তাহিরপুর সীমান্তে চোরাচালানীদের রামরাজত্ব: ৩ টন চোরাই কয়লা আটক

  15-10-2017 05:29PM

পিএনএস, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত চোরাচালানীদের রামরাজত্বে পরিণত হয়েছে। উপজেলার বালিয়াঘাট ও টেকেরঘাট সীমান্ত থেকে ৮০কেজি ওজনের ৪২বস্তা (৩টন) চোরাই কয়লা আটক করেছে বিজিবি। আটককৃত কয়লার মূল্য প্রায় অর্ধলক্ষ টাকা।

এলাকাবাসী জানায়,গতকাল ১৪.১০.১৭ইং শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের লাকমাছড়া পূর্বপাড়া ও টেকেরঘাট সীমান্তের বিসিআইসি খনি প্রকল্পের শহিদ মিনার ও মন্দির সংলগ্ন এলাকার ৮টি পয়েন্ট দিয়ে লাকমা গ্রামের চিহ্নিত চোরাচালানী রতন মহলদার,মানিক মহলদার,মোক্তার মহলদার,আব্দুল হাকিম ভান্ডারী ও দুধেরআউটা গ্রামের জিয়াউর রহমান জিয়া গং ভারত থেকে ১৪০বস্তা (১০টন) কয়লা পাচাঁর করে লাকমাছড়া পূর্বপাড়া গ্রামের গোরস্থানের পাশে ও রেন্টি গাছে কাছে মজুদ করে রাখে।

এখবর পেয়ে টেকেরঘাট ক্যাম্পের বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালিয়ে ১৪০বস্তার (১০টন) মধ্যে ৪২বস্তা (৩টন) কয়লা আটক করলেও চোরাচালানীদেরকে গ্রেফতার করেননি।

এছাড়া উপরের উল্লেখিত চোরাচালানীরা ভারত থেকে মদ,গাজা,হেরুইন ও ইয়াবা পাচাঁর করে বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত দুধের আউটা গ্রামের আংগুড়ি বেগমের বাড়িতে,ড্রাম্পের বাজার,নতুনবাজার ও তার পার্শ্ববর্তী লাকমা,পুটিয়া গ্রামসহ টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত বড়ছড়া,জয়বাংলা বাজার,বুরুঙ্গাছড়া গ্রামে নিয়ে অবাধে বিক্রি করছে।

অন্যদিকে বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্পের ১১৯৩পিলার সংলগ্ন এলাকা দিয়ে গত ১৩.১০,১৭ইং শুক্রবার রাত ১১টা থেকে পরদিন ১৪.১০.১৭ইং শনিবার ভোর ৫টা পর্যন্ত ভারত থেকে ২২ হাজার ৭শত বস্তা (প্রায় ৭৫৭ মেঃটন) কয়লা পাচাঁর করে বাগলী এলসি পয়েন্টে অবস্থিত বুড়ার দোকানের পিছনে,নজরুল মিয়া,লিটন মিয়া,শাজাহান খন্দকার ও সুরুজ মিয়ার ডিপুতে নিয়ে মজুদ করে রাখার ২দিন পেরিয়ে গেলেও বিজিবি এখনও পর্যন্ত চোরাই কয়লাগুলো আটকের ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

প্রায় ৫ মাস যাবত বাগলী শুল্কস্টেশন দিয়ে কয়লা ও চুনাপাথর আমদানী বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বীরেন্দ্রনগর গ্রামের সিদ্দিক ড্রাইভারের ছেলে নজরুল মিয়া,তার ভাগিনা একই গ্রামের মঞ্জু মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া,মৃত লাল মিয়ার ছেলে হযরত আলী,মৃত জামাল মিয়ার ছেলে মঞ্জুল মিয়ার নেতৃত্বে বীরেন্দ্রনগর গ্রামের রহমান মিয়া,শাদত মিয়া,একাব্বর মিয়া,মফিজ মিয়া,শামিম মিয়া,রংগাছড়া গ্রামের অদুদ মিয়া গং সিন্ডিকেড তৈরি করে প্রতিদিন চোরাচালান করছে। এবং পাচাঁরকৃত চোরাই কয়লার বস্তা থেকে নজরুল মিয়া ও তার ভাগিনা লিটন মিয়া নিচ্ছে ১৫টাকা,বীরেন্দ্রনগর বিজিবি ক্যাম্পের নামে নিচ্ছে ২০টাকা,জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত থাকা সাংবাদিক ও থানা-পুলিশের নামে ১০টাকাসহ মোট ৫০টাকা চাঁদা নিচ্ছে চোরাচালানী হযরত আলী ও মঞ্জুল মিয়া। এর আগে গত ০৫.১০.১৭ইং বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে ০৬.১০.১৭ইং শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সাড়ে ৪ হাজার বস্তা (১৫০মেঃটন) কয়লা ওপেন পাচাঁর করলেও এব্যাপারেও বিজিবি কোন পদক্ষেপ নেয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এব্যাপারে টেকেরঘাট ও বড়ছড়া শুল্কষ্টেশনের বৈধ কয়লা ও চুনাপাথর ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদ,জয়লাল আবেদীন,শফিকুল ইসলাম,জমির হোসনসহ আরো অনেকেই বলেন,চোরাচালানী রতন মহলদার,মানিক মহলদার,মোক্তার মহলদার,আব্দুল হাকিম ভান্ডারী ও জিয়াউর রহমান জিয়া গং প্রতিদিন ভারত থেকে কয়লা ও চুনাপাথরসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচাঁর করছে এরপরও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

উপজেলার উত্তরশ্রীপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ও কয়লা ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন সেলিম,কয়লা ব্যবসায়ী সাব্বির হোসেন,জমির আলী,আক্কাস আলী,ওলি উল্লাহ,ফয়সাল আহমেদসহ আরো অনেকেই বলেন,সরকারের লক্ষলক্ষ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সিন্ডিকেডের মাধ্যমে নজরুল মিয়া,লিটন মিয়া,হযরত আলী,মঞ্জুল মিয়া গং বাগলী এলাকা দিয়ে দীর্ঘদিন যাবত ভারত থেকে অবৈধভাবে কয়লা ও চুনাপাথর পাচাঁর করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হলেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছেনা প্রশাসন।

এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক নাসির উদ্দিন চোরাই কয়লা আটকের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল



@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন