টার্গেট দরিদ্র সুন্দরী গার্মেন্টস ও গ্রামের গরিব সুন্দরী নারীরা

  20-09-2017 05:59PM

পিএনএস ডেস্ক : মূলত টার্গেট দরিদ্র সুন্দরী গার্মেন্টস কর্মী ও গ্রামের গরিব সুন্দরী নারী। যে একই গার্মেন্টসে কাজ করবে।

কিংবা পরিচয়ের সূত্র ধরে মা-বাবা স্বজনদের সাথেও গড়বে সখ্যতা। প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হলে নানা প্রলোভনে পরিবারে বিয়ের প্রস্তাব পাঠান। যে কোনোভাবে বিয়ে করে গ্রামের বাড়িতে বা হানিমুনে যাওয়ার কথা বলে পাড়ি দিতেন ভারতে।

এরপর স্ত্রীকে বিক্রি করে দেন পতিতালয়ে। শুধু অবিবাহিত তরুণীদেরই নয়, বিবাহিত সুন্দরী নারীদের ও তাদের স্বামীদের লোভনীয় চাকরির কথা বলে ভারত নিয়ে স্বামীকে অনুপ্রবেশের দায়ে পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে স্ত্রীকে নামাতেন দেহ ব্যবসায়। এভাবেই চলত আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সদস্য মাদারীপুর জেলার কালিয়া থানাধীন বাকা গ্রামের আনিচ শেখ ওরফে মেহেদী ওরফে আমিনুরের (২৫) কর্মকাণ্ড। আর এ কাজে তাকে সহায়তা করতেন তার মা রেহেনা বেগম (৪৫)।

সম্প্রতি ভারতের মুম্বাই থেকে পালিয়ে এসে গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরের এক তরুণী (২০) র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) মাদারীপুর ক্যাম্পের সহায়তায় ধরিয়ে দেন স্বামীরুপী দুর্ধর্ষ নারীপাচার চক্রের মূল হোতা আনিচ শেখ ও তার মাকে। এরপর বের হয়ে আসে অভিনব পন্থার লোমহর্ষক সব নারীপাচারের কাহিনী।

গোপালগঞ্জের মোকসেদপুরের প্রতারিত তরুণী জানান, তিনি ঢাকার সাভারের একটি গার্মেন্টসে প্রায় দেড় বছর কাজ করে ভাগ্য পরিবর্তনের চেষ্টা করছিলেন। একই গার্মেন্টসে মাত্র ২ মাস কাজ নিয়ে আনিচ শেখ নামের ওই ব্যক্তি তার সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। প্রায়ই ভাড়া বাসায় গিয়ে মেয়েটির মাসহ স্বজনদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে।

ওই তরুণী বলেন, প্রথমে আনিচ তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে রাজি হননি। পরে আনিচ দফায় দফায় অনুনয়-বিনয় করে মেয়েটির মাসহ স্বজনদের রাজি করান। মেয়ের ভাগ্য ঘোরার আশায় আনিচের অভিভাবক ছাড়াই কোনো যাচাই-বাছাই না করেই ২০১৪ সালের ৮ আগস্ট বিয়ে দেন। বিয়ের চার মাস পর মেয়েটিকে নিজের বাড়ি নড়াইলে নেওয়ার কথা বলে আনিচ তার মা রেহেনা বেগমের সহায়তায় ভারত নিয়ে যায়।

অন্ধ বিশ্বাসের ভালোবাসার রুপ কতটা ভয়ংকর হতে পারে, ভারতে গিয়ে সেটিই দেখতে পান ওই তরুণী। তিনি বলেন, ভারত নিয়ে আনিচ সহযোগীদের সহায়তায় তাকে বিক্রি করে দেন মুম্বাইয়ের দালালদের হাতে, যারা বিভিন্ন হোটেলে রেখে দেহব্যবসা করতে বাধ্য করত। ৬ মাস ভারতের বিভিন্ন হোটেলে নিষিদ্ধ জীবনে কাটানোর পর বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। এরপর আনিচ ও তার মাকে ফাঁদে ফেলে গত ১১ আগস্ট দুুপুরে র‌্যাবের হাতে ধরিয়ে দেন ভুক্তভোগী তরুণী।

এরপরই উম্মোচিত হয় ভয়ংকর এ চক্রের নারী পাচারের অভিনব সব কৌশল। আনিচের দলে ভারতীয় সহযোগী ছাড়াও কালাম সর্দার, ইউনুছ শেখ, রাহুল নামের ছদ্মবেশীরা রয়েছেন। এরা চাকরির ছলে দরিদ্র সুন্দরী মেয়েদের বিয়ে করে পাচার করে নামায় দেহব্যবসায়।

ওই তরুণী আরও জানান, তার সাথেই বাগেরহাটের মংলার এক দম্পতিকে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে ভারতে নিয়ে স্বামীকে অনুপ্রবেশের দায়ে পুলিশে ধরিয়ে স্ত্রীকে এই চক্র পতিতাবৃত্তি করতে বাধ্য করে। এই চক্রটি একই প্রতারণার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মেয়ে ও দম্পতিদের পাচার করে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার প্রমাণ এখন র‌্যাবের হাতে রয়েছে।

এ চক্রের প্রতারণার শিকার হন বাগেরহাটের মংলার এক দম্পতি। ভুক্তভোগী ওই স্ত্রী জানান, ভালো চাকুরির লোভে ভারতে গিয়ে তিনি ফোনেও ভয় পান ওই চক্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে। জেলখাটা স্বামী কথা বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে শত শত মেয়েদের রাখা আছে।

ভারত থেকে ফিরে আসা নির্যাতিত ওই নারীর মা জানান, নানা কৌশলে বিয়ের পর বাড়িতে নেওয়ার কথা বলে ভারত নিয়ে বেচে দেওয়া হয় নিষিদ্ধপল্লীতে।

এছাড়াও আরও বেশ কিছু চক্র সক্রিয় থাকায় ভারতের বিভিন্ন পতিতালয় ও হোটেলে শত শত নারী এ পেশায় জড়িয়ে পড়েছে বলে ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। নতুন নতুন উপায়ে নারী পাচার রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অভিযানের সঙ্গে জনগণকেও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন নির্যাতন ও প্রতারণার শিকার নারীদের পক্ষ থেকে। এলাকাবাসী ও স্বজনরা জানান, প্রতারিত এ সকল মেয়েদের স্বজনরা তুলে ধরেন অপতৎপরতার নানা কৌশল। পাশাপাশি দোষীদের কঠোর বিচার দাবি করেন তারা।

র‍্যাব জানায়, উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অসহায় নারীদের টার্গেট করে একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে নারীদের পাচার করে আসছিল। কখনও দরিদ্র নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে কিংবা বিয়ে করেও দেশের বাইরে পাচার করে তারা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আনিচ ও রেহেনা দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে নারী পাচারের কথা স্বীকার করেছে বলেও জানানো হয়েছে।

গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে নারী পাচারের অভিনব এ পন্থার হোতাদের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছেন বলে জানান মাদারীপুর ক্যাম্প র‌্যাব-৮ এর কমান্ডার মেজর মো. রাকিবুজ্জামান।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন