চাঁদপুরে মাদক ব্যবসা ও সেবীরা বেপরোয়া!

  25-05-2017 06:30PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : মাদক যুবসমাজকে গ্রাস করছে। উঠতি বয়সের যুবকরা মাদকের ভয়াল থাবায় নিজেদের ডুবিয়ে দিয়েছে। মাদকের ভয়বহ নেশায় আক্রান্তরা সমাজে নানা রকম অনাচার সৃষ্টি করছে। যুবসমাজকে এ থেকে রক্ষায় পরিবারসহ সমাজের দায় রয়েছে; কিন্তু সেখানেও কাঙ্ক্ষিত ফল মিলছে না।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মাদক প্রতিরোধে সমাজের সর্বস্তরের সচেতন মহলকে একযোগে কাজ করতে হবে। মানুষকে মাদকের কুফল সম্পর্কে জানাতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সম্প্রতি প্রথম আলো ট্রাস্ট মাদকবিরোধী আন্দোলন আয়োজিত মাদকবিরোধী সেরা প্রতিবেদন পুরস্কার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর মাদকের কারণে যে কত বাবার হাহাকার শুনি, কত মায়ের কান্না শুনি; তা বলে শেষ করা যাবে না। মাদক মানুষের মেধা ও মননকে নষ্ট কর দেয়। দেশের বাইরে থেকে আমাদের দেশে মাদক, বিশেষ করে ইয়াবা ও ফেনসিডিল ঢুকছে। আর মাদকের বাহক হিসেবে কাজ করছে রোহিঙ্গারা। মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িতদের আমরা সর্বোচ্চ শাস্তি দিচ্ছি; কিন্তু সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হলে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।’

প্রথম আলো ট্রাস্ট মাদকবিরোধী আন্দোলনের উপদেষ্টা বিশিষ্ট মনোচিকিৎসক মোহিত কামাল বলেন, মাদক মানুষকে দানবে পরিণত করে। প্রথম আলো ট্রাস্ট মাদকের ভয়াবহতা রোধে বিভিন্নভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এসব কার্যক্রমে প্রথম আলো বন্ধুসভার সদস্যরাও অংশ নেন। প্রথম আলো এ কাজটি শুরু থেকেই করে আসছে। মাদকবিরোধী তাদের কার্যক্রম অবদান স্মরণযোগ্য।

মাদক আসছে দেশের বাইরে থেকে। এসব আসছে সীমান্ত গলিয়ে। ভারত সীমান্ত ও মীয়ানমার থেকে সরাসরি মাদক আসছে আমাদের দেশে। এগুলো যাদের দেখার, তাদের যোগসাজশেই মাদক দেশে ঢুকছে বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৩৫টি স্থানে নাকি ফেনসিডিলের কারখানা রয়েছে, যেগুলো থেকে অবাধে মাদক দেশে ঢুকছে।

আশ্চার্যজনক হলেও সত্য, গরু আনার সময় প্রায় প্রতিদিন সীমান্তে অসংখ্য বাংলাদেশী প্রাণ হারান বিএসএফের গুলিতে। কিন্তু ফেনসিডিল বহনের অপরাধে আজ পর্যন্ত কাউকে গুলিতে মরতে শোনা যায়নি। এমনকি গুলির মুখোমুখি পড়তেও কেউ শোনেনি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের প্রায় পুরো এলাকা ফেনসিডিলের এমন নিরাপদ রুট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।

একজন সাংবাদিক জানান, চাঁদপুর থেকে অটোরিকশাযোগে মতলবে যাওয়ার সময় দেখেন প্রকাশ্যে একজন মাদক খাচ্ছে। সাংবাদিক বাধা দিতে গেলে ড্রাইভার তাকে আর এগোতে দেননি। পরে বুঝিয়ে বলেন, এরা খুব খারাপ লোক। এদের বাধা দিলে বিপদে পড়তে হবে। পরে সাংবাদিক ব্যাপারটি চেপে গেলেও ঢাকায় এসে ক্ষোভ ছাড়তে মোটেও ভুলেননি।


সীমান্তের কাছাকাছি বাংলাদেশী গ্রামগুলো একেকটি মাদকের হাটে পরিণত। যে মাদকের রুট চলে গেছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের ছাত্ররা এর বড় পাইকার। চাঁদপুরের বেশ কয়েকটি স্কুলছাত্র রয়েছে, যাদের অ্যাকাউন্টে নাকি লাখ লাখ টাকা! কারো কারো অ্যাকাউন্টে নাকি অর্ধকোটি টাকাও রয়েছে। এর পুরো টাকাই মাদকের আয় থেকে আসা।

চাঁদপুরজুড়ে মাদক নিয়ন্ত্রণ করে জনপ্রতিনিধি থেকে স্কুল-কলেজের ছাত্ররা, তারাও আবার নেতাদের সন্তান। স্থানীয় প্রশাসন সব জানার পরও উদাসীন। কচুয়ার একজন ছাড়া আর প্রায় সব জনপ্রতিনিধি ইয়াবার এজেন্ট। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তির কাছের লোক হিসেবে একজন একচাটিয়া ব্যবসা করছে। কচুয়ার জনপ্রতিনিধির বড় একটা অংশ, কিছু সাংবাদিক ও স্কুল-কলেজের অনেক ছাত্র সর্বনাশা মাদকের নেশায় বুঁদ।

চাঁদপুরের এক রাজনীতিকের ভাষায়, অদূর ভবিষ্যতে নাকি চাঁদপুরে আর নেতাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য খরচের দরকার পড়বে না। মাদকের টাকায়ই তারা নিজেদের সব খরচ চালিয়ে সংসার চালাতেও সক্ষম হবে। চাঁদপুরের প্রশাসন কতটা সফল, ওই নেতার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে সেটা ফুটে উঠেছে বৈকি। আমরা আশা করব, চাঁদপুরকে মাদকমুক্তকরণে এবং চাঁদপুরের সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি, যুবসমাজ তথা শিক্ষার্থীদের মাদকের ব্যবসা ও এর গ্রাস থেকে রক্ষায় সাঁড়াশি অভিযান সময়ের দাবি।

লেখক : সাধারণ সম্পাদক- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন
ই-মেইল : [email protected]

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন