ধর্ষণের রাতে মেয়েদের সঙ্গে সুইমিংপুলে যা করেছিলো সাফাত-নাঈম

  26-05-2017 11:21AM

পিএনএস ডেস্ক: আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদের জন্মদিনের পার্টির দাওয়াত দিয়ে রেইনট্রি হোটেলে আনা হয়েছিলো দুই তরুণীকে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের আগে সুইমিংপুলে তাদের সঙ্গে গোসল করেছিলো সাফাত ও নাঈম। সে রাতে আরো তিন তরুণীর সঙ্গে ফুর্তি করেছিল সাফাত আহমেদ। এর আগে শরীরে শক্তি বাড়াতে ইয়াবা সেবন করে নেয়। শুধু তাই নয়, এমন আরো দুই ডজন তরুণীর সঙ্গে সময়ে-অসময়ে মিলিত হতো। ব্যতিক্রম ঘটেছে আলোচিত দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ক্ষেত্রে। তাদের জন্মদিনের পার্টির কথা বলে নিয়ে গিয়েছিল সাফাত। আর ভয়ভীতি দেখিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে লুটে নেয় ইজ্জত। এতেই ঘটে বিপত্তি। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছে ধর্ষণ মামলার দ্বিতীয় আসামি নাঈম আশরাফ। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্যব্রত শিকদারের খাস খামরায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয় সে।

সাতদিনের রিমান্ড শেষে সকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। এসময় নাঈম আশরাফের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করার জন্য আদালতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক ইসমত আরা এমি। জবানবন্দি শেষে আদালতের নির্দেশে নাঈমকে কারাগারে পাঠানো হয়। জবানবন্দিতে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছে নাঈম আশরাফ। সাফাতের জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে দুই তরুণীকে রেইনট্রি হোটেলে আনার বিষয়টি স্বীকার করে জবানবন্দিতে নাঈম আশরাফ জানিয়েছে, হোটেলে আসার পর দুই তরুণীর সঙ্গে গল্প করেছে সাফাত ও নাঈম। সুইমিং পুলে গোসল করেছে তারা। পরবর্তীতে তারা সবাই হোটেল রুমে চলে যায়। সারারাত তারা হোটেল রুমেই কাটিয়েছে। এ বিষয়ে তেজগাঁও ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আসমা মিলি বলেন, ধর্ষণের অপরাধ স্বীকার করেই জবানবন্দি দিয়েছে নাঈম আশরাফ।

১৭ই মে নাঈমকে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার পরদিন ১৮ই মে আদালত তার সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদে নাঈম আশরাফ স্বীকার করেছে দুই তরুণী তাদের পূর্ব পরিচিত। তাদেরকে জন্মদিনের দাওয়াত দিয়ে হোটেলে ডেকে আনা হয়েছিলো। পরিকল্পিতভাবে তরুণীদের ধর্ষণ করে সাফাত ও নাঈম। এক পর্যায়ে তরুণীরা কান্নাকাটি করে। ঘটনার পর কোনো অভিযোগ না করার জন্য তরুণীদের বুঝানো হয়েছিলো। ওই দিন জন্মদিনের দাওয়াতে আরো কয়েক তরুণী এসেছিলো বলেও জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে নাঈম আশরাফ। এছাড়াও তাদের নানা অপকর্মের কথা স্বীকার করেছে সে।

এর আগে সে পুলিশকে জানিয়েছে, তার অগণিত বান্ধবীর কথা। জিজ্ঞাসাবাদে তার মধ্যে ঘনিষ্ঠ অন্তত দুই ডজন বান্ধবীর তথ্য দিয়েছে সাফাত আহমেদ। যাদের সঙ্গে বনানীর কয়েক হোটেলে প্রায়ই দিনে-রাতে সময় কাটিয়েছে সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ। বান্ধবীদের প্রায় সবাই মডেল, উপস্থাপক, অভিনেত্রী, শিল্পী হিসেবে পরিচিত। প্রথম শ্রেণির কয়েক মডেল ও অভিনেত্রীর নামও রয়েছে এই তালিকায়। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে সাফাত আহমেদের বেপরোয়া জীবনযাপন সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে গাড়িচালক বিল্লাল। সেই সঙ্গে গানম্যান রহমতের কাছ থেকে ওই রাতের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।

সাফাত আহমেদ জানিয়েছেন, বন্ধুদের উৎসাহে মাঝে মধ্যে পার্টি দেয়া হতো। এসব পার্টিতে অনেকেই অংশ নিতো। কোনো কোনো অভিনেত্রী, মডেল তার সঙ্গে দেশের বাইরে যেতে স্বেচ্ছায় প্রস্তাব করতেন। দুইজন আইটেম গার্ল ও একজন প্রতিষ্ঠিত মডেল ও দুইজন অভিনেত্রীর সঙ্গে ভারত ও মালয়েশিয়ায় অন্তরঙ্গ সময় কাটিয়েছিলেন সাফাত আহমেদ। সর্বশেষ মার্চে কলকাতায় একজনের সঙ্গে ছিলেন কয়েকদিন।

উল্লেখ্য, বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণের শিকার হওয়ার অভিযোগ এনে ৬ই মে বনানী থানায় মামলা করেন নির্যাতিত এক তরুণী। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৮শে মার্চ পূর্বপরিচিত সাফাত আহমেদ তার জন্মদিনের দাওয়াত দেয় এই দুই তরুণীকে। এরপর বনানীর ‘কে’ ব্লকের ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বরে রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। হোটেলের একটি কক্ষে আটকে রেখে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মামলার বাদীকে সাফাত ও তার বান্ধবীকে নাঈম ধর্ষণ করে। এ সময় সাফাতের গাড়িচালক বিল্লালকে দিয়ে ভিডিও করানো হয়েছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়। মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, র‌্যাগমান গ্রুপের মালিকের ছেলে সাদমান সাকিফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও গানম্যান রহমতকে আসামি করা হয়। মামলার পর পৃথক অভিযানে সকল আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ মামলায় রহমত ছাড়া চার আসামিই ১৬৪ ধারায় অপরাধ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। নাঈম আশরাফ সিরাজগঞ্জের ফেরিওয়ালা আমজাদ হোসেনের ছেলে। তার বিরুদ্ধে বনানীর ধর্ষণ ঘটনায় জড়িত থাকার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতারণার অভিযোগও রয়েছে। তার প্রকৃত নাম হাসান মো. আব্দুল হালিম।

সুত্র: পূর্বপশ্চিম নিউজ

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন