মাদকের বিস্তার রোধে আন্তরিক হলে ঘর থেকে শুরু করতে হবে

  23-05-2018 04:48PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : মাদকের ভয়াল থাবায় যুবসমাজ ধ্বংস হচ্ছে। ভবিষ্যৎ নাগরিকরা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়ায় অভিভাবকসহ সচেতন জনগোষ্ঠীর মধ্যে আশঙ্কা বিরাজ করছে। তারা উঠতি যুবসমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

রাজধানী ঢাকা থেকে অজপাড়াগাঁ- সর্বত্র মাদকের ছড়াছড়ি। এগুলোর নিজের হাত-পা না থাকলেও অবাধ বিচরণ ভীতির সৃষ্টি করছে সচেতন মহলে। স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে শ্রমিক এমনকি বস্তির শিশুরাও মাদকের নেশায় মত্ত।

মাদকের আধিক্য এবং অবাধ বিস্তারে প্রায় সব মহল সোচ্চার হয়। প্রতিবাদ ওঠে। অনেক প্রতিষ্ঠান এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। মাদকসেবীদের অত্যাচারে মা-বাবা ও স্বজনরা অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। এমনকি রাজধানীতে মাদকাসক্ত মেয়ের হাতে খুন হন এক পুলিশ কর্মকর্তা।

মিডিয়ায় প্রায়ই খবর আসে, মাদকাসক্ত সন্তানকে বাবা পুলিশে সোপর্দ করেছেন। সন্তানকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দেয়ার নজির সৃষ্টি করেছেন অতিষ্ঠ মাও। এ রকম ভূরি ভূরি উদাহরণ রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের সচেতন অভিভাবকরা রেখেছেন।

মাদকের নেশায় একবার যে আক্রান্ত হয়, সে সহজে ফিরে আসতে পারে না। মাদকের টাকা জোগাতে তারা প্রথমে নিজ গৃহে নানা অপকর্ম শুরু করে। ঘরে ব্যর্থ হলে অন্যত্র হাত বাড়ায়। ক্রমে অস্ত্র হাতে ছিনতাই-চাঁদাবাজিসহ ভয়াবহ অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।

আশার কথা, ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে এ উদ্যোগে আশাবাদী হওয়ার চেয়ে নৈরাশ্য বেশি কাজ করছে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকারে বিশ্বাসীদের। তারা মনে করে- কাজটা যেভাবে হলে সহজে সুফল মিলত, সেভাবে হচ্ছে না।

তাদের মতে, এ ব্যাপারে আন্তরিক হলে শুরুতেই বহন ও বিতরণকারীদের শায়েস্তা না করে, তাদের দিয়ে রুই-কাতলাদের চিহ্নিত করা জরুরি। বন্দুকযুদ্ধে এরা মারা পড়লে পর্দার আড়ালে থাকা মূল অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। অনেকের মতে, এটা করা হচ্ছে নাকি সস্তা বাহবা নেয়া আর রুই-কাতলাদের নিরাপদে রাখার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে।

অভিজ্ঞ মহল ও অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, আগে মার্কামারা সমাজের বড় দু-চারটাকে শায়েস্তা করলে এমনিতেই ছোটদের খবর হয়ে যেত। তারা ভাবত, এত বড় মাপের ব্যক্তি যখন ছাড় পায়নি- তখন আমি বা আমরা কোন স্যার। কিন্তু চুনুপুঁটির সঙ্গে যা করা হচ্ছে, সেটা হালে পানি পাবে বলে তারা মনে করছেন না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের অনেকের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের মামলা আছে। আর সহজ কথায় এসব যারা করে, তারা ক্ষমতাসীনদের বাইরের কেউ নয়। আর এর বেশির ভাগই জনপ্রতিনিধি নামের আড়ালে মাদক সম্রাট। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চলের লোক একই।

দুঃখজনক হলেও সত্য, শিক্ষার্থীরা মাদকে শুধু নেশাগ্রস্ত হয়নি- ব্যবসায়ও হাত পাকিয়েছে। চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার অধিকাংশ জনপ্রতিনিধি এর সঙ্গে যুক্ত। এমনকি চাঁদপুর শহরে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সন্তানরা নাকি এ কাজে এগিয়ে।

মাদক নির্মূলে এবং যুবসমাজকে মাদকমুক্ত রাখতে সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা সময়ের দাবি। তবে সেটা শুরু করতে হবে সমাজের উপরতলা থেকে। নিজে দলের লোক দিয়ে। তাহলে আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অধঃপতন রোধে মাদকের ছড়াছড়ি বন্ধে সীমান্ত থেকে শুরু করে সর্বত্র নজরদারি বাড়ানো জরুরি।

লেখক : বার্তা সম্পাদক- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন