অর্থের লোভে ইউটিউবে বাঙালি তরুণীদের অশ্লীল গল্পের আসর‍!

  07-12-2017 03:32PM

পিএনএস ডেস্ক: মিফতাহুল জান্নাত প্রিয়তি, বছর খানেক আগে দেশের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক শেষ করেছেন। পড়াশুনা শেষে চাকরি না পেয়ে ইউটিউব কন্টেন্টের মাধ্যমে আয়ের পন্থা খুঁজতে শুরু করেন। বাসায় বসে নিজে গল্পে কণ্ঠ দিয়ে ও গ্রাফিক্স করে বানাতে শুরু করেন ইউটিউব কন্টেন্ট। তবে এই গল্পগুলো সবই সমাজের ‘নিষিদ্ধ’ গল্প বা চলতি ভাষায় চটি গল্প।

কিছু দিনের মধ্যেই ফল পেলেন হাতে হাতে। বেশ ভালো আয়ও করতে শুরু করেন একেকটা ভিডিও থেকে। এখন আর কোনো চাকরির ওয়েবসাইট কিংবা পত্রিকায় চোখ না বুলিয়ে এটাকেই স্থায়ী পেশা হিসেবে নিয়েছেন তিনি।

শুধুমাত্র প্রিয়তি নয়। তার মতো অনেক তরুণীই এখন ইউটিউবে বাংলা অশ্লীল গল্প আপলোড করে আয়ের পথ খুঁজছেন। ইউটিউবে এমন গল্পের ক্ষেত্রে সবার আগে আসে জেসিকা শবনম নামের এক তরুণীর নাম। একাধিক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে এই নামেই ইউটিউবে রয়েছে শতাধিক কন্টেন্ট। প্রত্যেকটি কন্টেন্টে ভিউয়ার্সের পরিমাণও নেহাত কম নয়। ১০ হাজার থেকে শুরু করে প্রতিটি কন্টেন্টে ভিউয়ারের সংখ্যা পাঁচ লাখ পর্যন্ত।

বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং সাইট ইউটিউবে প্রতিদিন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রতি তিনজনের একজন ঢুঁ মারেন। মোট হিসেবে এই সংখ্যা ১ বিলিয়নেরও বেশি। প্রতিদিন চার বিলিয়ন ভিডিও দেখা হয় এই সাইটটি থেকে। তিন বছরের শিশু থেকে শুরু করে ৬০ বছরের বৃদ্ধ পর্যন্ত কেউই বাদ নেই এই সাইটের ছোঁয়া থেকে। তবে বিশাল এই মাধ্যমটির বাজে ব্যবহার দেশের সমাজ ও সংস্কৃতির জন্য খুবই ভয়াবহ ফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন প্রযুক্তিবিদ ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা। আর এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য আইনের চাইতে সচেতনতা ও তরুণদেরই বেশি ভূমিকা রাখতে হবে বলে মত তাদের।

অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট বা ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়া অশ্লীল গল্প সমাজের জন্য খুবই ভয়াবহ ফল বয়ে আনবে বলে মন্তব্য করে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলাম বলেন, পৃথিবীর সবচেয়ে পুরনো ব্যবসা হচ্ছে যৌনতা নিয়ে ব্যবসা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে এই ব্যবসার ধরণ। আগে শুধুমাত্র যৌনকাজ করে এই ব্যবসা চললেও বর্তমানে শুধুমাত্র সেখানেই থেমে নেই এটি। ভিডিও থেকে অডিও’তেও রূপ নিয়েছে এই ব্যবসা।

তিনি বলেন, মানুষ যখন আর্থিক সংকটে ভোগে তখনই তারা এ ধরনের কাজে জড়িয়ে পড়েন। নৈতিকতা ও আত্মমর্যাদাবোধের অভাবেও তারা এ কাজের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। এসব কন্টেন্টের বেশিরভাগেই প্রলুব্ধ করা হয় অসুস্থ যৌনাচারে। আর এই নিকৃষ্টতর কাজ একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে। এগুলো মানসিক ও সামাজিক বিশৃঙ্খলাও তৈরি করবে। তাই এগুলো এখনই বন্ধে উদ্যোগ নেয়া জরুরি।

ইউটিউবে প্রতি মিনিটে আপলোড করা হয় ৪০০ ঘণ্টার মতো ভিডিও। আর ইউটিউব ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন ছয় বিলিয়ন ঘণ্টা ব্যয় করেন এসব ভিডিও দেখে। জনপ্রিয় এই সাইটটিতে অ্যাডাল্ট কন্টেন্ট আপলোডে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে ভাষার কারণে নীতিহীন ইউটিউবাররা সুবিধা পান বলে মন্তব্য করেন তথ্য প্রযুক্তিবিদ ও ইউটিউবার সালাউদ্দিন সেলিম। তিনি বলেন, এ ধরনের কন্টেন্ট বন্ধে ইউটিউবের নিজস্ব কিছু নিয়ম রয়েছে। ইউটিউব নিজেই কন্টেন্ট ফিল্টার করে। কিন্তু ভাষার ভিন্নতা হওয়ায় এবং যেসব শব্দে ইউটিউবের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেগুলো এড়িয়ে অন্য শব্দ ব্যবহার করায় কিছুক্ষেত্রে অনেকেই সুবিধা নিতে পারেন।

তবে এগুলো বন্ধে দেশের ইউটিউবারদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এসব কন্টেন্ট ছড়িয়ে পড়া বন্ধে এগিয়ে আসতে হবে দেশের ইউটিউবারদের। যেসব অ্যাকাউন্ট থেকে এ ধরনের ভিডিও আপলোড করা হয় সেগুলোকে রিপোর্ট করা হলে ইউটিউব খুব দ্রুতই সেগুলা বন্ধ করে দেয় এবং অনেকক্ষেত্রে অ্যাকাউন্টই বন্ধ করে দেয়া হয়। অন্যদিকে বিটিসিএল যেহেতু শুধুমাত্র ইউআরএল বন্ধ করতে পারে এবং প্রত্যেকটি ইউটিউবের কন্টেন্ট আলাদা সেজন্য ইউআরএল বন্ধ না করে আইন প্রণয়ন করা দরকার।

তবে বর্তমানে যে আইন রয়েছে তাতেই এসব কন্টেন্ট বন্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন বিটিআরসির সচিব সরওয়ার আলম। তিনি বলেন, ইউটিউবের অশ্লীল কন্টেন্ট বন্ধে আমরা অনেক আগে থেকেই কাজ করছি। আর কেউ যদি এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চায় তবে সে বর্তমান আইনে মামলাও দায়ের করতে পারবেন। অন্যদিকে তাজুল ইসলাম মনে করেন, আত্মমর্যাদাবোধ ও নৈতিকতার চর্চার মাধ্যমেই এসব কন্টেন্ট বন্ধ হতে আর।

কেউ যদি ইউটিউব থেকে আয় করতে চান তবে এসব অশ্লীল কন্টেন্ট বাদ দিয়ে অল্প খরচে ভালো মানের কন্টেন্ট তৈরি করেও আয় করতে পারেন বলে মনে করেন সালাহউদ্দিন সেলিম। তিনি বলেন, এগুলো হতে পারে টিউটোরিয়াল, ভ্রমণ বিষয়ক কিংবা লাইফস্টাইটল বিষয়ক কন্টেন্ট তৈরি করে।

উদাহরণ টেনে সেলিম বলেন, কেউ কোথাও ঘুরতে গেল মোবাইলে সেই জায়গার ভিডিও করে কিংবা ঘরে বসে রেসিপি’র ভিডিও তৈরি করে খুব সহজেই ইউটিউব থেকে আয় করতে পারেন। এতে যেমন সমাজের নৈতিক অবনতির সম্ভাবনা থাকবে না তেমনি আয়ের পাশাপাশি তথ্য দিয়ে উপকৃতও করা হবে সাধারণকে।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন