আলোচিত তুফান সরকারের ভাই ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত, গোটা পরিবারে মাদকের কারবার!

  13-07-2018 05:02PM

পিএনএস ডেস্ক : বগুড়া শহরের চক সূত্রাপুর চামড়া গুদাম লেনের মজিবর রহমানের সাত ছেলে। এঁদের মধ্যে এক ছেলে পুতু সরকার। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মাদকবিরোধী অভিযানে মারা যান তিনি। পুতু সরকারসহ মজিবর রহমানের গোটা পরিবারই মাদক কারবারে জড়িত বলে দাবি করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পুতু সরকারের নাম রয়েছে পুলিশ, র‍্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরসহ একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায়। পুতু সরকারের বড় ভাই বগুড়া শহর যুবলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সম্পাদক আবদুল মতিন সরকারও মাদকদ্রব্যসহ র‍্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন। ২০১৫ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের হালনাগাদ তালিকায় পুতু সরকারের অন্য পাঁচ ভাইয়ের নাম রয়েছে।

এঁদের মধ্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও গোয়েন্দা তালিকায় বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের বহিষ্কৃত আহ্বায়ক এবং ছাত্রী ধর্ষণ ও মা-মেয়েকে নির্যাতন মামলার প্রধান আসামি তুফান সরকারের নাম রয়েছে। অন্যদের মধ্যে সোহাগ সরকার, ঝুমুর সরকার, ওমর সরকার ও জাহাঙ্গীর সরকারের নাম রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায়।

তুফান সরকার ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় প্রায় এক বছর ধরে কারাগারে আছেন। তবে মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন বড় ভাই মতিন সরকার। ছাত্রী ধর্ষণ ঘটনার পর গত বছরের আগস্ট মাসে তুফান সরকার ও তাঁর বড় ভাই মতিন সরকারকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তুফানকে ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল ইয়াবা, ফেনসিডিলসহ গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। পরে তিনি জামিনে বেরিয়ে যান। একই বছরের ২০ জুলাই একটি হত্যাচেষ্টা মামলায় তুফান ও তাঁর তিন ভাই ঝুমুর, ওমর ও সোহাগ গ্রেপ্তার হন। ২০১২ সালের ২৪ আগস্ট যুবলীগের নেতা মতিনকে চামড়া গুদাম লেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ফেনসিডিল, বিয়ার, হেরোইন, বিদেশি চাকু, জুয়া খেলার সরঞ্জাম, ১০ লাখ টাকাসহ গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। কিন্তু পরদিন র‍্যাবের তৎকালীন অধিনায়কের অপসারণ দাবিতে শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে যুবলীগ।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মতিন সরকারের বিরুদ্ধে সদর থানায় ছয়টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০০১ সালের একটি অস্ত্র মামলায় তাঁর ২৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। এ ছাড়া ২০০৬ সালে তিনটি, ২০০৩ সালে একটি এবং ২০০১ সালেও দুটি মামলা হয়। এ পর্যন্ত পুলিশ তাঁকে চারবার, র‍্যাব দুবার এবং যৌথ বাহিনী একবার গ্রেপ্তার করেছে।

১৯৯৮ সালের ১৮ জুন নুরানী মোড়ে খুন হন গোলাম রসুল। ওই হত্যাকাণ্ডে মতিনের নাম আসে। ২০০১ সালে চক সূত্রাপুরে অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হন মতিনের ঘনিষ্ঠ মুন্সি উজ্জ্বল। মাটি ঢালি বাণিজ্য মেলার মাঠে ২০১১ সালে খুন হন যুবলীগের নেতা শফিক চৌধুরী। এ ঘটনায়ও মতিনের নাম আসে। ২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর যুবদলের নেতা ইমরান হত্যার প্রধান আসামি ছিলেন মতিন।

গত বছরের ২৮ জুলাই ছাত্রী ধর্ষণ এবং পরে মা-মেয়েকে নির্যাতনের পর মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার ঘটনায় বগুড়া সদর থানায় দায়ের করা দুটি মামলায় প্রধান আসামি হন তুফান সরকার। এর কয়েক দিন আগে ১৭ জুলাই বিকেলে ওই ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করেন তুফান সরকার। পরে তুফানের স্ত্রী আশা সরকার, তাঁর বড় বোন নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া আক্তার ও তুফানের সহযোগীরা ধর্ষণের শিকার মেয়েটি ও তার মায়ের ওপর নির্যাতন চালান। দুজনেরই মাথা ন্যাড়া করে দেন। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর মা বাদী হয়ে গত ২৮ জুলাই রাতে মামলা করেন।

চলতি বছর মাদকবিরোধী অভিযান শুরুর আগে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় আসে পুতু সরকারসহ ছয় ভাইয়ের নাম। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন পুতু সরকার।

জেলা পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। শহরের করতোয়া নদীর ওপর ভাটকান্দি সেতুর পূর্ব পারে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের খবর পাওয়া যায়। টহল পুলিশ সেখানে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে দুর্বৃত্তরা। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলি থেমে গেলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুতু সরকারকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানকার চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে আটটি গুলিসহ দুটি অস্ত্র ও ৫০০টি ইয়াবা উদ্ধারের দাবি করেছে পুলিশ।-প্রথম আলো

পিএনএস/জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন