সুরেশ সরিষার তেলের কর্ণধার সুধীর সাহা রিমান্ডে

  12-08-2018 08:26PM

পিএনএস ডেস্ক : মেয়ের জামাতাকে অপহরণের ঘটনায় করা মামলায় সুরেশ সরিষার তেলের কর্ণধার সুধীর চন্দ্র সাহাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার এসআই আলমগীর হোসেন রোববার আদালতে সুধীর সাহাকে দশ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

সুধীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ, পরিবারের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে বিয়ে করায় তিনি তার মেয়ে লিমা রানী সাহাকে (২৮) মানসিক রোগী সাজিয়ে বীকন পয়েন্ট লিমিটেড নামে একটি মানসিক পুর্নবাসন কেন্দ্রে ভর্তি করেন। আদালতে মামলা করে লিমাকে সাহাকে সেখান থেকে উদ্ধার করেন তার স্বামী সৈকত পাল (২৯)। পরে সৈকতকে অপহরণ করতে কোটি টাকার চুক্তিতে নরসিংদীর শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সোহেল ভুঁইয়াসহ অন্তত ৯ জনকে ভাড়া করেন সুধীর। গত ১২ জুন রাজধানীর নিউমার্কেট থেকে সৈকতকে অপহরণের সময় সোহেলসহ তিনজন হাতেনাতে ধরা পড়ে।

এদিকে, সোমবার লিমার বক্তব্য শুনবেন আদালত। বর্তমানে লিমাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে। তাকে আদালতে হাজির করতে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারকে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেনু দাস।

সৈকতের আইনজীবী ব্যারিস্টার দীপঙ্কর কুমার ঘোষ জানান, সুধীর সাহার পক্ষ থেকে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯১ ধারায় হাইকোর্টে মামলা করা হয়। রোববার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে ২১৯ নম্বর তালিকায় মামলাটি আদেশের জন্য দিন ধার্য ছিল।

তিনি জানান, এর আগে গত ৯ আগস্ট সুধীরের পক্ষে দরখাস্তকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইউনুছ আলী আকন্দকে এ মামলার ব্যাপারে ব্যাখা দিতে ১২ আগস্ট আদালতে হাজির হতে বলা হয়। তবে ধার্য তারিখ রোববার তিনি আদালতে উপস্থিত হননি। পরে সৈকতের পক্ষের আইনজীবীর বক্তব্য শুনে ও নথি পর্যালোচনা করে আদালত ইউনুছ আলীর আবেদন খারিজ করেন। এছাড়া কেন তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে মামলা করা হবে না- এ মর্মে রুলও জারি করা হয়। অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে ইউনুছ আলীকে সশরীরে হাজির হয়ে এ ব্যাপারে ব্যাখা দিতে বলেন আদালত।

দীপঙ্কর কুমার ঘোষ আরও জানান, সুধীর সাহার মামলা হাইকোর্টে নিষ্পত্তি হওয়া সত্ত্বেও ২৫ জুলাই বীকন পয়েন্ট থেকে লিমাকে উদ্ধারের ঘটনায় সার্চ ওয়ারেন্টকে চ্যালেঞ্জ করে মহানগর দায়রা জজ আদালতে রোববার আরেকটি মামলা করা হয়। ওই মামলার আইনজীবী ছিলেন ইউনুছ আলী আকন্দ। পরে একই ঘটনায় হাইকোর্টের দেওয়া দেওয়া আদেশের সার্টিফিকেট আদালতের নজরে আনা হলে সেই মামলাও খারিজ হয়ে যায়। এছাড়া সোমবার সৈকতের করা ১০০ ধারার মামলায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রেনু দাসের আদালতে লিমা দাসকে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আদালত লিমার বক্তব্য শুনবেন।

এদিকে, অপহরণের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার এসআই আলমগীর হোসেন বলেন, সৈকতকে অপহরণ চেষ্টার সঙ্গে আর কারা জড়িত- এ ব্যাপারে সুধীরের কাছে জানতে চাওয়া হবে। অপহরণের জন্য যাদের তিনি ভাড়া করেছেন তাদের কেউ রেহাই পাবে না। এখন পর্যন্ত ৫ জনকে এ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। অজ্ঞাত পরিচয়ধারী আরও কয়েকজনের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ চলছে। সুধীর কার পরামর্শে মেয়েটিকে মানসিক রোগী বানিয়ে তিনি হামপাতালে ভর্তি করেছেন তাও বের করা হবে। কারও ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো জায়গায় আটকে রাখা যায় না।

অপহরণের মামলার বাদী সৈকত পাল বলেন, দ্রুত স্ত্রীকে ফেরত চাই। ওর সুন্দর জীবনের দুই বছর যারা কেড়ে নিয়েছে তার মূল্য কিভাবে তারা পরিশোধ করবে! তাকে অসুস্থ বানানোর আয়োজন চলছে।

জানা গেছে, ২০১০ সালে নরসিংদী সরকারি কলেজে পড়ার সময় সৈকত পালের সঙ্গে পরিচয় হয় লিমা সাহার। ওই বছরই তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়। ২০১৫ সালে লিমার প্রেমের বিষয়টি জানতে পারে তার পরিবার। এরপর থেকে প্রায় দুই বছর লিমাকে কার্যত তাদের বাসায় গৃহবন্দি করে রাখা হয়।

চলতি বছরের ২৩ মে লিমাকে তার বাবা কলকাতায় নিয়ে যান। কলকাতা পুলিশের সহায়তায় দেশে ফিরে ২৪ মে লিমা ও সৈকত বিয়ে করেন। এরপর কৌশলে লিমাকে আবার সুধীর সাহা তার হেফাজতে নিয়ে মানসিক রোগী সাজিয়ে গুলশানের বিকন পয়েন্ট নামে একটি রিহ্যাবেলিটেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়।

পরে স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য আদালতে মামলা করেন সৈকত পাল। আদালতের নির্দেশে গত ২৫ জুলাই গুলশান থানা পুলিশ বীকন পয়েন্ট থেকে লিমাকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে আদালতের নির্দেশে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ভর্তি করা হয়।-সমকাল


পিএনএস-জে এ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন