মেয়েকে ধর্ষণে বাধা দেয়ায় মাকে হত্যা

  15-09-2018 09:10PM

পিএনএস, বগুড়া: এমনও দিন যায় যেদিন মনিকার বাবা ঘরে ফেরে না, ফিরলেও রাত ভোর হয়। বাঁশের ঝাড়ু বিক্রি করেই চার সদস্যের সংসার চালায় আব্দুল মান্নান। দুই মেয়ে মনিকা ও মিম। মনিকার বয়স ১৪ আর মিমের ৫। এক দিকে মনিকা দেখতে বেশ সুন্দর, অন্যদিকে ঝাড়ু বিক্রেতা গরীব মানুষের মেয়ে।

এ কারণে প্রতিবেশী জসিমের ছেলে মোহনের কু-দৃষ্টি পড়ে তার উপরে। সুযোগ বুঝে মনিকার উপর ঝাপিয়ে পড়ে মোহন। তবে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। প্রভাবশালী জসিম ছেলের অপকর্ম স্থানীয় ভাবে ঢাকার চেষ্টা করে। কিন্তু মনিকার মা তাতে রাজি হননি।

মনিকার বাবা থানায় মামলা করলে জসিমের ছেলে মোহনকে পুলিশ গ্রেফতার করে। মোহনের বয়স ১৬ হওয়ায় তাকে আদালতের নির্দেশে পাঠানো হয় যশোর কিশোর সংশোধনাগারে। আর একারণেই জসিম ক্ষুব্ধ হয় মনিকাদের পরিবারের উপর। তারাও বিষয়টি বুঝতে পেরে মনিকাকে পাঠিয়ে দেয় তার নানার বাড়িতে।

এদিকে, মোহনের বাবা জসিম মনিকার মা আফরোজাকে খুন করার জন্য পরিকল্পনা করে একই গ্রামের বাচ্চু ওরফে পাইতা, আমিনুর ওরফে আনু, এবং আতিকুরের সাথে। মনিকার মা আফরোজাকে খুন করতে পারলে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে দিতে চায় মোহনের বাবা জসিম।

ধর্ষণের চেষ্টা মামলার প্রধান সাক্ষী ছিলেন বাচ্চু ওরফে পাইতা। বাচ্চুর ছিল মনিকাদের বাড়িতে অবাধ যাতায়াত। তাকে বিশ্বাস করতো আফরোজা ও তার স্বামী। মান্নানের অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের দেখ ভালো করতো বাচ্চু ওরফে পাইতা। কিন্তু এক লাখ টাকার লোভে পাইতা হাত মেলায় জসিমের সাথে। আফরোজাকে খুন করার পরিকল্পনায় সায় দেয়।

গত বুধবার রাতেও ঘরে ফেরেনি মনিকার বাবা মান্নান। পাশের গ্রামে ঝাড়ু তৈরির উপকরণ সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন। আফরোজা ছোট মেয়ে মিমকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। রাত ১১টার পর ওরা চারজন মনিকাদের ঘরের দরজার টিন কেটে ভিতরে ঢুকে পড়ে।

এরপর বাচ্চু ওরফে পাইতা আফরোজার পা ধরে শক্ত করে। জসিম মাথা চেপে ধরে। আতিকুর মুখ চেপে ধরে। আর আমিনুর ধারালো ছুরি দিয়ে আফরোজাকে জবাই করে। পরদিন সকালে ছোট মেয়ে মিম প্রতিবেশীদের ডেকে বলে তার মার গলা দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। তারা খবর দেয় পুলিশে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।

৫ বছরের ছোট মেয়ে মিম ছাড়া আর কেউ ছিল না ঘটনার সাক্ষী। মিমের দেয়া তথ্য অনুযায়ী শুক্রবার রাতে পুলিশ বাচ্চু ওরফে পাইতাকে গ্রেফতার করে। অকপটে স্বীকার করে খুনের ঘটনা। পরে গ্রেফতার করা হয় জসিমকে। এরমধ্যে খবর পেয়ে আত্মগোপন করে অপর দুইজন। গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন তথ্য দেয় তারা দু'জন।

বগুড়ার পুলিশ সুপার আশরাফ আলী জানান, গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে খুনের দায় স্বীকার করেছে। ঘটনার সময় আফরোজার ছোট মেয়ে মিমের ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু খুনিরা তাকে হত্যা করেনি। মিমি বেচে যাওয়ায় পুলিশকে অনেক তথ্য দিয়েছে। খুব শিগগিরই খুনের সাথে জড়িত অপর দু'জন গ্রেফেতার করা হবে।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল


@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন