পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক সাফল্যঃ সুনামগঞ্জের হাওরে এখন যৌবনের খেলা (পর্ব-১)

  01-04-2021 08:23PM

পিএনএস (মোঃ শাহাবুদ্দিন শিকদার) : সুনামগঞ্জের হাওরে এখন যৌবনের খেলা। সারা হাওর জুড়ে সবুজ ধানের শীষ বিকাশের মেলা। চলছে বাতাসের দোলাচলে পরাগায়নের জীবন বিস্তৃতি। এবার কৃষকের মুখে, কিষাণীর হৃদয়ে খেলে যেতে পারে হাস্যরোল। গোলায় উঠতে পারে সোনালী ধান। লক্ষ কৃষকের স্বপ্নকে এভাবেই বাস্তবায়নের নেশায় মাতাল করেছে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। মাঠে নিদ্রাহীন পরিশ্রম করেছে পাউবোর যোদ্ধারা। এভাবেই হাওরে তাদের পরিশ্রমেই কৃষকের গোলায় প্রায় প্রতি বছরেই উঠে রাশি রাশি ধান। মুক্তিযুদ্ধের অনেক আগেই এই যুদ্ধ শুরু হয়েছে। চলছে অবিরত।

চলতি বছরে হাওরের বাঁধগুলো অনেক বেশী সংহত। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক মনিটরিং এর কারণে এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং উপমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মনিটরিং এর কারণে পাউবোর হাওর সংশ্লিষ্ট প্রতিটি কর্মকর্তা-কর্মচারী ছিলেন মাঠে। পানি সম্পদ উপমন্ত্রী সুনামগঞ্জের মাঠ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে কর্ম চাঞ্চল্যের মেলবন্ধন রচনা করেছেন। উঠান বৈঠকের আদলে বসেছেন সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে। এভাবেই এগিয়েছে হাওরের প্রতিটি বাঁধ নির্মাণের কাজ। আসলে মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং এই সাফল্যকে সামনে এগিয়ে এনেছে।

হাওরের পিআইসি বাঁধ নির্মাণ পাউবো’র রুটিন ওয়ার্কে পরিণত হয়েছে। কিন্তু পরিশ্রমলব্ধ সাফল্য বারবার ছিনিয়ে নিছে অন্যান্য সংস্থা। হাওরের ফসল রক্ষায় পাউবো শতভাগ পরিশ্রম করলেও সাফল্যের জয়মুকুট পরিধান করে জেলা ও উপজেলা প্রশাসন কিংবা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। শরীরের ঘাম ঝড়িয়ে যখন কৃষকের গোলায় সোনালী ফসল তুলে দেয় পাউবো তখন মাল্টিকালার প্রেস রিলিজ ঝলঝল করে উঠে অন্যান্য সংস্থার। অথচ অকাল বন্যায় বাঁধ উপচে পানি ফসলের মাঠে প্রবেশের সাথে সাথেই পাউবো’র কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিপাকে ফেলা হয়। ২০১৭ সালের অকাল পাহাড়ী ঢলে বাঁধ উপচে যখন কৃষকের ফসল ভাসিয়ে নিয়েছিল তখন কপাল পুড়েছিল পাউবো’র এক ঝাক কর্মকর্তার। তাঁদের অনেকেই এখনো পথে পথে ঘুরছেন। আবার সুনামগঞ্জের হাওর ট্র্যাজেডীর কাজের শিথিলতার জন্যে যে কর্মকর্তাকে অনেক খানি দায়ী করা যায় তিনি ‘ধোঁয়া তুলসী পাতা সেজে’ এখন পাউবো’র একটি জোনের প্রধান প্রকৌশলী। সুনামগঞ্জ ট্র্যাজেডীর সময় তিনি তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ছিলেন। ঐ কর্মকর্তাসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা যাতে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব না পায় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং দুদক-এর অভিপ্রায় ছিল। কিন্তু বন্যার জল যেমন সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় ঠিক তেমনি তার সকল দোষ-ত্রুটি মুছে দিয়ে গেছে। ব্যাপক কারসাজির মাধ্যমে তিনি এখন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে অভিষিক্ত হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং দুদক-এর অভিপ্রায় ফাইলের নীচে চাপা পড়েছে। পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জোর মনিটরিং এর কারণে হাওরের বাঁধ যথাসময়ে নির্মাণ করা সম্ভব হলেও হাওরের ফসল রক্ষা করা যাবে কি না তা অনেকখানি নির্ভর করে প্রকৃতির মর্জির উপর। ২০১৭ সালের ৭ এপ্রিল হাওর ট্র্যাজেডীর মূলে ছিল ভারতের মেঘালয়ের চেরাপূঞ্জীতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত। বৃষ্টিজনিত ঢলেই ভেসে গিয়েছিল সোনালী ফসল। সংগতঃকারণে পাউবো’র ব্যাপক মনিটরিং-এর পরেও প্রকৃতির খেলায় যে কোন সময় ভেসে যেতে পারে হাওর।

অভিজ্ঞমহল মনে করেন, হাওর রক্ষায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বর্তমানে যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে সেভাবে কাজ অব্যাহত রাখলে এক সময় হাওরের ফসল রক্ষায় আরো সাফল্য আসতেই পারে। (চলবে)

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন