৮ জেলায় কথিত বন্দুকযুদ্ধে ৯ মাদক ব্যবসায়ী নিহত

  25-05-2018 11:04AM

পিএনএস ডেস্ক : দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানে ৮ জেলায় বন্দুকযুদ্ধে ৯ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে আজ শুক্রবার ভোর পর্যন্ত ঢাকা, ঝিনাইদহ, কক্সবাজার, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ, নেত্রকোনা, সাতক্ষীরা, শেরপুর ও গাইবান্ধা জেলায় এসব ‘বন্দুকযুদ্ধে’র ঘটনা ঘটে।

ঢাকা
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে কামরুল ইসলাম নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার বিজি প্রেস হাইস্কুল মাঠ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

র‌্যাব জানায়, ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র-গুলি ও বিপুল পরিমাণ ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া দুই পক্ষের গুলি বিনিময়কালে র‌্যাবের দুই সদস্য আহত হয়েছেন।

এদিকে র‍্যাবের দাবি, নিহত কামরুল তেজগাঁও রেল লাইন বস্তি এবং মহাখালী সাততলা বস্তি এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে বিভিন্ন থানায় ১৫টির বেশি মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র মামলা রয়েছে।

এ ব্যাপারে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার (এসআই) মো. মিজানুর রহমান গণমাধ্যমেক জানান, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় কামরুল ইসলামকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে এলে রাত পৌনে ২টার দিকে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

কুমিল্লা
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী কামাল হোসেন ওরফে ফেনসি কামাল নিহত হয়েছেন। এ সময় তার দুই সহযোগীকে আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ১২টায় এ ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ঘটনা ঘটে।

নিহত মাদক ব্যবসায়ী কামাল হোসেন কুমিল্লা সদর উপজেলার রাজমঙ্গলপুর গ্রামের মৃত হিরন মিয়ার পুত্র। তার বিরুদ্ধে ১২টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

‘বন্দুকযুদ্ধে’ ফেনসি কামাল নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) তানভীর সালেহীন ইমন। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কুমিল্লা জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও বুড়িচং থানা পুলিশের যৌথ অভিযানকালে রাত ১২টার দিকে কুমিল্লা-বুড়িচং সড়কের মহেশপুরে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে মাদক ব্যবসায়ী ফেনসি কামালকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে কুমেক হাসাপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

তানভীর সালেহীন ইমন বলেন, বন্দুকযুদ্ধের সময় কামালের সহযোগী মাদক ব্যবসায়ী সদর উপজেলার ছাওয়ালপুর গ্রামের মফিজ মিয়ার পুত্র হানিফ মিয়া ও চান্দিনার কোরপাই গ্রামের মোখলেছুর রহমানের পুত্র ইলিয়াছকে (২৮) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১টি পাইপগান, ১ রাউন্ড কার্তুজ ও ৫০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়েছে।

বন্দুকযুদ্ধে পুলিশ সদস্যরা ৩৪ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সময় ডিবি পুলিশের এসআই নন্দন চন্দ্র সরকার, এএসআই সাহাবুল হোসেন ও কনস্টেবল সুমন মিয়া আহত হন।

কক্সবাজার
কক্সবাজারের মহেশখালীতে বন্দুকযুদ্ধে একজন ইয়াবা কারবারি নিহত হয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, মহেশখালী দ্বীপের বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মুন্সির ডেইল নামক স্থানে মোস্তাক আহমদ (৩০) নামের একজন ইয়াবা কারবারি বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আফরুজুল হক টুটুল জানিয়েছেন, দুইদল ইয়াবা কারবারিদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে সেখানে পুলিশ গিয়ে মোস্তাকের লাশ উদ্ধার করে।

ময়মনসিংহ
ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে রাজন নামের একজন নিহত হয়েছেন। পুলিশের দাবি, নিহত রাজন এলাকার শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় আট থেকে নয়টি মাদকদ্রব্য মামলা রয়েছে।

পুলিশ আরো জানায়, বন্দুকযুদ্ধে দুই পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন। এছাড়া ঘটনাস্থলে থেকে ৪০০ পিস ইয়াবা, একটি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়।

ডিবির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে নগরীর পুরোহিত পাড়া রেলওয়ে কলোনি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় মাদক ভাগাভাগি নিয়ে দুই গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে ইউনুস আলী দালাল (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ওয়ান শ্যুটার গান, ২ রাউন্ড গুলি ও ৭০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর গ্রামে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।

নিহত ইউনুস আলী দালাল উপজেলার দক্ষিণ ভাদিয়ালি গ্রামের আব্দুল্লাহ দালালের ছেলে।

কলারোয়া থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথ জানান, দিবাগত রাত দুইটার দিকে সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুর-বড়ালি পাকা রাস্তার পাশে সীমান্ত এলাকায় দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে বলে তারা খবর পান। তাৎক্ষণিক পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানে ৫ রাউন্ড ফাঁকা শর্টগানের গুলি ছোড়ে। এতে দুইপক্ষই ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পরে বিলের মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইউনুসকে পাওয়া যায়। এরপর তাকে দ্রুত উদ্ধার করে কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক শফিকুল ইসলাম তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ একটি ওয়ান শ্যুটার গান, দুই রাউন্ড গুলি ও ৭০ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল উদ্ধার করে।

তিনি আরও জানান, নিহত ইউনুস আলী দালাল একজন শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে। নিহতের লাশ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।

নেত্রকোনা
নেত্রকোনা সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন তিন পুলিশ সদস্য। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নের মনাং গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

এ ব্যাপারে নেত্রকোনা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সদর সার্কেল মোঃ ফখরুজ্জামান জুয়েল গণমাধ্যমকে জানান, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পুলিশের মাদকবিরোধী অভিযানে মনাং গ্রামে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়। তাদেরকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তবে নিহতদের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

তিনি আরো জানান, এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্যও আহত হন। অভিযানে আধা কেজি হেরোইন, ৩ হাজারের অধিক ইয়াবা ও দুটি পাইপগান উদ্ধার করা হয়।

ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শামীম সরদার (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এ সময় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাতে কালীগঞ্জ উপজেলার আড়পাড়া নামক স্থানে পুলিশের সঙ্গে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল থেকে ১টি পিস্তল, ২ রাউন্ড গুলি ও বেশ কিছু ইয়াবা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত মাদক ব্যবসায়ী শামীম আড়পাড়া গ্রামের মমিন সরদারের ছেলে।

কালীগঞ্জ থানার ওসি মিজানুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আড়পাড়া এলাকায় পুলিশ মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে মাদক ব্যবসায়ীরা গুলি ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়, শুরু হয় উভয়ের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধ। এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় শামীম সরদার নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

তিনি আরো জানান, নিহত শামীমের বিরুদ্ধে কালীগঞ্জ থানায় ৯টি মাদক মামলা রয়েছে। সে উপজেলার অন্যতম শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী।

গাইবান্ধা
গাইবান্ধার ফুলছড়িতে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জুয়েল মিয়া (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। আজ শুক্রবার ভোর রাতে উপজেলার পুলবন্দি ফলিয়া ব্রিজ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নিহত জুয়েল মিয়া সদর উপজেলার ব্রিজ রোড মিস্ত্রি পাড়া এলাকার মৃত নছিম উদ্দিনের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, জুয়েল মিয়া তার এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে আনুমানিক ৪/৫ টি মাদক মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

পুলিশ সুপার (এসপি) প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়া বন্দুকযুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ী নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

পিএনএস/জে এ /মোহন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন