নির্যাতন প্রসঙ্গে যা বললেন ‘রগ কাটা’ মোর্শেদা

  22-04-2018 04:01PM

পিএনএস ডেস্ক:বেশ কিছুদিন আড়ালে থাকার পর অবশেষে মুখ খুলেছেন কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে যার ‘রগ কাটা’র গুজব উঠেছিল, সেই ছাত্রী মোর্শেদা খানম।

গত বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে গণমাধ্যমের কাছে মুখ খোলেন তিনি। সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে মোর্শেদা বলেন, ‘আমার রগ কাটেনি। রগ কাটার কোনও ঘটনাও ঘটেনি। জানালার কাঁচে লাথি মারতে গিয়ে আমার পা কেটে গিয়েছিল। কিন্তু কেউ কেউ এটাকে রগ কাটা বলে ছড়িয়ে দেয়।’

তিনি বলেন,‘আমরা একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলাম। এই প্রতিবাদ আওয়ামী লীগ বা ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে ছিল না। প্রতিবাদটা ছিল ইফফাত জাহান এশার বিরুদ্ধে। তিনি আগেও ছাত্রীদের নির্যাতন করেছেন। আমরা যারা পলিটিক্যাল মেয়ে কিন্তু কোটা আন্দোলনে যাই, তারা কথা বলছিলাম যে, হলগুলোতে শিক্ষার্থীদের নির্যাতন করা হচ্ছে। ওই দিন রাতেও তেমনটাই ঘটেছিল। রাত ১২টার দিকে একটা মেয়ে হঠাৎ খুব জোরে চিৎকার করে ওঠে। উনার (এশা) রুমটা আমাদের ওপরে। আমরা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছি। হলের সবাই শুনেছেন।’

মোর্শেদা বলেন, ‘‘চিৎকার শুনে আমরা সবাই রুম থেকে বের হয়ে ব্যাপারটা কী, তা জানার জন্য যাই। এশা আপুর রুমের সামনে দেখি হলের সব মেয়ে চলে এসেছে। সবাই আপুর (এশা) রুমের দিকে যাচ্ছে। আমরাই পরে গিয়েছি। কারণ, আমরা তো পলিটিক্সের সঙ্গে ইনভলব। আমাদের যাওয়াটা কি ঠিক হবে— এটা চিন্তা করে পরে গিয়েছি। তো গিয়ে দেখি, মেয়েরা আপুর রুমের দরজা ধাক্কাধাক্কি করছে। আপু ভেতর থেকে রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছেন। বাইরে থেকে দরজা খোলার চেষ্টা হচ্ছে। মেয়েরা সবাই অনেক অতিষ্ঠ ছিল। তারা বাইরে থেকে দরজায় আঘাত করে, তার (এশার) বের হয়ে আসার জন্য। কিন্তু আপু কিছুতেই বের হচ্ছিলেন না। তিনি উল্টো বলেছেন, ‘আমি কিছু করিনি। এখানে তেলাপোকা।’ তখন সবাই আবারও দরজায় এবং জানালাতে আঘাত করে। আমার মাথাটা খারাপ হয়ে যায়। চোখের সামনে দেখেছি, এর আগেও দুদিন আমাদের সামনেই অনেকগুলো মেয়েকে মেরেছেন। অডিও রেকর্ড বের হয়েছে, গালিগালাজ করছেন। ওইদিন গেস্টরুমে আমরাও ছিলাম।’’

তিনি বলেন, ‘জানালাটা আগে থেকেই ভাঙা ছিল। জানালায় আগেই অনেকে লাথি মেরেছে। কিন্তু এক্সিডেন্টালি আমি যখন আঘাত করেছি (জানালায়), তখন আমার পা-টা কীভাবে যেন কেটে গেছে। এক্সিডেন্টালি হয়েছে এটা। তারপর রক্ত দেখে কাউকে কিছু বলিনি। জানালায় লাথিতো আমি দিয়েছি, আমি কাকে কী বলবো? আমি নিচে নেমে আসি। তখন ওখানে অনেক মেয়ে ছিল। অনেকেই আমাকে বলেছে যে, ‘আপনি বলেন— কী হয়েছে?’ আমি কিন্তু কখনও বলিনি যে, আমার রগ কেটে দিয়েছে। ভিডিওতে দেখবেন, সেখানেও কিন্তু আমি বলিনি যে, আমার রগ কেটে দিয়েছে। ওখানে অনেকে ছিল। তখন কে কী বলেছে, আমি তো জানি না। আমার অবস্থাও তখন অতটা ভালো ছিল না।’

আন্দোলনে যাওয়ার কারণে হল সভাপতি এশা একছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে, রাতেই এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এ কারণে মধ্যরাতে আবারও রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। তারা এশাকে জুতার মালা গলায় দিয়ে লাঞ্ছিতও করেন। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করা হয় এশাকে। আর পরদিন তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু রগ কাটার খবরটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এবং এশাকে জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছনা করায় ছাত্রলীগের সাবেক নেতাকর্মীরা এর প্রতিবাদ করেন। ঘটনার দুদিনের মাথায় নিজেদের তদন্ত কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও নিজেদের তদন্তের ভিত্তিতে এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে। পরবর্তীতে যে ছাত্রীর পায়ের রগ কাটার গুজব উঠেছিল, সেই মোর্শেদাসহ ২৪ জনকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বুধবার (১৮ এপ্রিল) বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা কমিটির একসভায় এশাকে হেনস্তার অভিযোগে ২৬ শিক্ষার্থীকে কারণ দর্শানোর (শোকজ) চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

মোর্শেদা বলেন, ‘আমাকে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমি এখন একটু অসুস্থ। ফলে এসব কিছু ভাবছি না। ছাত্রলীগ করেছি ঠিক আছে, কিন্তু এখনতো আমার স্টুডেন্টশিপ-ই হুমকির মুখে। যদিও এটা নিয়ে ক্লিয়ারকাট কোনও কিছু বলে নাই। কিন্তু অনেক কিছু হচ্ছে। আমি একটু ভয় পাচ্ছি। আমার শঙ্কা হচ্ছে— আমরা যারা ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, তারা সবাই মিডল ক্লাসের ছেলেমেয়ে। আমরা চিন্তাই করতে পারিনি যে, একটা অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়ে আমাদের সঙ্গে এমনটা হবে। আমরাতো বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকেই অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে শিখেছি। আমরা কোনও অন্যায় করি নাই। আমাদের সঙ্গে এটা কেন হবে? এখনও কিছু বলতে পারছি না। যদি সবকিছু ঠিকঠাক থাকে, তারা যদি বিষয়টা বুঝতে পারেন, তাহলে (বহিষ্কার) করাটা লজিক্যালি হবে না।’

এশার সঙ্গে কোনও দ্বন্দ আছে কি না জানতে চাইলে মোর্শেদা বলেন, ‘তার (এশা) সঙ্গে কখনও আমার রিলেশন খারাপ ছিল না। তিনি আমাকে কখনও খারাপ চোখে দেখতেনও না। কিন্তু কথাটা তো খারাপ চোখে দেখার বিষয় না। আমার সামনে তিনি অন্য মেয়েদের সঙ্গে অন্যায় করেছেন, আমার সঙ্গে না করুক। আমি এর প্রতিবাদ করেছিলাম। তিনি (এশা) যে নির্যাতন করতেন, সেটা আগেও নিউজ হয়েছে। তিনি আগেও মেয়েদের হল থেকে বের করে দিতেন।’

মোর্শেদা বলেন, ‘পুরো বিষয়টি নিয়ে অবশ্যই সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। তদন্ত না করে তো একজন স্টুডেন্টকে বহিষ্কার করা উচিত না। একজনকে বহিষ্কার করা মানে, একজনের লাইফ নিয়ে কথা বলা। আমরা ফোর্থ ইয়ারের স্টুডেন্ট। শিক্ষাজীবন শেষের দিকে। আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্ত হোক।’

উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যাওয়ার কারণে কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রলীগ সভাপতি এশা একছাত্রীর পায়ের রগ কেটে দিয়েছে এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথেই আবারও রাস্তায় নেমে আসেন শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক বহিষ্কার করা হয় এশাকে। পরদিন বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও বহিষ্কার করে ঢাবি কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু রগ কাটার খবরটি মিথ্যা প্রমাণিত হওয়ায় এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেয় ছাত্রলীগ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও নিজেদের তদন্তের ভিত্তিতে এশার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন