কেরানীগঞ্জে হিজড়াদের উৎপাত অসহায় সাধারণ মানুষ

  24-03-2018 10:18AM



পিএনএস ডেস্ক: ঢাকার কেরানীগঞ্জে হিজড়াদের উৎপাত ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে যেসব পরিবারের নবজাতক রয়েছে তারা দিশেহারা। কথায় কথায় হিজড়ারা ওই সব বাড়িতে হানা দেয় অর্থের জন্য। শিশুদের জিম্মি করে তারা পরিবারের কাছ থেকে ১০-১৫ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে। না দিলে উলঙ্গ হয়ে উচ্ছৃখল আচরণ করে। প্রতিবাদ করলে তারা ঘরবাড়িতে চড়াও হয়, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে।

সূত্র জানায়, কেরানীগঞ্জে লাখ লাখ মানুষ এখন হিজড়াদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ। এক হিজড়া সিন্ডিকেট পুরো এলাকা জিম্মি করে রেখেছে। তাদের টার্গেট নবজাতক পরিবার। তা ছাড়া ছোট বড় দোকান কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত চাঁদা তোলে তারা। সব শ্রেণীর ব্যবসায়ী হিজড়াদের অবলা ভেবে দশ থেকে বিশ টাকা দিতে কার্পণ্য করেন না। তারপরও এসব হিজড়ার বড় টার্গেট নবজাতক পরিবার। গত ২৫ নভেম্বর মডেল টাউন আবাসিকের এ ব্লকের ২ নম্বর রোডের ৪২ নম্বর বাড়ির ২য় তলার ভাড়াটিয়া সঞ্জয়ের বাসায় নবজাতক আছে এমন তথ্য পেয়ে ৫ জনের একটি দল দুপুরে দরজা ধাক্কাধাক্কি করে। বাসায় গৃহকর্তা না থাকায় দরজা খুলতে রাজি নন গৃহকর্ত্রী। পরে হিজড়া পরিচয় দিলে খুলে দেয় দরজা।

অমনি বাসার ভেতরে ঢুকে ঘুমে থাকা নবজাতক নিয়ে টানাটানি করে ওই পাঁচজন হিজড়া। পরে ১৫ হাজার টাকা দাবি করে তারা। দিতে দেরি হলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয়া ছাড়াও নবজাতককে অভিশাপ দিতে থাকে। পরে ওই বাড়ির দারোয়ান ও অন্যান্য ভাড়াটিয়া এসে বহুবার অনুরোধ করে ৩ হাজার টাকা দিলে চলে যায় হিজড়ারা।

ভুক্তভোগীর স্বামী সঞ্জয় এ প্রতিবেদককে জানান, ঘটনার চার দিন আগে গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ থেকে কেরানীগঞ্জের বাসায় আসি নবজাতককে নিয়ে। গ্রামের হিজড়ারা নাচ গান করলে, তাদের ৫ শ’ টাকা দেয়া হয়। এসব কথা এখানকার হিজড়াদের জানালে ওরা আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়। তাদের দাবিকৃত ১৫ হাজার টাকা না দেয়ায় নগ্ন হয়ে বাসায় ভেতরে ঝামেলা করে। তা ছাড়া বাসায় তিনি না থাকায় হিজড়াদের ভয়ে তটস্থ হয়ে পড়েন তার স্ত্রী। এর আগে গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মডেল টাউন আবাসিকের এক বাসায় হামলা চালায় একটি হিজড়া দল। নবজাতকের পরিবারের কাছে ১৫ হাজার টাকা দাবি করলে, এর প্রতিবাদ করেন বাড়ির মালিক খলিলের ছেলে। পরে তার ওপর চড়াও হয় হিজড়ারা। এক পর্যায়ে মারামারির ঘটনা ঘটে। বাড়িওয়ালার ছেলের মাথা ফাটিয়ে দেয় ওই সব হিজড়া। পরে পুলিশ ও অন্যান্য বাড়িওয়ালা মিলে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন তারা।

এদিকে গত সেপ্টেম্বরে কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদ এলাকার এক বাড়িতে তাণ্ডব চালায় ৫ থেকে ৬ জনের একটি হিজড়া দল। কনটেইনার পোর্ট রোডের মফিজ উদ্দিনের ভাড়াটিয়া কাওসার এ প্রতিবেদককে জানান, চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর তার বাসায় ঢুকে সন্ত্রাসী স্টাইলে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে ৫ জনের একটি হিজড়া দল। পরে এত টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিন হিজড়া নগ্ন হয়। নবজাতক দেখতে আসা স্বজনেরা বাসায় থাকায় মান-ইজ্জতের কথা ভেবে ৫ হাজার টাকা দিলে তারা বকাঝকা শুরু করে। এমনকি নবজাতককে অভিশাপ দেয়।

পরে বাড়িওয়ালা ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় রেহাই পাই। অন্য দিকে, গত ৮ আগস্ট কেরানীগঞ্জ মডেল থানার কাছে কবরস্থান রোডের একটি বাড়িতে হিজড়ারা উৎপাত করতে থাকে। বাড়ির ভাড়াটিয়া আমিন জানান, তার গ্রামের বাড়ি বরিশালের পিরোজপুরে। তার এক আত্মীয় নবজাতককে ডাক্তার দেখাতে ঢাকায় আসেন। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত নবজাতকটি। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার জাহাঙ্গীর আলমকে দেখাতে ঢাকায় তার বাসায় ওঠেন নবজাতকের বাবা-মা। বিকেলে তার বাসায় ৫ থেকে ৬ জনের একটি হিজড়া দল আসে। দরজা ধাক্কাধাক্কি করলে তার ছোট মেয়ে দরজা খুলে দেয়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাসার ভেতরে ঢুকে পড়ে হিজড়ারা। ১০ হাজার টাকা বখশিশ দাবি করে। ডাক্তার দেখাতে আসছে এমন কথা জানানো হলেও টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় উলঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে ওই সব হিজড়া। ঘরে যুবতীদের সামনে এমন করায় লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে যায়। কোনো উপায় না দেখে তিন হাজার টাকা দেই। পরে তারা চলে যায়।

বাংলাদেশ হিজড়া ফাউন্ডেশনের সভাপতি মিতু বলেন, এ দেশে হিজড়ারা অবহেলিত। পরিবারের লোকজন ছাড়াও সমাজের সব শ্রেণী- পেশার মানুষ হিজড়াদের কটাক্ষ করেন। হিজড়াদের জন্য সরকার কোনো ব্যবস্থা করে নাই। এমনকি সংসদেও কোনো কোটা নেই। তাই হিজড়াদের পক্ষে কেউ সাফাই করেন না। তাই হিজড়ারা ভিক্ষা করে পেট চালায়। তবে সন্ত্রাসী কিংবা চাঁদাবাজি এটা আবার অযৌক্তিক। তিনি বলেন, নবজাতক পরিবারকে খুশি করতে হিজড়ারা ঢোল তবলা বাজিয়ে নাচ গান করে। পরে পরিবারের লোকজন খুশি হয়ে সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা কিংবা চাল-ডাল দেয়। তবে ওই সব পরিবারের কাছে কোনো জোরাজুরি করাটা অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেন তিনি। সূত্র: নয়া দিগন্ত

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন