চার বছর পরে রোগীর পেট থেকে বের করা হলো গজ

  25-05-2018 08:35PM

পিএনএস, কিশোরগঞ্জ : সিজারিয়ান অপারেশনের পরও পেটে অবর্ণনীয় জ্বালা-যন্ত্রণা থাকায় চার দফা অস্ত্রোপচার শেষে চার বছরের মাথায় এক প্রসূতি মায়ের পেট থেকে উদ্ধার করা হলো গজের পুঁটলি।

এ ঘটনায় কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের অবহেলা ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ঘটনার বিচার ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে ভুক্তভোগী প্রসূতি মায়ের পরিবার।

এ গুরুতর অভিযোগ পেয়ে ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান।

গত ২৪ মে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. মোল্লা নজরুল ইসলাম, কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. শশাঙ্ক কুমার সূত্রধর, ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান ও বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার শায়লা জাহান।

গত ২০ মে কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন বরাবরে দাখিলকৃত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৯ জুন কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জেলার কটিয়াদী উপজেলার চান্দপুর ইউনিয়নের গোয়ালিয়া পাড়ার সৌদিপ্রবাসী পণ্ডিত মিয়ার স্ত্রী সালমা আক্তারের (৩০) সিজারিয়ান অপারেশনে এক পুত্রসন্তানের জন্ম হয়।

অপারেশন করেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. লায়লা নূর। কিন্তু সিজারিয়ান অপারেশনের পরও ওই সালমার পেটে অবর্ণনীয় জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে যায়।

পেটের এ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে সালমা বারবার ফিরে যান বাজিতপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে।

২০১৬ সালের ১৬ জুন রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সহযোগী অধ্যাপক ডা. কেএবিএম তাইফুল আলম ও সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহীনুর রহমান দ্বিতীয়বার অপারেশন করেন। এ অপারেশনেও সারেনি সালমার পেটের যন্ত্রণা।

তিনি বয়ে বেড়াচ্ছিলেন এ দুঃসহ যন্ত্রণার বোঝা। এরই মধ্যে সিজারিয়ান অপারেশনে জন্ম নেয়া শিশুপুত্র প্রদীপ যখন চার বছরে পা দেয়।

অবশেষে সালমা আক্তার পেটের এই ব্যথা আর সইতে না পেরে আবারও চলতি বছরের গত ২ মে ওই মেডিকেল কলেজে যান। তখন তাকে পাইলসের সমস্যার কথা বলে তৃতীয়বারের মতো অস্ত্রোপচার করেন অধ্যাপক ডা. সর্দার মো. রেজাউল ইসলাম।

তার পরও হতভাগ্য সালমা পেটের অসহ্য যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাচ্ছিলেন না। তৃতীয় অস্ত্রোপচারের ৯ দিনের মাথায় ১১ মে আবারও ওই মেডিকেলের সার্জন অধ্যাপক এস.এম.আর ইসলামের শরণাপন্ন হলে তিনিও সমস্যা সারানোর কথা বলে তাকে নিয়ে গেলেন অপারেশন টেবিলে।

এবার চতুর্থবারের অপারেশনে সালমা আক্তারের পেট থেকে সিজারিয়ান অপারেশনের সময়ের গজের পট্টির পুঁটলি বের করে আনলেন এই সার্জন।

দ্বিতীয় ও তৃতীয়বার চিকিৎসকদের ভুল সিন্ধান্ত ও অস্ত্রোপচারে শরীরের ওপর নিদারুণ ধকল চলার পাশাপাশি অকারণে লাখ লাখ টাকা গুনতে হয় সালমার পরিবারকে।

শেষ পর্যন্ত চতুর্থবারের সফল এ অস্ত্রোপচারে হতভাগ্য প্রসূতি মা সালমা আক্তারের ভাগ্যে জুটে প্রশান্তির ছোঁয়া।

এ ব্যাপারে কথা বলতে জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. বাহাউদ্দিন ভূঁইয়াকে মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

শেষ পর্যন্ত জেনারেল ম্যানেজার মো. শামছুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান এ ধরনের অভিযোগ ও তদন্ত কমিটি গঠনের সত্যতা স্বীকার করেন।

তিনি আরো জানান, ডাক্তারদের ব্যক্তিগত ভুল কিংবা গাফিলতির দায়ভার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নেবে কেন?

এ সময় এ ধরনের কোনো ঘটনা তিনি কখনও বরদাশত করেননি বলেও জানান মেডিকেলের ওই জেনারেল ম্যানেজার।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী প্রসূতি মা সালমা আক্তারের মেয়ের স্বামী রাহাত খানের বাবা এমাদ উদ্দিন খানের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আর এ কমিটিকে আগামী ১০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

তদন্তে গাফিলতি, অবহেলা কিংবা কোনো অনিয়মের প্রমাণ মিললে, অভিযুক্তদের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতরকে চিঠি দেবেন বলেও জানান তিনি।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন