মাত্র ৬ বছর চাকুরী করেই পাউবো’র দুইটি ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলীঃ অন্তরালে ৭’শ কোটি টাকার প্রকল্পে লুটপাটের লীলাখেলাঃ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ জরুরী-

  28-04-2021 04:56PM

পিএনএস (মোঃ শাহাবুদ্দিন শিকদার) : চাকুরীর বয়স মাত্র ৬ বছর। এসডিই পদে অভিষেক হলেও এখনো অভিজ্ঞতা সঞ্চিত হয়নি। কিন্ত কি করে, কিসের বিনিময়ে, কাকে সন্তুষ্ট করে এক সাথে দুইটি ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব এক সাথে লাভ করা যায় তা তিনি ভাল করেই জানেন। বাজারে প্রচার আছে, এই চেয়ার দুইটি লাভ করতে মোটা অংকের টাকা খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু একজন এসডিই কি করে দুইটি ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী হয় তা নিয়ে সমালোচনা বাড়ছে। পাউবো’র জনৈক শীর্ষ কর্তা যখন খুলনার প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন তখন সাতক্ষীরায় কর্মরত ঐ এসডিই সাহেব ছিলেন তাঁর হাতের লাঠি। সরকারী কর্মকর্তা হয়েও কিভাবে সাব-কন্ট্রাক্টে পাউবো’র কাজ করে বাণিজ্য করা যায় তা এই গুরু-শিষ্য বেশ ভাল করেই রপ্ত করেছিলেন। আর সে কারণেই গুরু যখন পাউবো’র দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তখন শিষ্যকে প্রাইজ পোস্টিং না দিলে কি চলে? সাতক্ষীরা পওর বিভাগে কর্মরত ঠিকাদারদের জিজ্ঞাসা করলে এই গুরু-শিষ্যের অনেক লুটপাটের কাহিনী জানা যাবে। জানা যাবে, পাউবো’র এই দণ্ডমুণ্ডের কর্তা জিকে প্রকল্পের পিডি এবং খুলনার প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় কি করেছেন তার দালিলিক প্রমাণ। জিকে প্রকল্পের পিডি থাকাকালে তাঁর আখের গোছানোর কাহিনীও সবার মুখস্থ। যা লিখলে দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশ করা সম্ভব।

পাউবো সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বর্তমান পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এবং পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম পাউবো’র দুর্নীতির দুর্নাম মোচনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মানিত সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার যখন প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়ণে ব্যাপক ভূমিকা রাখছেন ঠিক তখন একজন জুনিয়র এসডিইকে দুইটি গুরুত্বপূর্ন ডিভিশনে ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী পদে নজীরবিহীনভাবে পদস্থ করে দুর্নীতি ও অনিয়ম করেছেন পাউবো’র একটি দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেট। দুর্নীতিবাজ এই সিন্ডিকেটের প্রধান লক্ষ্য “তেতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন হতে পটুয়াখালী জেলাধীন বাউফল উপজেলার ধুলিয়া লঞ্চঘাট হতে বরিশাল জেলাধীন বাকেরগঞ্জ উপজেলার দুর্গাপাশা রক্ষা প্রকল্প”- এর দরপত্র নিয়ন্ত্রণ করা। এই দরপত্র নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পাউবো’র দণ্ডমুণ্ডের কর্তা আলোচ্য এসডিইর মাধ্যমে দুর্নীতির সুখটান দিতে চান। কারণ, চলতি অর্থ বৎসরেই তার চাকুরীর মেয়াদ শেষ হবে। ইতিমধ্যেই কাকে কাজ দিতে হবে, কাকে দেওয়া যাবে না, কিভাবে দরপত্রের নিয়ম-কানুন পরিবর্তন করে পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দেয়া যাবে, কিভাবে দরপত্র মূল্যায়ণে মার্কিং ক্রাইটেরিয়ায় ভেজাল করতে হবে তা নিয়ে গুরু শিষ্যের মধ্যে আলাপ-আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এসডিই কাম দুই ডিভিশনের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী তার সহকর্মীদের নিরস্ত্র করতে তাঁদের ডিজিটাল পাসওয়ার্ড নিজের দখলে নিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা কোন কাজেই সম্পৃক্ত হতে পারছে না। বিশাল দরপত্রের ক্যু হচ্ছে জেনেও সংশ্লিষ্টরা কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করতে পারছেন না। পাসওয়ার্ড কেড়ে নেয়ায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দরপত্র মূল্যায়ণ কাজে ভূমিকাও রাখতে পারছে না।

অভিযোগকারীরা জানান, পাউবো’র দণ্ডমুণ্ডের কর্তার সাথে এই দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটে আরো রয়েছেন বরিশালের এক সিনিয়র অফিসার। তিনি বগুড়া এবং পাবনার নির্বাহী প্রকৌশলী থাকাকালে দুর্নীতির বরপুত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। দুর্নীতি দমন কমিশনের দাগী দুর্নীতিবাজ হিসেবে চিহ্নিত এই ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন পর্যায়ে তদন্ত চলমান আছে। সুনামগঞ্জের ২০১৭ সালের হাওড় ট্র্যাজেডীর মহানায়ক হিসেবে পরিচিত এই অফিসারকে যাতে মাঠ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে পোস্টিং না দেয়া হয় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এবং দুদক-এর অভিপ্রায় রয়েছে। এতো অভিযোগ থাকার পরেও এই মহা দুর্নীতিবাজ কি করে আবার গুরুত্বপূর্ণ পদে পোস্টিং পেয়েছে তা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।

অভিজ্ঞমহল মনে করেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী এবং সিনিয়র সচিবের ব্যাপক মনিটরিং এর ফলে সুনামগঞ্জের হাওড়সহ অন্যান্য হাওড়ে বিপুল পরিমান ধান উৎপাদন হয়েছে। যমুনা নদীর দুই তীরের প্রকল্পগুলোও যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ৬৪ জেলায় ছোট নদী ও খাল গুলো আবার প্রাণ ফিরে পেতে শুরু করেছে। পাউবোকে অধিদপ্তরে পরিণত করার স্বপ্ন দেখছে মন্ত্রণালয়। অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নেও মন্ত্রণালয় ব্যাপক দেখভাল করছে। এতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইমেজ অতীতের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠিক তখন কয়েকজন ব্যক্তির খামখেয়ালীপনা ও দুর্নীতির আয়োজন পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করতে পারে।

ভূক্তভোগীমহল এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। (চলবে)।

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন