মধ্যপ্রাচ্যে নারীকর্মীদের নির্যাতনে দায়ীদের বিচার সময়ের দাবি

  17-09-2018 03:20PM

পিএনএস (মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম প্রধান) : মহানবীর দেশ, ঈমান-ইসলামের পবিত্র ভূমি মক্কানগরী । মহানবীর জন্ম যেখানে। মুসলমানরা সেখানে গিয়ে আখেরাতের মুক্তি কামনায় দু চোখের পানি ফেলে বুক ভিজান। শয়তানকে পাথর মারেন। কালো পাথরে চুমু খেয়ে পাপ মোছনের চেষ্টা করেন। সে দেশে গিয়ে আমাদের দেশের নারী কর্মীরা যে বর্বর অভিজ্ঞতা ও চরম পরিণতির শিকার হয়েছে, যাদের কারণে; সে চক্রকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি সচেতন ব্যক্তিমাত্রই কাম্য?

ফরিদা বেগমের বাড়ি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা এলাকায়। এ নারীর স্বামী সাত বছর আগে মারা গেছেন। এক মেয়ে, চার ছেলে। সন্তানরা মায়ের খোঁজ নেয় না। তাই ঋণ করে ১১ মাস আগে সৌদি আরব যান তিনি। গৃহকর্মীর কাজে নেওয়ার পর পাঁচ মাস হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও তিনি কোনো বেতন পাননি। ঈদের দিনও জোটেনি ভালো খাবার!

দেশে ফিরে আসা নারীরা বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশ দূতাবাসের আশ্রয়কেন্দ্রেও হয়রানির শিকার হয়েছেন তাঁরা। অনলাইনে ভিডিওতে নির্যাতনের কথা বলায় তাঁদের ওপর খড়্গ নেমে এসেছে। যাঁরা এখন সৌদিতে আছেন, তাঁরা নানা রকমের হয়রানির শিকার হচ্ছেন। ফরিদা বেগমের সঙ্গে একই ফ্লাইটে দেশে ফিরে আসেন হতভাগ্য ৬৪ নারী কর্মী।

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৬ সেপ্টেম্বর রাতে পৌঁছে ৪০ বছর বয়সী ফরিদা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আর বিদেশে যাব না, দরকার পড়লে ভিক্ষা করে খাব। খাবারদাবার নাই, প্রতিদিন মারছে। বেতন চাইলে মারে! পুলিশে দিছে। ১২ দিন জেলে থাকছি।’

কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের মঞ্জু মিয়ার মেয়ে জান্নাত বলেন, ‘আট মাস ছিলাম। আল্লাহ বাঁচাইয়া ফিরাইছে। এক বাসায় কাজ করার সময় বেতন তো পাইনি, উল্টো মারধরও করা হতো। পরে আমাকে খারাপ জায়গায় বেচার জন্য নিয়ে যাচ্ছিল। আমি পালিয়ে বাঁচি।’

ফেরত আসা নারীকর্মীরা বলেন, গত ২৮ আগস্ট শাহজালাল বিমানবন্দরে আত্মহত্যার চেষ্টা করা নারীকর্মীর সঙ্গে তারাও একই আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন। ওই তরুণীর ওপর দূতাবাসের কর্মী লোকমান ও গোলামের অবিচারের কথা তাঁরা সৌদিতেই জেনেছেন। এমন আরো কয়েকজন নারীকর্মী হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেন ফেরত আসা কর্মীরা।

নারীরা মায়ের জাতি। বিশ্বাস করে চাহিদামাফিক কষ্টের টাকা রিক্রুটিং এজেন্সির লোকজনের হাতে তুলে দিয়ে অচেনা-অজানা দেশে কাজের জন্য যান এই নারীকর্মীরা। আর সেখানে গিয়ে কী অমানুসিক যন্ত্রণাকর অবর্ণনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে তাদের, উপরোল্লিখিত বক্তব্যগুলো তার অকাট্য প্রমাণ।

ভালো কাজ ও বেতনের কথা বলে তাদের নেওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তারা রিক্রুটিং এজেন্সির কথা ও কাজের মিল বাস্তবেক খুঁজে পায়নি তারা। বরং পেয়েছে তার উল্টোটা। তাদের সঙ্গে নির্দয় আচরণ করা হয়েছে। মৌলিক অধিকার খাবারও জুটত না তাদের। উল্টো মারধর করা হতো। দিনভর কাজ করালেও বেতন দেওয়া হতো না। যৌন নির্যাতন ভোগ করতে হয়েছে অনেককে। খাটতে হয়েছে জেল। ওই ফ্লাইটে আসা ৬৪ নারী কর্মীর এক ও অভিন্ন বক্তব্য।

মাধ্যপ্রাচ্য থেকে ইতিমধ্যে অর্ধ সহস্রাধিক নারী কর্মী যৌনসহ নানা ধরনের নির্যাতন ও অনিয়মের কারণে দেশে ফিরে আসেন। বিদেশের মাটিতে গিয়ে এক নরক যন্ত্রণা ভোগ করেছেন তারা। এক কথায় তারা ভাগ্যের চাকা পরিবর্তনের আশায় নগদ অর্থ খরচ করে সেসব দেশে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে ফতুর হয়ে দেশে ফিরেছেন।

যে বা যারা অসত্য আশার বাণী শুনিয়ে তাদের শেষ সম্বল বিক্রি করা অর্থ হজম করে জেনে-বুঝে নরক যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দিয়েছে, এবার তাদের পালা। দায়িত্বশীলরা আন্তরিক হলে কে কার মাধ্যমে তারা গেছে, এটা বের করা কঠিন কোনো বিষয় নয়। যে চক্র নারীদের আস্থা-বিশ্বাসকে পুঁজি করে তাদের শারীরিক, মানসিক, আর্থিক ও সম্মান নিয়ে সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠেছে, চিহ্নিতপূর্বক তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া সময়ের দাবি।

লেখক : বিশেষ প্রতিনিধি- পিএনএস

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন