জিম্মি করে কিশোরী ধর্ষণ : টার্গেট ছিল ফাঁদে ফেলে অর্থ আদায়

  19-05-2017 03:38PM

পিএনএস ডেস্ক : প্রেমিক-প্রেমিকা টার্গেট করে ঘুরে বেড়ায় ওরা। প্রেমিক যুগল দেখলেই ভয়ভীতি দেখিয়ে দাবি করে মোটা অঙ্কের টাকা। টাকা দিতে রাজি না হলে প্রেমিককে মারধর করে প্রেমিকাকে ধর্ষণ করে চক্রের সদস্যরা। আবার চাহিদা মতো টাকা দেয়ার পরও এ চক্রের গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে একাধিক নারীকে।

সম্প্রতি রাজধানীর শ্যামপুর থানার জুরাইন এলাকায় প্রেমিককে জিম্মি করে প্রেমিকাকে ধর্ষণের ঘটনার পর ওই চক্রের সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেছে চক্রের হোতা দ্বীন ইসলাম ওরফে টুলু। তবে টুলুর দুই সহযোগীকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।

র‌্যাব-১০ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, মঙ্গলবার দুপুরে ধর্ষণের শিকার কিশোরীর বাবা র‌্যাবে এসে অভিযোগ করেন, তার মেয়েকে কয়েকজন মিলে ধর্ষণ করেছে। ধর্ষকরা সবাই একই এলাকায় থাকে। পরে র‌্যাবের পক্ষ থেকে প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনার সত্যতা মিলেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেফতার করা হয় অভিযুক্ত দ্বীন ইসলাম ওরফে টুলু, হুমায়ন ওরফে হুমা ও শামীম তালুকদারকে। তারা এখন দু’দিনের পুলিশ রিমান্ডে আছে। তবে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে টুলুর দুই সহযোগী বেল্লাল ও রমজান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, অভিযুক্ত ধর্ষক চক্রের সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারা এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। তারা এর আগেও এ ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল। কিন্তু ধর্ষণের শিকার অনেকেই লোকলজ্জা ও ভয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি।

ওই এলাকার আরেক ভুক্তভোগী গার্মেন্ট কর্মী জানান, কয়েক মাস আগে তার সঙ্গেও একই ধরনের ঘটনা ঘটায় টুলু চক্র। কিন্তু লজ্জায় তিনি কাউকে বিষয়টি জানাননি।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ১৫ মে রাত ৮টার দিকে জুরাইন সাহাদাত হোসেন রোড দিয়ে ১৫ বছরের এক কিশোরী তার প্রেমিককে নিয়ে চটপটি খেতে যাচ্ছিলেন। ধোলাইপাড় সাবান ফ্যাক্টরির গলিতে পৌঁছলে শামীম তালুকদার ওরফে পাঠা, হুমায়ুন ওরফে হুমা, টুলু, রমজান ও বেল্লাল নামে পাঁচজন তাদের পথরোধ করে।

প্রেমিককে প্রচণ্ড মারধর করে কিশোরীকে সরু গলির ভেতরে একটি ভাঙ্গারীর দোকানে নিয়ে যায় ওই পাঁচ যুবক। ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে থানায় মামলা হলে পুলিশ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য কিশোরীকে বুধবার বিকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। তিনি এখন ঢামেক ওসিসিতে ভর্তি আছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কিশোরীর প্রেমিক বলেন, ওই রাতের ঘটনায় জড়িত সবাইকে তিনি চেনেন। ছেলেগুলো স্থানীয়। দু’জনকে এক সঙ্গে দেখে প্রথমে তারা আমাদের আটকে ফেলে। এরপর বিয়ের ভয়ভীতি দেখিয়ে পাঁচ হাজার টাকা দাবি করে। টাকা দিতে পারব না বলতেই তারা আমাকে মারধর শুরু করে তাকে (প্রেমিকা) টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। প্রেমিক বলেন, পরিচিত কয়েকজনকে নিয়ে তিনি প্রেমিকাকে উদ্ধার করতে যান। এরই মধ্যে নরপশুরা তাকে ধর্ষণ করে।

ঘটনার পর কিশোরীর বাবা-মায়ের কাছে গেলেন না কেন, নাকি ধর্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ আছে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেমিক বলেন, না, আমি এ এলাকায় ফার্নিচারের কাজ করি। ওরা সবাই ইয়াবা বিক্রি করে। ওদের সবাইকে আমি চিনি। ওদের সঙ্গে কোনো দিন কথা হয়নি।

ধর্ষণের শিকার কিশোরীর রিকশাচালক বাবা মেয়ের নির্যাতনের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন। জুরাইনের বাসিন্দা সৈকত আহমেদ বলেন, ধর্ষকরা এলাকায় ইয়াবা ব্যবসা করে। তারা মাদক সেবনের সঙ্গেও জড়িত। তাদের সঙ্গে স্থানীয় থানা পুলিশের যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ইদ্রিস আলী জানান, গ্রেফতার তিনজনকে সিএমএম আদালতে হাজির করলে বিচারক তাদের দু’দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। টুলুর দুই সহযোগীর নাম পেলেও ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা চলছে।-যুগান্তর

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন