ডিজে পার্টিতে পরিচয়, প্রেম, শেষে হবু শ্বশুরকে খুন

  19-04-2018 11:24AM

পিএনএস ডেস্ক:মোবাইল ফোন সেট মেরামত করতে গিয়ে কনিকার সঙ্গে সৈকতের পরিচয়। আলাপ প্রসঙ্গে সৈকত জানতে পারেন কনিকা ডিজে পার্টিতে নাচ করেন। কনিকা তাকে ডিজে পার্টিতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানান। এর এক সপ্তাহ পরে সৈকত ডিজে পার্টিতে গেলে কনিকার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়। এরপর থেকে তাদের মধ্যে গভীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এভাবে বছরখানেক প্রেম করার পর কনিকা জানতে পারেন যে সৈকত বিবাহিত। একদিন এক দুপুরে কনিকা হাজির হন সৈকতের বাড়িতে। সৈকতের বাবা শাহ আলমের পা ছুঁয়ে সালাম করেন। শাহ আলম একটি জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। ছেলেকে ২০১১ সালে বিয়ে দেন। সৈকতের স্ত্রীর নাম নিতু। তাদের ঘরে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। এসব তথ্য জানার পর কনিকার মন ভেঙ্গে যায়। সৈকতকে বারবার চাপ দিতে থাকেন। ডিভোর্স দিয়ে তাকে বিয়ে করতে হবে।

এ খবর শুনে শাহ আলম ছেলেকে রক্ষা করার জন্য সৌদি আরব পাঠানোর ব্যবস্থা করতে থাকেন। গত মাসে চার লাখ টাকা খরচ করে সৈকতকে সৌদি আরব পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে সৌদি আরব যাওয়ার কথা সৈকতের। এ খবর শুনে কনিকা তার প্রেমের পথের কাঁটা হিসাবে শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করেন। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ি তার আরো তিন বন্ধুর সহযোগিতায় শাহ আলমকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। লাশ লাগেজে ভরে একটি সিএনজি অটোরিকশায় করে নিয়ে যায় নিরাপদ কোন স্থানে ফেলে দেওয়ার জন্য। সবুজবাগ থানাধীন বনশ্রীর পেছনে পূব মাদারটেক প্রজেক্টের রাস্তায় সিএনজি থামিয়ে লাগেজ রেখে পালিয়ে যান কনিকা। এরপরই সবুজবাগ থানা পুলিশ ও ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ তদন্ত করে এ হত্যার কুল কিনারা বের করে।

খিলগাঁও ঈদগাহ জামে মসজিদের সামনের একটি বাড়িতে শাহ আলম সপরিবারের ভাড়া থাকতেন। সৈকত খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের একটি দোকানে মোবাইল ফোন মেকানিক হিসাবে কাজ করেন।

সবুজবাগ থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস ফকির বলেন, গত ৮ এপ্রিল পূর্ব মাদারটেক এলাকায় একটি অটোরিকশায় থাকা লাগেজ থেকে শাহ আলমের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে নিহতের পরিচয় না পেয়ে পুলিশ বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পরদিন স্বজনরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, শাহ আলমকে হত্যার আগে গোড়ানের ৩১ নম্বর টিন শেডের বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। ওই টিনশেড বাসায় কনিকা তার দাদী ও তিন ভাইবোনের সঙ্গে থাকেন। ঘটনার দিন রাতে কনিকা তার দূর সম্পর্কের দুলাভাই মনির ওরফে আলমগীরসহ দুজনকে ডেকে নেন ওই বাড়িতে। তারা তিনজন মিলে শাহ আলমকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ লাগেজে ভরে। এরপর সেই লাশ গুম করার জন্য কনিকা নিজেই একটি অটোরিকশা ঠিক করে রওনা হন। পথিমধ্যে লাগেজ রেখে পালিয়ে যান কনিকা।

ডিবি কর্মকর্তারা আরো জানান, কনিকা লাশ ফেলে আসার পর বাসায় না ফিরে খিলগাঁও এলাকার তার বান্ধবী মিথির বাসায় যান। ওই রাত মিথিদের বাসায় থাকার পর ভোরে সেখান থেকে বের হন। কাউকে কিছু না বলেই চলে যান যশোরের বেনাপোলে। বেনাপোলে পৌঁছেই নতুন একটি মোবাইল ফোন নম্বর থেকে বান্ধবী মিথিকে ফোন করেন কনিকা। পরে পুলিশ সন্দেহবশত মিথিকে আটক জিজ্ঞাসাবাদ করে। তার মোবাইল ফোনের কল লিস্টের সূত্র ধরে বেনাপোল থেকে কনিকাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপরই কনিকার বোন হীরা, ভাই অনিক ও তার ফুপু কুলসুমকে গোড়ানের বাসা থেকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় শাহ আলমের ছেলে সৈকতকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ।

সবুজবাগ থানা পুলিশ জানায়, কনিকা খিলগাঁও মডেল কলেজের অনার্সের শিক্ষার্থী। ঘটনা চক্রে কনিকার সহপাঠী হলেন সৈকতের ছোট বোন নাসরিন জাহান মলি। বিভিন্ন ডিজে পার্টিতে নাচ করে বেড়াতেন কনিকা।

নিহত শাহ আলমের মেয়ে নাসরিন জাহান মলি বলেন, কনিকা তার সহপাঠী। কিন্তু তার সঙ্গে বড় ভাইয়ের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি প্রথম দিকে জানতাম না।

সূত্রঃ ইত্তেফাক

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন