বিআইডব্লিউটিএ’র সুরতহাল : নৌরুটের ড্রেজিং কাজের টাকা ভাগাভাগি : দুদক-এর নথি ধামাচাপা

  25-02-2020 08:52PM


পিএনএস (মো: শাহাবুদ্দিন শিকদার): বিআইডব্লিউটিএ’র ২৬টি নৌরুটের টাকা ভাগাভাগি হয়েছে। বিগত তিন বৎসরে এই টাকা লুটপাট হয়েছে। এই ২৬টি নৌরুট হলো : ভোলা লক্ষীপুর নৌপথ (মেঘনা নদী), ২। ঢাকা বরগুনা নৌপথ (খাগদান নদী), ৩। ঢাকা-দূর্গাপাশা কারখানা-বগা-ঝিলনা-পটুয়াখালী নৌপথ, ৪। গলাচিপা পটুয়াখালী নৌপথ (লোহালিয়া-লাউকাঠি নদী, ৫। বরিশাল নাজিরপুর লালমোহন) তেতুলিয়া নদী ৬। লাহারহাট ভেদুরিয়া-শ্রীপুর ফেরীঘাট, ৭। ঢাকা-বরিশাল নৌপথ, ৮। বরিশাল নদী বন্দর (উলানিয়া-কালিগঞ্জ নৌপথ, ১০। হরিনা-আলুবাজার নৌপথ, ১১। চাঁদপুর শরিয়তপুর ফেরীঘাট, ১২। ঢাকা-চট্টগ্রাম-টেকনাফ নৌপথ, ১৩। কক্সবাজার নৌপথ, ১৪। ভোলার চর, ১৫। ঘোড়াউৎড়া নদী, ১৬। বরদিয়া-মাদারীপুর নৌপথ (মধুমতি নদী), ১৭। মাদারীপুর-কবিরাজপুর নৌপথ, ১৮। পিয়াজখালী-কাওড়াকান্দি নৌপথ, ১৯। ময়নাকাটা নদী-কুমার নদ, ২০। জাজিরা-মাদারীপুর নৌপথ, ২১। মাদারীপুর-টরকী-হোসনাবাদ-ফাসিয়াতলা নৌপথ, ২২। টরকীনালা গৌরনদী, ২৩। সিনদিয়ার ঘাট-ভাঙ্গা-বাকুন্দা নৌপথ, ২৪। দ্বীক নগর ব্রীজ, ২৫। টকী বাজার গৌরনদী এবং ২৬। দাউদকান্দি-হোমনা।

উপরোক্ত নৌপথগুলো খননের আগে কেমন ছিল আর এখন কেমন আছে তা যাচাই করলেই বিআইডব্লিউটিএ’র শীর্ষ চোর-ডাকাতদের মুখোশ উন্মোচন হবে। বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজিং ইউনিটের শীর্ষ কর্তা এবং বড় বড় প্রকল্পের পিডিদের সম্পদের খোঁজ-খবর নিলেও জানা যাবে ড্রেজিং-এর টাকা কার পেটে কি পরিমাণ প্রবেশ করেছে। বিআইডব্লিউটিএ’র শীর্ষ কর্তার পুত্র এবং দু’জন পিডির আত্মীয়-স্বজন ড্রেজিং সেক্টরে বেনামী ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনেছে। ড্রেজিং ইউনিটের শীর্ষ কর্তা এবং তার কয়েকজন সাগরেদ মিলে ড্রেজিং-এর মাটি বাণিজ্য করেছে। কক্সবাজারের বাকখালী নদীর পাড়ে লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেই জানা যাবে কোন কোন প্রকৌশলী মাটি বাণিজ্য করেছে। একমাত্র বাকখালী নদীর মাটি বাণিজ্য করেই বিপুল অংকের টাকা লুটপাট করেছে তিনজন প্রকৌশলী। তাদের নাম ড্রেজিং বিভাগসহ বিআইডব্লিউটিএ’র সংশ্লিষ্ট সকলেই জানে। তাছাড়া কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট থানায় এই মাটি বাণিজ্যের হোতাদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। টাকার জোরে সে মামলাও ধামাচাপা পড়েছে।

সূত্রমতে, বিআইডব্লিউটিএ’র লুটপাটের টাকা ভাগ-বাটোয়ারা হয় দুদক সদর দফতরের ৫০ গজের মধ্যেই। সেগুনবাগিচায় দুদকের পূর্ব গেট বরাবর একটি ভবনে প্রায়ই টাকা ভাগ-বাটোয়ারার আসর বসে। দুদকের চোখে ধুলি দেওয়ার কারণেই এই জায়গাকে বেছে নিয়েছে দুর্নীতিবাজচক্র। এখানেই বাস করেন ড্রেজিং সেক্টরের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ। এই শীর্ষ দুর্নীতিবাজের স্ত্রী আবার এক ধাপ উপরে। সে মাঝে মাঝেই ঠিকাদারদের টাকার জন্য ফোন করে বসে। অফিসের নারী কর্মকর্তাদের সাথে তার স্বামীকে জড়িয়ে নানা মুখরোচক গল্প ছড়িয়ে কোন কোন কর্মকর্তাকে হেনস্তা পর্যন্ত করেছেন শীর্ষকর্তার স্ত্রী। বিআইডব্লিউটিএ’র সবাই এই কাহিনী জানে।

সূত্রমতে, দুর্নীতি দমন কমিশন বারবার ড্রেজিং বিভাগের শীর্ষ কর্তাসহ কয়েকজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চেয়েছে। কিন্তু টাকার জোরে বারবার নথিগুলো চাপা পড়েছে। সম্পদের হিসাব চেয়ে দুদক পত্র জারী করলেও বারবার তারা সব কিছু ম্যানেজ করতে পেরেছে। এমনকি দুদক তদন্ত শেষে কয়েকজন দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে চার্জশীট দিলেও দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীরা লুটপাট চালিয়েই যাচ্ছে। অথচ দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী তাদের সাময়িক বরখাস্ত কিংবা বরখাস্ত হওয়ার কথা। থাকার কথা কারাগারে। অথচ তারা উল্টো পদোন্নতি পাচ্ছেন। হচ্ছেন নতুন নতুন প্রকল্পের পিডি। শীর্ষ কর্তার টাকা ভাগ-বাটোয়ারার মধ্যমনি আবার ছাত্রলীগের জনৈক নেতা। তিনি গাইবান্ধা জেলা থেকে নির্বাচন করবেন বলে জনশ্রুতি আছে। শুধুমাত্র দালালী করেই তিনি এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। বিআইডব্লিউটিএ’র প্রকৌশলী এবং ঠিকাদাররা তাকে মজা করে নাম দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র জিকে শামীম।

সূত্রমতে, ড্রেজিং বিভাগের একজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ বিএনপিপন্থী প্রকৌশলীদের অংগ সংগঠন এ্যাবের বড় মাপের নেতা। বিএনপি’র নীতি-নির্ধারণী অনেকের সাথে তার লেনদেন রয়েছে। তিনি বিএনপির একজন বড় মাপের ডোনার। হেফাজতে ইসলামের সমাবেশের দিন এই প্রকৌশলী নেতা বিএনপি ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখে বিপুল অংকের টাকা তুলে দিয়েছিলেন আয়োজকদের হাতে। কিন্তু তার স্বপ্ন মুকুলেই ঝরে যায়। বিআইডব্লিউটিএ’র সকলেই এই বিএনপিপন্থী প্রকৌশলীকে চিনেন।

অভিজ্ঞমহল মনে করেন, যেহেতু বর্তমান নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এবং বিদায়ী নৌ-পরিবহন সচিব সজ্জন মানুষ। যেহেতু তারা উভয়েই দুর্নীতি বন্ধ করতে চান সেহেতু ড্রেজিং বিভাগের শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরী হয়ে পড়েছে।

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন