পিএনএস ডেস্ক: সদ্য বিদায়ী ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম (বর্তমানে তথ্যপ্রতিমন্ত্রী) তাঁর ভেরিফাইড ফেসবুক পেইজে নিয়মিতই সাধারণ মানুষের নানা প্রশ্নের উত্তর দিতেন। ২০১৬ সালের ১৮ এপ্রিল ‘আমিন খান’ নামের এক ভদ্রলোকের কমেন্টসের উত্তরে বলেছিলেন, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই বাংলাদেশে সকলপর্ণসাইট বন্ধ করে দেওয়া হবে।
তারানা হালিমের এ ঘোষণা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এটি নিয়ে সরব হয় গণমাধ্যমও। বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন তাদের এক গবেষণায় জানিয়েছে, রাজধানীর স্কুলগামী ৭৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত।
নিজের এই ঘোষণা বাস্তবায়নে পদক্ষেপও নেন তারানা হালিম। ওই বছর ২৬ ডিসেম্বর ৫৬০টি পর্নো ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয় বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (বিটিআরসি)। তবে ওই সময়ই বিটিআরসির বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছিলেন, যেসব পেইজ দেশের ভেতর জেনারেট হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করা সম্ভব। তবে দেশের বাইরের পর্নসাইটগুলো বাংলাদেশে দেখার পথ পুরোপুরি বন্ধ করা যে কঠিন হবে।
তারা আরো বলেন, তারা বলছেন, কোনও সাইট সরাসরি বন্ধ করে দিলেও প্রক্সি সার্ভারের মাধ্যমে তা ব্যবহার করা যায়। এই প্রক্সি সার্ভার বন্ধ করা খুবই কঠিন কাজ।
এরই প্রেক্ষিতে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম বলেন, বাইরে থেকে জেনারেটেড কন্টেন্ট পুরোপুরি ব্লক করা সম্ভব না হলেও যদি সত্তর ভাগও করা যায়, মানুষ উপকৃত হবে৷ পাশাপাশি তিনি পর্ন সাইটে প্রবেশকারীদের পরিচয় প্রকাশ করা হবে উল্লেখ করে তারানা হালিম বলেছেন, তাই পরিচয় প্রকাশ হওয়ার ভয়ে পর্ন সাইটে প্রবেশে বিরত থাকবে। সমালোচনার মুখে পরে অবশ্য এই বক্তব্য থেকে তিনি সরে আসেন।
সরকারিভাবে পর্নো সাইট বন্ধের উদ্যোগ নেয় সরকার। প্রথমদিকে ৫৬০টি পর্নো সাইট বন্ধের দাবি জানানো হয় সরকারি সংস্থা বিটিআরসির পক্ষ থেকে। দুঃখজনক বিষয় হলো, তারানা হালিম ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালীন অবস্থাতেই পর্নসাইটগুলো ফের দৃশ্যমান হতে থাকে। পর্নো সাইটগুলো বন্ধ করা প্রসঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান শাজাহান মাহমুদের দৃষ্টি আকর্ষ ণ করা হলে তিনি বলেন, পর্নো সাইট বন্ধে আমাদের কিছুই করণীয় নেই। তবে ইন্টারনেট টেকনো পলিশন কোর্ড বসানো বাস্তবায়নের পথে রয়েছি। এই কোর্ড বসানো হলে কিছু সাইট বন্ধ করা সম্ভব। তবে একদম বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে বাচ্চারা কোন ওয়েবসাইটে যেতে পারবে, কোন সাইটে যেতে পারবে না এ দিকটা আমরা চিন্তা করছি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমানে দেশি-বিদেশি সব পর্ন সাইটেই অবাধে প্রবেশ করতে পারছেন দেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। আবারও আপত্তিকর ভিডিও আপলোড করে ব্ল্যাকমেইলিং ফাঁদে ফেলার ঘটনাও ঘটছে। কমবয়সী ছেলেমেয়েরা আবারও পর্ণসাইটে ঝুকতে শুরু করেছে। নৈতিকতার অবক্ষয়ের পুরনো সেই হুমকি ফের আশঙ্কা তৈরি করেছে।
এ বিষয়ে এক দৈনিক কথা বলে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া নতুন মন্ত্রী ও প্রযুক্তিবিদ মোস্তফা জব্বারের সঙ্গে। বন্ধ হওয়া পর্ণ সাইটগুলো ফের খুলে যাওয়া প্রসঙ্গে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, এই পর্নোগ্রাফি সাইটগুলো বন্ধ রাখা অবশ্যই জরুরী। এই উদ্যোগটিকে সবসময় আমি স্বাগত জানিয়ে এসেছি। অবশ্য এখােন কিছু প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতাও আছে। তবে আমি মনে করি, প্রযুক্তিতে সম্ভব নয় বলে কোনো কথা নেই।
মন্ত্রী বলেন, আজকে যেটা সমস্যা মনে হচ্ছে, নিশ্চয়ই কালকে তার সমাধান হবে। ওই সমস্যার পরে নতুন সমস্যা আসলে তারও সমাধান হবে। এজন্য সময় দরকার। বিষয়টি মনিটরিং করে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পর্নসাইট খুলে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলছেন, দেশি ও বিদেশি মোট ৫৬০টি পর্নসাইটের কোনোটাই খুলে দেওয়া হয়নি। প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে অনেকেই এসব সাইটে ঢুকছেন। সেটি রোধ করার প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা চলছে।
সূত্র: দৈনিক নতুন কাগজ
পিএনএস/আলআমীন
লাগামছাড়া পর্ণসাইট, বিটিআরসির দাবি সবই প্রক্সি!
11-01-2018 11:39PM