এসিড খাইয়ে ও পেট্রোল ঢেলে স্বামীকে পুড়িয়ে হত্যা!

  18-08-2017 03:42PM

পিএনএস ডেস্ক: ফরিদপুরের সদর উপজেলার মাচ্চর ইউনিয়নের ধুলদি রাজাপুর গ্রামে স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে বাদশা শেখ (৩৫) নামের এক ব্যক্তিকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে।

বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাদশা মারা যায়।

এ ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।বাদশার হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে স্থানীয়রা। শুক্রবার স্থানীয় এলাকাবাসী দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করে হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানায়।

লোমহর্ষক এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় চারজনকে আসামি করে একটি মামলা হলেও কাউকেও আটক করতে পারেনি পুলিশ।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রভাবশালী একটি মহল ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে তৎপরতা চালাচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসী, পুলিশের সাথে কথা বলে জানা গেছে, স্ত্রী কাকলী বেগমের পরকীয়ায় বাধা প্রদান নিয়ে স্থানীয় এনজিও কর্মী মো. বাদশার সাথে বিরোধ হয় মৃত নিয়াজউদ্দিন শেখের ছেলে অটোচালক বাদশা শেখের।

তিন মাস আগে পরকীয়ার বিষয় নিয়ে এনজিও কর্মী মো. বাদশাকে নিয়ে গ্রাম্য শালিস বৈঠকও হয়। স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ কাকলী বেগমের বাবার বাড়িতে সে শালিস বৈঠক হয়। সেখানে বাদশা শেখের স্ত্রী কাকলী বেগমের সাথে কোনো সর্ম্পক রাখবে না এ মর্মে মুচলেকা দেয় এনজিও কর্মী মো. বাদশা।

কিন্তু কয়েকদিন আগে ফের বাদশা শেখের স্ত্রীর সাথে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়ে মো. বাদশা। এ নিয়ে বাদশা শেখকে দেখে নেবার হুমকি দেয়া হয়। গত বুধবার রাতে বাদশা শেখ বাড়িতে একা ছিলেন। এসময় কয়েকজন দুবৃর্ত্ত ঘরের সিঁদ কেটে ভেতরে প্রবেশ করে জোরপূর্বক এসিড খাওয়ায় বাদশা শেখকে। পরে তার গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। দুবৃর্ত্তরা বাদশা শেখের গায়ে আগুন দিয়ে ঘরের বাইরে থেকে শিকল আটকিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বাদশা শেখের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। দ্রুত তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়।

আশংকাজনক অবস্থায় পরে বাদশা শেখকে ঢাকায় পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে মারা যায় বাদশা শেখ। বাদশা শেখকে নারকীয়ভাবে এসিড খাইয়ে এবং পুড়িয়ে মারার ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নিরীহ বাদশা শেখকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয়দের মাঝে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে স্থানীয়রা।

নিহত বাদশা শেখের মামা রাজ্জাক মোল্যা জানান, রাত তিনটার দিকে বাদশার চিৎকারে তাদের ঘুম ভাঙে। এসময় তিনি ঘর থেকে বাইরে বের হতে গিয়ে দেখেন ঘরের বাইরে থেকে শিকল আটকানো। পরে দরজা ভেঙে তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা বাইরে বেরিয়ে দেখেন বাদশার সারা গায়ে আগুন। পরে আগুন নেভানো হয়। দ্রুত তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা আর হয়নি।

তিনি আরও দাবি করেন, স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে বাদশাকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। ঘটনার রাতে বাদশার স্ত্রী তার বাবার অসুস্থতার কারণে হাসপাতালে ছিল। আর ছেলে-মেয়ে ছিল নানার বাড়িতে। এসময় বাদশা ঘরে একাই ছিল। মারা যাবার আগে হাসপাতালে বাদশা কীভাবে তাকে এসিড খাওয়ানো হয়েছে এবং কারা আগুন দিয়েছে তা আমাকে বলেছে। বিষয়টি আমি পুলিশকে বলেছি।

মাচ্চর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের মেম্বার মো. কাউসার বলেন, বাদশাকে যেভাবে পুড়িয়ে মারা হয়েছে তা লোমহর্ষক। স্ত্রীর পরকীয়ার কারণেই বাদশাকে জীবন দিতে হয়েছে। বাদশার স্ত্রী কাকলী বেগম লেবাননে থাকতো। গত চার মাস আগে সে বিদেশ থেকে দেশে আসে। দেশে আসার পরপরই পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। গত তিনমাস আগে বাদশার স্ত্রীকে নিয়ে আমরা শালিস বৈঠক করেছি। সেসময় স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিল। এ নারকীয় হত্যার সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার চাই আমি। স্থানীয় অনেকেই বলেছেন, বাদশা শেখ একজন নিরিহ প্রকৃতির ছেলে ছিল। ছোটবেলা থেকেই বাবাকে হারিয়ে সে মামা বাড়ীতে বড় হয়। গত এক বছর আগে তার মা মারা যায়। স্ত্রী, দু’ছেলে-মেয়ে লিমা (১২) ও লিয়ন (৫) কে নিয়ে বসবাস করতো।

এ ঘটনায় কোতয়ালী থানায় নিহতের মামা রাজ্জাক বাদী হয়ে শুক্রবার এনজিও কর্মী মো. বাদশাকে প্রধান আসামি করে এবং অপর অজ্ঞাত তিন জনকে আসামী করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ এ ঘটনায় এখনো কাউকে আটক করতে পারেনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহিনুজ্জামান জানান, এ ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আসামীদের আটকের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।


পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন