লুকোচুরি খেলায় চাপা পড়ছে রহস্য

  15-10-2016 11:06AM



পিএনএস ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব থেকে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ১০০ কোটি ডলার চুরির চেষ্টা করে অপরাধীরা। শেষ পর্যন্ত ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করতে সমর্থ হয় তারা।

রিজার্ভ চুরি নিয়ে একটি তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হলেও তা প্রকাশ করেনি বাংলাদেশ সরকার। সর্বশেষ গত মাসে এ-সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি।

জনসমক্ষে এ প্রতিবেদন প্রকাশে বাধা প্রদানের কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, এতে করে ফিলিপাইনে পাচার হওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফেরত আনার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে ঢাকায় সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎকার একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর তা হলো, ওই প্রতিবেদনটি সম্ভবত আর কখনই জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।

শনিবারের প্রিণ্ট এবং অনলাইনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আরটিএনএন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলোঃ

এ বিষয়ে তদন্তকারী প্যানেলের দায়িত্ব ছিল, কেন বাংলাদেশ ব্যাংক চুরির এ বিষয়টি এক মাস যাবত্ গোপন রেখেছিল, তা বের করা। একই সঙ্গে এ ঘটনায় ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা জড়িত ছিল কিনা এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে, সেজন্য করণীয় নির্ধারণও তাদের এখতিয়ারে ছিল।

এ তদন্ত দলের নেতৃত্বে ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন। এক সময় তিনি এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পক্ষে থাকলেও এখন আর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবেন না। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিবেদনটি ধামাচাপা দেয়া হয়েছে।

কারণ এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাদের গাফিলতি এবং তাদের সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে পড়তে পারে। যদিও বাংলাদেশ সরকার বরাবরই রিজার্ভ চুরির জন্য হ্যাকার, ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক ও সুইফটকে দায়ী করে আসছে।

বাংলাদেশ সরকার এখনো ফিলিপাইন থেকে চুরি যাওয়া অর্থ ফেরত আনার জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এসব অর্থের অধিকাংশই পাচার করা হয় ম্যানিলার বিভিন্ন ক্যাসিনোর মাধ্যমে। অর্থ ফেরত আনার ব্যাপারে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে সার্বিক সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

গত সেপ্টেম্বরে ফিলিপাইনের একটি আদালত দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এ অর্থের কিছু অংশ, দেড় কোটি ডলার ফেরত দিতে বলেছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো পক্ষই স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেনি, কীভাবে সুইফট কোড ব্যবহার করে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে এ অর্থ চুরি করা সম্ভব হলো!

তাছাড়া ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক হ্যাকারদের এ আক্রমণ ঠেকাতে কেন ব্যর্থ হলো, তারও কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। কেউ কেউ মনে করছেন, সুইফট সিস্টেম ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরে কারো উপস্থিতি ছাড়াই ফেডারেল ব্যাংক থেকে অর্থ প্রেরণের নির্দেশ দেয়া সম্ভব হয়েছে।

আর এটি সম্ভব হলে, বৈশ্বিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার জন্য তা ভয়াবহ হুমকির কারণ হবে। কারণ বিশ্বের বড় বড় অর্থ লেনদেনের প্রায় অর্ধেক সুইফট পদ্ধতি ব্যবহার করে সম্পন্ন হয়।

সম্ভবত অপরাধীরা কোনোভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফট সিস্টেমে প্রবেশ করতে পেরেছিল। এর মধ্য দিয়ে ধারণা হয় যে, ব্যাংকের ভেতরের কেউ হয়তো এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে, যারা সুইফট সিস্টেমে প্রবেশের জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত।

বাংলাদেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ধারণা করছে, সুইফট পদ্ধতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করেছেন সুইফটের এমন কোনো কর্মকর্তা বা উপদেষ্টা এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন। যদিও সুইফট এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সূত্র: বণিক বার্তা

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন