বগুড়ায় আ.লীগের চেয়ারম্যান বাহিনীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ধর্ষিতা কলেজছাত্রী

  18-09-2017 01:59PM

পিএনএস, জেলা প্রতিবেদক : ধর্ষণ মামলা দায়েরের পর থেকে বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোরশেদুল বারীর ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ধর্ষিতা কলেজ ছাত্রী। মামলা তুলে নিতে ওই পরিবারকে হুমকি ধমকি অব্যাহত রেখেছে চেয়ারম্যানের ক্যাডাররা। এছাড়াও চাঁদাবাজির মামলা করে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান বাহিনীর ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে অপর এক পরিবারের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ধর্ষণ মামলার আসামি হওয়ার পর থেকে পলাতক আছেন নন্দীগ্রাম উপজেলার ভাটরা ইউনিয়ন পরিষদের আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারী । পলাতক থাকলেও তার ক্যাডার বাহিনী এলাকায় সক্রিয় রয়েছে। ধর্ষিতার পরিবারকে অব্যাহত হুমকি-ধমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। ধর্ষণ মামলার বাদী কলেজ ছাত্রীর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় তিনি নেই।

ছাত্রীর বাবা ওমর আলী জানান, চেয়ারম্যানের লোকজনের ভয়ে তার মেয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। মামলা তুলে নিতে তাদেরকে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।

মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে ওই কলেজ ছাত্রী জানান, চেয়ারম্যান তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। মামলা দায়েরের পর থেকেই চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর হুমকি-ধমকিতে তিনি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র বসবাস করছেন।

চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর অত্যাচার ও নির্যাতনে ২০১৬ সালে বসতবাড়ি বিক্রি করে বগুড়া শহরে বসবাস করছেন পণ্ডিতপুকুর বাজার এলাকার বাসিন্দা দিদার মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে চেয়ারম্যান দিদার মণ্ডল ও তার ছেলে কলেজ ছাত্র আতিকুর রহমান জনিকে বেদম মারপিট করে এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্যে হুমকি দেন। জীবন বাচাতে পরিবারকে নিয়ে বসতবাড়ি বাজারমূল্যের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে শহরে চলে যান তিনি।

এদিকে, নন্দীগ্রাম থানার এসআই মনিরুল ইসলামের সাথে আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারী ও চেয়ারম্যানের ক্যাডার বাহিনীর সখ্যতার অভিযোগ উঠেছে। গনমাধ্যম কর্মীদের কাছে পাঠানো ছবিতে দেখা গেছে চেয়ারম্যানের সাথে আনন্দে আত্মহারা এসআই মনিরুল।

চলতি বছর পণ্ডিতপুকুর হাট সরকারিভাবে ইজারা পায় ওই এলাকার মুনসুর আলীর পুত্র হাসান মাহমুদসহ আরো দুইজন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদের নিকট ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তাকেসহ তার পরিবারের সদস্যদের বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়। হাসান মাহমুদ চেয়ারম্যানকে ফেব্রুয়ারি মাসে এক লাখ টাকা দেন। অবশিষ্ট ১ লাখ টাকার জন্য চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনী ওই মাসের ২৩ তারিখে হাসান মাহমুদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে বেদম মারপিট করে এবং হত্যার হুমকি দেয়।

এ ঘটনায় নন্দীগ্রাম থানায় চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে চাঁদাবাজি ও মারপিটের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন হাসান মাহমুদ। মামলা দায়েরের পর চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনী তাকে হত্যার হুমকি দেয়। নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ৯ মার্চ জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দপ্তরের আবেদন করেন হাসান মাহমুদ। পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে বিশেষ নিরাপত্তা দেওয়া হয়। মামলার বাদী হাসান মাহমুদ বলেন, চেয়ারম্যান ও তার ক্যাডার বাহিনীর ভয়ে আমিসহ আমার পরিবারের সদস্যরা সবসময় আতঙ্কে থাকি।

তবে এবিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে নন্দীগ্রাম থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আতঙ্কের কোনো কারন নেই। চেয়ারম্যান পলাতক রয়েছে। হাসান মাহমুদের আবেদনের প্রেক্ষিতে সার্বক্ষনিক নিরাপত্তাসহ খোজখবর রাখা হচ্ছে।

অপরদিকে, গত ৩১ আগস্ট চেয়ারম্যান মোরশেদুল বারীর নামে শাজাহানপুর থানায় ধর্ষণ মামলা দায়ের করে অনার্স ২য় বর্ষের এক ছাত্রী। মামলার ১৮ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে পারেনি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শাজাহানপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, আসামি চেয়ারম্যানকে গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত আছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন