মডেলিং এর আড়ালে ‘পতিতাবৃত্তি’র ভয়ানক রূপ!

  11-12-2017 10:44AM

পিএনএস ডেস্ক:পেশায় একজন মডেল। তবে সুনাম কিংবা দুর্নাম কোনোদিক দিয়েই তেমনভাবে বিখ্যাত না। নিজের সীমাবদ্ধতার জায়গা থেকে শুধুমাত্র শখের বর্শে মডেলিং করেন। গত তিনবছর যাবত বন্দী হয়ে আছেন প্রাক্তন প্রেমিকের কাছে। একইসাথে মিটিয়ে আসতেছেন শারীরিক চাহিদাও।

মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা সিঁথি গোমেজ (ছদ্মনাম) চেহারায় বেশ মিষ্টি নিয়েই জন্মেছেন, গায়ের রঙা উজ্জ্বল ফর্সা আর ঘন কালো চুল। কলেজে পড়ার সময় পরিচয় হয় আবির কুমার কূন্ডুর সাথে। স্থিরচিত্র গ্রহণের জন্য সুপরিচিত যন্ত্র ডি এস এল আর এর মাধ্যমে ছবি তুলে মনের মধ্যে রাঙিয়ে দেয় মডেল হওয়ার নেশা। শুরু হয় গোমেজের মডেলিং এর যাত্রা। ফেসবুকে, টুইটারে প্রকাশিত সব ছবিগুলো দেখে যেনো যে কারো হা হয়ে যাওয়ার অবস্থা। কলেজের বন্ধুরা অবাক তার আচরণের, পোশাকের আনুষ্ঠানিক সব পরিবর্তনের ‘বে’হাল দেখে। তবে গোমেজের মনে তখন মডেল হওয়ার স্বপ্ন। ফেসবুক টুইটারের প্রকাশিত ছবির বদৌলতে কিছুদিনের মধ্যেই বেশ নামডাক এবং দুটো ম্যাগাজিনে কাজ করার জন্যও প্রস্তাব আসে। এদিকে পরিচিত সেই ফটোগ্রাফার (আবির) বন্ধুর সাথে ততোদিনে তার প্রেম হয়ে যায়। আবির তার সমস্ত কাজের ক্ষেত্রে খবরদারী করাটাও শুরু করে দেয়। মডেল হওয়ার মাধ্যমে লাল-নীল রঙের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে গোমেজের সেই জিনিসগুলো নিয়ে তেমন মাথা ঘামায়নি। দিনের পর দিন একইভাবে তার দাসত্য মেনে নিয়েছে। এভাবে দাসত্যের বশে থাকতে থাকতে আজ গোমেজ তার শরীরটাকেই বিনা পয়সায় বেঁচে দিয়েছে।

মডেল হয়ে উঠা সেই গোমেজের সাথে ঘটতে থাকা সহিংসতার বর্ণনা যদি তার মুখ থেকে শুনি তাহলে দাসত্যের ভয়াবহতা টের পাওয়া যাবে। তার বলা কথাগুলো দাঁড় করালে খানিক এমন যে, ‘তখন আমি অলরেডি মডেল হিসবে বিখ্যাত না হলেও, বেশ পরিচিতই ছিলাম। একইসাথে তখন আমার স্বপ্নের পুরুষ ছিলো আবির। নতুন নতুন মডেল হয়ে উঠা আর কাজের প্রশংসা আর পরপর সব কাজের প্রস্তাব পাওয়ার আনন্দ আর আবিরের আমার প্রতি ভালোবাসা এসব কিছুই যেনো আমার কাছে স্বপ্নের মতো ছিলো। মডেলিং আমার স্বপ্ন হলেও আমি হয়তো আবির কে সেই স্বপ্নের থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তাই আবির যা বলতো তা করতে আমার কোনোদিন ‘না’ ছিলো না, আমার চলাফেরা থেকে ধরে আমার গায়ের পোশাক সবকিছু সে নিজে ঠিক করে দিতো। এমনকি বলতে খানিক অস্বস্তি হচ্ছে তাও বলি, নয়তো আমার অবস্থা সম্পর্কে আপনারা অনেকটা আন্দাজ করতে পারবেন। তা হলো, সে আমার অন্তর্বাস নিয়েও আমাকে মারধর করতো, সে যে রঙের পড়তে বলতো, তার ব্যতিক্রম হলেই আমাকে মারধর করতো। আমি তখন মেনে নিতাম এটা ভেবে যে, হয়তো সে আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে, তাই আমাকে তার মনের মতো না পেলে এরকম পাগলামি করে। প্রতি সপ্তাহে একদিন আমার তার সাথে রাতে রুম শেয়ার করে থাকতে হতো, সে বলতো আমরা দুজন দুজন কে ভালোবাসি, বিয়েটা ফ্যাক্ট না, সত্যিকার ভালোবাসা আর বিশ্বাস থাকলে এগুলো ফ্যাক্ট না, এগুলো আমাদের ভালোবাসার মতোই, তাছাড়া তোমার পড়াশোনা শেষে আম্মার সাথে কথা বলে বিয়েটা করে নিবো। আমিও ‘বোকা’, না বোকা বললে ভুল হবে, হয়তো আমি লোভের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম, স্বপ্ন আর ভালোবাসায় ডুবে বাস্তবটা টের পাইনি। এভাবে আমাদের চলতে থাকে।

আমার প্রতি তার খবরদারিগুলো ভালোবাসা মনে করে, প্রায় একবছরের মতো আমাদের বেশ ভালোই যায়। তবে আমার আপত্তি জাগা শুরু করে তারপরই। সেই আপত্তির সৃষ্টি প্রথম তৈরি হয়, যখন আমার কাজের ক্ষেত্রেও সে আমাকে সে আটকানো শুরু করে, কিংবা অনিচ্ছা থাকতেও সে জোড় করে কোনো কাজের জন্য কন্ট্রাক্ট করতো। আমি কাদের হাউজে কাজ করবো, কোন ম্যাগাজিনে কাজ করবো, কার সাথে করবোনা, কন্ট্রাক্ট কিভাবে হবে, কতো বছরের জন্য হবে এমনকি কাজের বিনিময়ে আমি পারিশ্রমিক কতো পাবো সেটাও সে নির্ধারণ করে দিতো। কাজ শেষে পেমেন্ট টাও আসতো তাঁর নিজের ব্যাংক একাউন্টে, আমাকে সে নির্দিষ্ট পরিমাণ হাত খরচের টাকা দিতো। তারপরেও মাঝেমধ্যে দু একবার ভাবা ছাড়া তেমনভাবে মাথা ঘামাইতাম না এসব কিছু নিয়ে। আমার টাকা তাঁর কাছে থাকা কিংবা আমার কাছে থাকা দুইটা একই জিনিস ভেবে নিজেই নিজেরে বুঝাইতাম।

তবে আমার সকল ভাবনার সমাপ্তি হল সেদিন, যেদিন কিনা সে (আবির) আমার অনিচ্ছার বিরুদ্ধে এমন একটা হাউজের সাথে আমার হয়ে কন্ট্রাক্ট করলো, যেখানে কিনা কাজের বাইরেও হাউজ মালিকের শারীরিক চাহিদা আমাকেই মিটাইতে হবে, সেটাও কিনা আবার সে (আবির) জানতো। ঠিক সেই মুহুর্তে যেনো টের পাচ্ছিলাম যে আমার প্রতি আবিরের ভালবাসাটা আসলে কি।

বুঝলাম, বুঝে গেলাম। তবে ঐ যে! ভালোবাসায় যেমন ক্ষিধে পায়না, তেমনি ভালোবাসায় হয়তো মানুষ অন্ধ হয়েই যায় সত্যি সত্যি। তা নয়তো এই ঘটনার পর পুনরায় আবিরের সম্মুক্ষীন হয়ে বলতে যেতাম না, বুঝাইতে যেতাম না যে ‘আবির ভুল করছো তুমি, আমিতো তোমার বউ, আমি অন্য একজনের সাথে রুম শেয়ার করতে যাবো, আর তুমি তা মেনে নিতে পারবে আসলেই?’

আর আবিরও তখন সুযোগ পেতোনা, আমার পায়ে ধরে কান্না গলায় ব্ল্যাকমেইল করতো এই বলে যে, সে অলরেডি ঐ হাউজের থেকে লাখ খানেক টাকা নিয়ে খরচ করেছে, শুধু অর্থের ব্যপার না, সে অলরেডি কন্ট্রাক্টে সাইন করেছে, যার ফলে এখন পিছাই আসলে হাউজ তাঁর নামে মামলা করে দিবে।

যাইহোক, ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে আবিরের সম্মুখীন হওয়ার পর আবির আমাকে বলে, ‘তুমি আমারে এই একটাবার বাঁচায় দাও, আর কিছু চাইনা আমি তোমার কাছে, ভুল হয়ে গেছে একটাবার আমার। আর তুমি কারো সাথে ক্যারিয়ারের কথা ভেবে রুম শেয়ার করছো সেটাতো অন্য কেউ জানবেনা, আর বাকি তোমার লাইফ পার্টনার, সেটাতো আমি, আর আমার যখন কোনো সমস্যা নাই, তখন তোমার কিসের ভয়? আমার কথা ভেবে, তোমার নিজের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে তুমি একটাবার তা করতেই হবে’।

যাইহোক, আবারো পড়ে গেলাম আবেগের অন্ধত্বে। পুরো বিকেল শ্যুট শেষে, রাতের বেলা হাউজের মালিকের শারীরিক চাহিদা মিটিয়ে হোটেল থেকে বের হলে, সে (আবির) আমার জন্য নিচে অপেক্ষা করতো, সারারাত অন্যের চাহিদা মিটিয়ে সকাল বেলা নিছে নামার পর সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতো ‘ভালোবাসি’। ভাবতাম আর বেশিদিন না, কন্ট্রাক্টের ২ মাস ১৫ দিন শেষ হয়ে যাওয়ার পরে এই বীভৎস যন্ত্রণা আর থাকবেনা। ‘আবির আর আমি বিয়ে করে নিজেদের একটা সংসার সাজাবো’ সেই ভেবে ভেবে মনে মনে হাসতাম।

কিন্তু না! আবিরের লোভ যেনো এবার আকাশছোঁয়া। হাউজের কন্ট্রাক্ট শেষ হওয়ার আগেই, একই শর্ত নিয়ে অন্য আরো দুটো জায়গায় আমাকে না জানিয়েই কন্ট্রাক্ট করে ফেললো। ছলে-বলে-কৌশলে আমাকে দিয়ে সেইসব কাজের জন্য রাজি করিয়ে নিতো। একটা সময় নিজেকে সস্তা ‘বেশ্যা’ মনে হতে থাকে। তাওতো পতিতারা শরীর খাটিয়ে তাঁর বিনিময়ে অর্থ টা নিজের হাতে করে নিয়ে আসতে পারে। আমার কিন্তু সেই সুযোগটাও ছিলো না। মডেলিং এর নামে যে বেশ্যাবৃত্তি আমাকে দিয়ে করানো হচ্ছিলো সেই টাকাটাও আসতো আবিরের ব্যাংক একাউন্টে।

একটা সময় তাকে বুঝিয়ে যখন দেখলাম কোনো কাজ হচ্ছেনা, তখন ‘ভালবাসার’ মায়া কাটিয়ে বের হয়ে আসলাম সেখান থেকে। সরে আসলাম তাঁর জীবন থেকে। আসতে গিয়ে জানলাম আরো নতুন কিছু তথ্য যে, আমার পুরো ক্যারিয়ার ধরে করে আসা কাজের পেমেন্ট কোনোটায় আমার না, বরং তাঁর ব্যাংক একাউন্টে আসছে, এমনকি আমার টাকা দিয়ে রাখা ফ্ল্যাট টার কাগজপত্র ঘেটে দেখি সেটাও তাঁর নামে রাখা। যাহোক, আবিরের উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানার আর কিছু বাকি রয়লো না, বেশ ভালো করেই বুঝে গেলাম তাঁর সকল উদ্দেশ্য। দিন শেষে শুণ্য হাতে, কলঙ্কের ছাপ নিয়ে সরে আসলাম শুধুমাত্র সুস্থভাবে বাঁচার জন্য।

তাঁর ‘ভালোবাসার’ জাল থেকে নিজেকে সরিয়ে যখন নতুন করে দাঁড়াতে যাবো, তাঁর আগেই সে শেষবারের মতো দেখা করার কথা বলে ডেকে নিয়ে যায় একটা কফি শপে। ‘টাকা-পয়সা, ফ্ল্যাট কোনোকিছু আমার লাগবেনা, আমাকে জাস্ট একা বাচতে দাও’ এসব বলে তাঁর থেকে সম্পূর্ণভাবে মুক্ত হয়ে যাবো এসমস্ত ভেবে কফি শপে যাওয়ার পর আমার সকল উচ্চাকাংখ্যা নিমিষেই হাহাকারে পরিনত হয়ে গেলো। তাঁর ল্যাপটপ ভর্তি আমার সব নুড ছবি এবং ভিডিও ক্লিপ। এখন পর্যন্ত যে কতোজন ক্লায়েন্টের সাথে রুম শেয়ার করতে হয়েছে, এমনকি তাঁর (আবির) সাথে আমার সকল নুড ছবি এবং ভিডিও যা সে কোনো না কোনো ভাবে লুকিয়ে ধারণ করেছে, সে সমস্ত কিছু তাঁর ল্যাপটপে। মুহুর্তেই যেনো আবির নতুন এক অপরিচিত ভঙ্গিতে আমার সাথে কথা বলতেছে।

সে আমাকে বলতেছে, ‘এতোদিন খুব আদর সোহাগ করে বলেছি তাই পাখনা গজাইছে না? আলাদা হতে চাস? হাহাহা, যা যা দেখলি ল্যাপটপে, তারপরেও কি আমার মুখ দিয়ে কিছু বলতে হবে? না হলেই মঙ্গল। কাল একজন ক্লায়েন্ট আছে, লাল ব্রা এর সাথে সাদা গাউন টা পড়ে চলে আসবি, বাইকে অপেক্ষা করবো আমি। আর কি জানিস বলতো? তুইতো আমার ভালবাসা, আমার জন্য সব পারবি’।

তারপর থেকে ‘ভালোবাসার’ জালে আটকে পড়ে শরীরের চাহিদা মিটিয়ে আসতেছি। কখনো জানোয়ারটার, কখনোবা তাঁর ঠিক করা ক্লায়েন্টের।

বন্দী হয়ে আছি আমি তাঁর ‘ভালবাসা’ নামক জালে। জেল খাটতেছি তাঁর বানানো জেলখানায়।

বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল সিঁথি। আমাদের চারপাশে এমন স্বপ্ন দেখা যেসব নারী দেখতে পাই, যাদের অনেকেই আবার সাবলম্বী। আসলেই কি তারা সাবলম্বী। এই ধরুণ গোমেজের কথায় বলি। আসলেই কি সে স্বাধীন? সে সাবলম্বী? নাকি সুন্দর গড়নের নারীদের জন্মই হয় পণ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য? প্রশ্ন রয়লো আপনাদের কাছে। কিছুই কি করার নেয়? গোমেজের নিজের? আমাদের? সমাজের কিংবা দেশের?

আইনের কাছে সহযোগিতার জন্য গিয়েছেন কিনা জিজ্ঞেস করায় তিনি বলেন, এর মধ্যে অনেকবার তিনি চেষ্টা করেছেন আইনী সহযোগিতা নেয়ার জন্য, তবে আবিরের ক্ষমতার কাছে তিনি বারবার হার মেনেছেন, কখনোবা হতাশ হয়েছেন আইনের দূর্বলতা দেখে। এইটুকু বুঝে গেছেন যে সুবিচার পাবেন না তিনি, বরং সমাজের বুড়ো আংগুলের মুখে পড়বেন বারবার।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন