ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার এহসান দেশ ছেড়ে চলে গেছেন

  25-09-2018 04:00PM

পিএনএস ডেস্ক :ছাত্রলীগের চরম নির্যাতনে শিকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সেই শিক্ষার্থী এহসান রফিক দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এই মেধাবী শিক্ষার্থী নিরাপত্তাহীনতার কারণে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমিয়েছেন। সেখানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন বলে জানা গেছে।

এহসান রফিকের বাবা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গত মাসের শেষ সপ্তাহে এহসান দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন।

তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গেলে কী হয়, তা নিয়ে একটু ভীতি কাজ করছিল। কখন আবার কী হয়ে যায়, তা নিয়ে দুশ্চিন্তাও ছিল। এহসান নিজেই চাচ্ছিল না সেখানে যেতে, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিল। তাই শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হওয়ার পর তাঁকে বাইরে পড়তে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’

ওই ঘটনা পরপরই এহসান আতঙ্কে ছিলেন। এ কারণে এহসান আবাসিক হলের বরাদ্দ পরিবর্তনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মে সেটি সম্ভব নয় বলে তাকে জানিয়ে দেয়া হয়।

অথচ ওই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রলীগের যে সাত নেতা-কর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছিল, তাদের মধ্যে পাঁচজন হলেই থাকছেন। এমনকি যাকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের কথা বলা হয়েছে, তিনিও হলে থাকেন। একই ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকেও তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু বহিষ্কৃত প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সময় দিচ্ছেন।

হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহবুবুল আলম জোয়ার্দার বলেন, সাময়িক সময়ের জন্য বহিষ্কৃত কেউ হলে থাকতে পারবে কি না সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। থাকলে তিনি তা মেনে চলবেন। এহসান রফিকের ঘটনায় স্থায়ীভাবে কাউকে বহিষ্কার করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কাগজপত্র যাচাই না করে তিনি কিছু বলতে পারছেন না বলে জানান।

উল্লেখ্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ওমর ফারুককে ক্যালকুলেটর ধার দিয়েছিলেন এহসান। সেটি ফেরত না দেয়ায় ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে দুজনের কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। পরে রাত ২টার দিকে এহসান হলের রিডিং রুম থেকে বিছানায় যাওয়ার সময় ছাত্রলীগের হল শাখার সহ-সভাপতি আরিফুল ইসলাম তাকে টেলিভিশন কক্ষে ডেকে নিয়ে গিয়ে বেশ কয়েকজন নেতা মিলে প্রায় দেড় ঘণ্টা নির্যাতন শেষে হল থেকে বের করে দেন। এ সময় ফটকের কাছে ওমর ফারুকের নেতৃত্বে তাকে আবারও মারধর করা হয়। এতে এহসানের একটি চোখ মারাত্মক জখম হয়। তার কপাল ও নাক ফেটে রক্ত বের হয়।

দুই দফায় এই অমানবিক নির্যাতন চালায় ছাত্রলীগের ওই নেতাকর্মীরা। নির্যাতনের ঘটনাটি ছবিসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর নিন্দার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় হল কর্তৃপক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করে।

আহত এহসানকে দেশের একাধিক হাসপাতালে চিকিৎসা করিয়েছেন তার বাবা ঝিনাইদহের স্থানীয় সাংবাদিক মো. রফিকুল ইসলাম। এরপর ভারতের শংকর নেত্রালয়ে তার চোখে এক দফা অস্ত্রোপচার করানো হয়।

পিএনএস/এএ

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন