র‍্যাম্প মডেল থেকে জঙ্গি!

  21-09-2017 02:48PM

পিএনএস ডেস্ক : মডেলিংয়ের দারুণ শখ ছিল মেহেদী হাসানের। র‍্যাম্প মডেল ছিলেন। এর পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিতে বেশ দক্ষতা আছে ২৯ বছর বয়সী এই যুবকের। তাঁর গৃহসজ্জার জিনিসপত্র বিক্রিসহ নানা ব্যবসা ছিল। কিন্তু সব ছেড়ে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এই অভিযোগে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

গতকাল বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ বনশ্রী এলাকার একটি বাড়ি থেকে মেহেদী হাসানকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩-এর একটি দল। তাঁর কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, একটি মোবাইল ফোন সেট, একটি পাসপোর্ট, উগ্রবাদী বইসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করা হয়েছে।

তবে মেহেদীর পরিবারের দাবি, গত ৪ মে থেকে মেহেদী নিখোঁজ আছেন। তাঁর সন্ধান পাওয়ার জন্য খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। মেহেদীর বাবা খোরশেদ আলম পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক ছিলেন। ১৯৯৯ সালে তিনি অবসরে যান তিনি।

র‍্যাবের দাবি, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের ‘ব্রিগেড আদ্-দার-ই-কুতনী’র কমান্ডার এই মেহেদী হাসান। তাঁর সাংগঠনিক নাম ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। মেহেদীর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর রাজাপুর গ্রামে। তাঁর বাবার নাম খোরশেদ আলম। মেহেদী ঢাকার দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ সম্পন্ন করেছেন। মডেলিংয়ে তিনি মেহেদী নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি বনানী থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে করা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি। একই আইনে উত্তরা পশ্চিম থানার আরেকটি মামলার তদন্তে নাম নাম এসেছে।

আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের ৮ অক্টোবর র‍্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে নিহত হন জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের তৎকালীন আমির সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ।

এই বাসা থেকে জেএমবির দুটি অপারেশনাল ব্রিগেড ‘বদর স্কোয়াড’ ও ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ সম্পর্কে তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে ‘বদর ব্রিগেড’ হোলি আর্টিজানসহ বিভিন্ন হামলা ভূমিকা রাখে। তবে দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ‘বদর ব্রিগেডের’ বেশির ভাগ সদস্য নিহত ও আটক হয়। এতে ব্রিগেডটি দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই ব্যাকআপ ব্রিগেড হিসেবে ‘আদ্-দার-ই-কুতনী’ সদস্য সংগ্রহ করে শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করে।

২০১৫ সালে জেএমবির সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সঙ্গে মেহেদী হাসান সম্পৃক্ত হয়। তাঁর সঙ্গে নিবরাসসহ হোলি আর্টিজান ও কল্যাণপুরের আস্তানার জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন, এ দাবি লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদের। এই র‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গি কর্মকাণ্ডের জন্য কর্মী, অর্থ সংগ্রহ, জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করা, হিজরত-পূর্ব প্রস্তুতিমূলক পর্ব সম্পন্ন করার কাজ করতেন মেহেদী হাসান। তা ছাড়া সাংগঠনিক বিয়ের ব্যবস্থা দেখভাল করতেন তিনি।

তাঁর মাধ্যমে হিজরত করা দুই বড় জঙ্গি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়। এ ছাড়া দেশে ও দেশের বাইরে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িতদের সঙ্গে যোগাযোগ, অর্থ ও অর্থের মাধ্যমে অস্ত্র সংগ্রহের কাজও তিনি করতেন। নারী সদস্যরাও তাঁর মাধ্যমে জঙ্গি কর্মকাণ্ড চালিয়েছে বলে জানা গেছে। মেহেদীর কাছ থেকে উদ্ধার করা আলামত থেকে জানা যায়, ‘আদ্-দার-ই-কুতনী’ অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন ও যেকোনো স্থানে নাশকতার জন্য সক্ষম।

র‍্যাবের একটি সূত্রে জানা গেছে, মেহেদী হাসান ইংরেজিতে কথা বলা ও লেখায় বেশ দক্ষ। দেশের শীর্ষ মডেলদের সঙ্গে এক সময় তিনি মডেলিং করতেন। মডেলিং ও ব্যবসা করার সময় তিনি জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েন।

সাংবাদিক আজ মেহেদী হাসানের গ্রামের বাড়ি রাজাপুরে খোঁজ নিয়ে জানান, সেখানে নিজেদের বসতবাড়ি থাকলেও প্রায় ৩০ বছর ধরে মেহেদীর পরিবারের সদস্যরা থাকেন না। বর্তমানে ঢাকার মগবাজার ওয়্যারলেস গেট এলাকার একটি বাড়িতে বসবাস তাঁর পরিবারের।

মেহেদীর বড় ভাই ওয়ালিউর আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সাংবাদিকদের বলেন, ৪ মে সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বের হন মেহেদী। এর পর থেকে তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। জিডি করার পর থানা ও র‍্যাব-৩ কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। কিন্তু মেহেদীর কোনো সন্ধান থানা-পুলিশ কিংবা র‍্যাব থেকে তাঁদের দেওয়া হয়নি।

মেহেদীর জঙ্গি কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার বিষয়ে কিছু জানা নেই দাবি করে ওয়ালিউর আলম বলেন, মেহেদী বিয়ে করেছেন ঢাকার এক মেয়েকে। তাঁর স্ত্রী বর্তমানে অন্তঃসত্ত্বা। চার বোন, দুই ভাইয়ের মধ্যে মেহেদী সবার ছোট। উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় মডেলিংয়ের চেষ্টা করেন তিনি। তবে পরিবার থেকে এ বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়। একসময় পুরান ঢাকার চকবাজার থেকে খেলনা সামগ্রী কিনে বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতেন। পাশাপাশি দেশের বাইরে থেকে চকোলেট এনে বিভিন্ন দোকানে বিক্রি করতেন। মূলত ব্যবসা করতেন তিনি। আগে মডেলিংয়ে যুক্ত থাকলেও কয়েক বছর ধরে তিনি সেসব ছবি নষ্ট করে ফেলেন।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন