের মেয়েকে ছাড়িয়ে নিয়ে উত্তমমাধ্যম দিয়ে তাড়িয়ে দেন হালিমকে। তার বিরুদ্ধে এমন প্রতারণার অভিযোগ আরও রয়েছে। পরে বিষয়টি পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি অবগত হলে সেখান থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

এরপর বগুড়া থেকে চলে যায় ঢাকায়। তেজগাঁও পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটে ভর্তি হয় এবং পাসও করে। ডিপ্লোমা পাস করে ঢাকার একটি বেসরকারি টেলিভিশনে ইন্টার্ন করে সেখানেই চাকরি নেয়। চেক জালিয়াতির কারণে তাকে সে চাকরিটি হারাতে হয়। পরে আরেকটি টেলিভিশনে চাকরি নিয়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটায় হালিম। শাস্তিও একই।

এছাড়া নিঃসন্তান হালিম বাবার নাম বদলিয়ে বিয়ে করে তিনটি। প্রতারণা করে বিয়ে করার বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে আগের দুই স্ত্রীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। তৃতীয় স্ত্রীসহ বাবা-মাকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরের কালশীতে ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো। সম্প্রতি প্রতারক হালিম নিজেকে কাজিপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি পরিচয় দিয়ে গান্ধাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জুয়েল রানার সৌজন্যে একজন জাতীয় নেতার ছবির পাশে নিজের নাম হাসান মোহাম্মদ হালিম ও ছবি দিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যানার, বিলবোর্ড টানানো হয়। তবে প্রতরাণার বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সেগুলো খুলে ফেলা হয়।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন