ঢাবি ছাত্রলীগের কাণ্ড, ধুমপানে বাধা দেয়ায় দোকানিকে সিগারেটের ছ্যাঁকা

  24-09-2017 02:49PM

পিএনএস ডেস্ক : রাজধানীর চাঁনখারপুলে বনফুল মিষ্টির দোকানের ভেতরে ধুমপান করতে নিষেধ করায় দোকানিকে সিগারেট দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একই সঙ্গে দোকান ব্যবস্থাপককে হলে আটকে রেখে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। শনিবার বিকাল ৫টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

দোকান মালিক আল আমিন বলেন, বেলা সাড়ে ১২টার দিকে দোকানে মিষ্টি কিনতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুইজন ছাত্র আসে। তারা দোকানের ভেতর সিগারেট খাচ্ছিল। তখন দোকানের ব্যবস্থাপক গিয়াস উদ্দিন দোকানের ভেতর এসি চলছে জানিয়ে তাদের বাইরে গিয়ে সিগারেট খেতে বলেন। ওই দুই ছাত্র গিয়াস উদ্দিনকে হুমকি দিয়ে এসি বন্ধ করে দরজা খুলে দিতে বলে। গিয়াস উদ্দিন কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দিয়ে বলেন, সভ্য সমাজের লোক হলে এমন করতেন না। এরপর ওই দুইজন ছাত্র ক্ষিপ্ত হয়ে গিয়াস উদ্দিনকে দেখে নেয়ার হুমকি দিয়ে বের হয়ে যায়।

পরে বিকাল ৫টার দিকে বাইকে করে ১০ জন দোকানে এসে গিয়াস উদ্দিনকে এলাপাথাড়ি মারধর করতে থাকে। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও মারধর করে। এক পর্যায়ে দোকানের টেবিলে থাকা ছুরি দিয়ে গিয়াস উদ্দিনের হাত জখম করে। তারপর গিয়াস এবং আমাকে ফজলুল হক মুসলিম হলের গেস্টরুমে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়েও গিয়াস উদ্দিনকে মারধর করে। তারা দোকান মালিককে আসতে বলে। আমি দোকানের মালিক বলার পর তারা আমাকে পুনরায় মারধর করে এবং বলে, তোকেই আগে ধরতে হবে। দোকানের কর্মচারীদের ম্যানার শেখাইসনি। পরে আমার ঘাড়ে সিগারেট দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়। এক লাখ টাকা দিয়ে গিয়াস উদ্দিনকে ছাড়িয়ে নিতে বলে। আমি সন্ধ্যার দিকে ১৫ হাজার টাকা নিয়ে গেলে তারা টাকা না রেখে বলে, আমরা কি ফকির। পঞ্চাশ হাজার টাকা নিয়ে আয়। কিছুক্ষণ পর তারা গিয়াস উদ্দিনকে ছেড়ে দেয়।

টাকা না নিয়ে ছাড়লো কেন জানতে চাইলে আল আমিন বলেন, কেন ছাড়ছে আমি জানি না। হঠাৎ মোবাইলে গিয়াস উদ্দিনের কল আসে। সে একেক সময় একেক জায়গার নাম বলে। পরে তাকে মৎস্য ভবন থেকে নিয়ে আসি। আল আমিন আরো বলেন, গিয়াস উদ্দিনকে যখন পাই তখন সে হাটতে পারছিলো না। একটু গিয়েই পড়ে যাচ্ছিল। ছাত্ররা দোকানের চাবি রেখে দিয়েছে বলেও জানান তিনি।

হল সূত্রে জানা গেছে, দোকানে মিষ্টি কিনতে যাওয়া দুই ছাত্রের একজন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-সম্পাদক মো. আরিফুল ইসলাম জিসান এবং অপরজন সাবেক হল ছাত্রলীগ নেতা মাসুদ। মাসুদ বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক। পরে হলে জিসান ও হল ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম রাকিবের নেতৃত্বে আরো কিছু নেতাকর্মী গিয়াস উদ্দিন ও আল আমিনকে তুলে নিয়ে আসে। গিয়াস উদ্দিনকে হলে আটকে রেখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা পাশবিক নির্যাতন চালায়। হাতের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ছুরি দিয়ে জখম করে। মাথায় স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়। পরে ঘটনাটি ক্যাম্পাসে জানাজানি হয়ে গেলে গিয়াস উদ্দিনকে ছেড়ে দেয় তারা। অভিযুক্তরা হল ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার সিদ্দিক সিসিম এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবিদ আল হাসানের অনুসারী।

এবিষয়ে জানতে চাইলে হল ছাত্রলীগের সভাপতি সিসিম বলেন, ঘটনার সময় হলে ছিলাম না। তবে শুনেছি, দোকানের কর্মচারীরা ছাত্রদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে। তাই তাদের মারধর করা হয়েছে। তিনি মিষ্টি কিনতে যাওয়াদের মধ্যে জিসান ছিলো বলে নিশ্চিত করেছেন।

সিসিম আরো বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে হল ছাত্রলীগের কেউ জড়িত থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো এবং সাধারণ ছাত্ররা জড়িত থাকলে হল প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে বলবো। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবিদ আল হাসান বলেন, ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। আমি ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক ঘটনাটি তদন্ত করছি। রবিবার হল শাখার সভাপতি-সাধরণ সম্পাদককে নিয়ে বসবো। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ এম আমজাদ বলেন, ঘটনা শোনার পরপরই হল প্রশাসনকে জানিয়েছি। তারা গিয়ে কাউকে আটক অবস্থায় পায় নি। তবে তারা তদন্ত করছে। রিপোর্ট দিলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন