আন্দোলনকারীকে ছাত্রলীগ নেতার হুমকি: ‘তোদের কুকুরের মতো রাস্তায় গুলি করে মারব’

  16-05-2018 11:07AM

পিএনএস ডেস্ক: কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নূরু এবং যুগ্ন-আহ্বায়ক রাশেদ খানকে পিস্তল দেখিয়ে হত্যার হুমকি দিয়েছেন ছাত্রলীগ নেতারা। মঙ্গলবার (১৬ মে) দিবাগত রাত দেড়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হলের ১১৯ নম্বর রুমে এই ঘটনা ঘটে।

এ সময় পিস্তল নিয়ে রুমে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি। তার সাথে ছিলেন মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী, চারুকলা অনুষদ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম লিমন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, রাত দেড়টার দিকে মহসীন হলের ওই রুমে ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি, মেহেদী হাসান সানী ও ফাহিম লিমনের নেতৃত্বে ১৫/২০ জন নেতাকর্মী আসেন। এই সময় নুরুল হক নূরের রুমে ছিলেন রাশেদ। হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি তাদের হুমকি দিতে থাকেন। এ সময় তার পকেটে পিস্তল দেখা যায়।

সরাসরি মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে বাপ্পি বলেন, 'এই আন্দোলন করছিস তোরা সরকারের বিরুদ্ধে। তোদের একটাকেও ছাড়া হবে না। প্রজ্ঞাপনটা জারি হলে তোদের কুত্তার মতো পিটানো হবে। কুকুরের মতো গুলি করে রাস্তায় মারা হবে। তোরা তো কেউ বাঁচবি না। বেশি বাড়াবাড়ি করিস না। শেষবারের মতো মা-বাবার দোয়া নিয়ে নিস। শুধু প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। তোদের কী অবস্থা করি।'

এই সময় মেহেদী হাসান সানী ও ফাহিম লিমন তাদের ওপর হামলা করার জন্য বারবার সামনে আসে। কিন্তু অন্যরা তাদের নিবৃত্ত করেন বলে জানা যায়।

জানতে চাইলে নুরুল হক নূরু বলেন, 'আমি ও রাশেদ আমার রুমে ছিলাম। এর মধ্যে চারুকলা অনুষদের ছাত্রলীগের সেক্রেটারি লিমন ফোন দিয়ে থ্রেট দেয় যে, হল থেকে নামিয়ে দেওয়া হবে। পিটাইয়া নামাইয়া দেওয়া হবে। আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বাপ্পি ফোন নিয়ে বলেন, ছাত্রদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে মারছি। তোদের মতো পোলাপানকে খেয়ে দিতে দুই সেকেন্ডও লাগবে না। তোগোরে গুলি কইরা মারি নাই শুধু কিছু সিনিয়রের নিষেধ ছিল। তা না হলে তোদের মতো কুলাঙ্গারদের রাখতাম না এই দেশে। শুধু কিছু সিনিয়রদের নিষেধ থাকার কারণে তোরা বেঁচে গেছস। তবে তোরা বাঁচবি না। কিছু দিন পর প্রজ্ঞাপনটা জারি হোক। দেখি তোদের কোন বাপ ঠেকায়।'

তিনি আরও বলেন, ‘এর ১০ মিনিট পরে রুমে পিস্তল নিয়ে এসে তারা বলে, তোরা মা-বাবা থেকে দোয়া নিয়ে নে। তোরা বাঁচবি না। তোদের গুলি করে মারব। আমাকে মারতেও আসে। তারা আমার মোবাইলও নিয়ে যায়, যাতে আমি রেকর্ড করতে না পারি। আমরা এখন জীবননাশের হুমকির মুখে আছি।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, 'এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। ও আমার পাশের রুমে থাকে। আমার এক ছোট ভাইয়ের আইডি হ্যাক করে বিভিন্ন গ্রুপে দেয়। পরে তার সাথে এই বিষয়ে বাকবিতণ্ডা হয়। আমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা। শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক। আমি তাকে বলেছি, আন্দোলন করতেছস ঠিক আছে। অন্য কোনো ঝামেলায় জড়াবি না।'

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মহসীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানী বলেন, 'তাকে কিছু করা হয়নি। সে ইস্যু বানাচ্ছে।'

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী বলেন, 'আমাকে কেউ অফিশিয়ালি অভিযোগ করেনি। কেউ অভিযোগ করলে দেখব।'

সূত্র: পরিবর্তন

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন