১৮ হাজার কোটি টাকা তুলে নিলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক

  16-10-2016 03:37PM

পিএনএস ডেস্ক: বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে তুলে নিয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। গত সপ্তাহের চার কার্যদিবসে ৭ দিন থেকে ৩০ দিন মেয়াদে এ অর্থ তুলে নিতে প্রতি ১০০ টাকার জন্য ব্যয় করতে হয়েছে তিন টাকা। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে এ ব্যয়বহুল মুদ্রা ব্যবস্থাপনায় বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সূত্র মতে, মুদ্রানীতির কৌশল বাস্তবায়নের জন্য বাজারে টাকার প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ জন্য বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে গেলে অতিরিক্ত টাকা তুলে নেয়া হয়। আবার বাজারে টাকার সঙ্কট দেখা দিলে রেপোর মাধ্যমে ও বিশেষ তারল্য সহায়তার আওতায় বাজারে টাকা ছাড়া হয়।

জানা গেছে, বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে বিদেশ থেকে রেমিট্যান্স ও রফতানি আয়ের মাধ্যমে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করছে তা কাজে লাগাতে পারছে না ব্যাংকগুলো। এতে প্রতিটি ব্যাংকের হাতেই বিনিয়োগযোগ্য উদ্বৃত্ত বৈদেশিক মুদ্রা থাকছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক তার বেঁধে দেয়া সীমার অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা দিনশেষে ধরে রাখতে পারবে না। সীমার অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা ব্যাংকগুলোর হাতে থাকলে দিনশেষে হয় তাকে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বিক্রি করতে হবে, নতুবা বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হতে হবে। অন্যথায় সীমার অতিরিক্ত বৈদেশিক মুদ্রা হাতে থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংককে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে জরিমানা গুনতে হয়।

ব্যাংকারদের মতে, নতুন বিনিয়োগ নেই বললেই চলে। এতে ব্যাংকগুলো যে বৈদেশিক মুদ্রা প্রবাসী বাংলাদেশী ও রফতানিকারকদের কাছ থেকে নগদ টাকায় কিনে নিচ্ছে তা বিক্রি করতে পারছে না। আবার আন্তঃব্যাংকও মুদ্রাবাজারে ডলারের চাহিদা না থাকায় জরিমানা এড়াতে বাধ্য হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে ব্যাংকগুলো। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রতি সপ্তাহেই ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে ডলার কিনে নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে যে ডলার কিনছে তার বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে স্থানীয় মুদ্রা দিচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা কিনে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে টাকা ছাড়ায় বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাচ্ছে।

এদিকে বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা থাকে। এ আশঙ্কা থেকে এক দিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রা কিনে বাজারে টাকা ছাড়ছে অপর দিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে টাকার প্রবাহ কমাতে ব্যাংক বিলের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে টাকা তুলে নিচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত ৯ অক্টোবর ৭ দিন, ১৪ দিন ও ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে তুলে নিয়েছে ৬ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩০ দিন মেয়াদে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা, ১৪ দিন মেয়াদে ৪৭৫ কোটি টাকা এবং ৭ দিন মেয়াদে ৫ হাজার ৬২৫ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়। এসব অর্থ তুলে নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে প্রতি ১০০ টাকার জন্য পরিশোধ করা হবে ২ টাকা ৯৭ পয়সা থেকে ২ টাকা ৯৮ পয়সা। একইভাবে ১০ অক্টোবর ৩ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা এবং ১৩ অক্টোবর ৮ হাজার ৬০ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়। এর বাইরে ৯ অক্টোবর রিভার্স রেপোর মাধ্যমে ৭৫ কোটি টাকা এবং ১০ অক্টোবর ৫০ কোটি টাকা তুলে নেয়া হয়।

জানা গেছে, বাজার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এক দিকে বৈদেশিক মুদ্রা কিনছে। এতে বাজারে টাকা ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। অপর দিকে অর্থ ব্যয় করে আবার সেই টাকা তুলে নেয়া হচ্ছে। এতে প্রতি বছরই মুদ্রাব্যবস্থাপনা করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ খাতে প্রায় হাজার কোটি টাকা খরচ করছে।

বিশ্লেষকদের মতে, এ ব্যয়বহুল মুদ্রাব্যবস্থাপনা সাধারণত আগে সাময়িক সময়ের জন্য করা হতো। কিন্তু এখন তা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। আর এর অন্যতম কারণ হলো বিনিয়োগ স্থবিরতা।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন