দেশে বিস্কুটের বাজার ৫ হাজার কোটি টাকা

  04-12-2016 12:37PM

পিএনএস ডেস্ক: দেশের উদীয়মান ও দ্রুত বর্ধনশীল শিল্পের মধ্যে অন্যতম বিস্কুট শিল্প। বর্তমানে দেশের চাহিদা মিটিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারেও রফতানি হচ্ছে বিস্কুট। এখন পর্যন্ত মাঝারি ও বড় মিলিয়ে এ খাতে শতাধিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গত পাঁচ বছরে গড়ে প্রায় ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এ শিল্পের বাজার বর্তমান ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মাথাপিছু বিস্কুট গ্রহণের হার কম হওয়ায় এ খাতে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন তারা।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের মানুষের খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আসছে। প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তে প্রক্রিয়াজাত খাবারের দিকে ঝুঁকছে মানুষ। বিশেষত শহরাঞ্চলে এ প্রবণতা বেশি। আর এক্ষেত্রে মানুষের পছন্দের তালিকায় অন্যতম উপাদান হিসেবে উঠে আসছে বিস্কুট। ক্রমবর্ধমান এ চাহিদার বিপরীতে বিকশিত হচ্ছে দেশের বিস্কুট শিল্পও। এরই মধ্যে এ শিল্পের বাজার ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

বাংলাদেশে অটো ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএবিবিএমএ) সভাপতি মো. সফিকুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, প্রচলিত খাদ্যাভ্যাসের কারণে বাংলাদেশে মাথাপিছু বিস্কুট গ্রহণের হার কম। তবে এক্ষেত্রে সম্প্রতি কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।

তিনি বলেন, গত কয়েক বছরে এ শিল্পের প্রবৃদ্ধি ঈর্ষণীয় হারে বাড়ছে। ছোট ছোট ব্যক্তিপ্রতিষ্ঠান ও বেকারিতে উৎপাদিত বিস্কুট ছাড়াও এ খাতে বার্ষিক টার্নওভার ৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বড় গ্রুপও খাতটিতে বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে এসেছে। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ খাতের বাজার দ্বিগুণ হবে বলে আশা করি।

এদিকে বিস্কুট শিল্প ক্রমবিকাশমান একটি খাত হলেও মাথাপিছু বিস্কুট গ্রহণের দিক থেকে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। ফলে উন্নত বিশ্ব, এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে এ শিল্পের প্রবৃদ্ধি কম। ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা ও ভিয়েতনামে গত পাঁচ বছরে বিস্কুট শিল্পে গড়ে ১০ শতাংশেরও বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশে বিস্কুট শিল্পের প্রবৃদ্ধি কিছুটা কম।

শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি নিয়ে গবেষণাকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আইবিআইএস ওয়ার্ল্ডের তথ্য মতে, ২০১০-১৫ সাল পর্যন্ত পাঁচ বছরে বিস্কুট শিল্পের বৈশ্বিক গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। এ সময়ে উন্নয়নশীল দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২০ দশমিক ১ শতাংশ হারে। আর ভারতে গত পাঁচ বছরে ১০-১২, পাকিস্তানে ১২-১৪ ও শ্রীলংকায় ১২ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়। অথচ বাংলাদেশে একই সময়ে এ খাতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ শতাংশ।

রিপোর্টের তথ্যানুযায়ী, দক্ষিণ এশিয়ায় মাথাপিছু বিস্কুট গ্রহণে সবচেয়ে এগিয়ে শ্রীলংকা, আর তলানিতে বাংলাদেশ। শ্রীলংকায় মাথাপিছু বার্ষিক বিস্কুট গ্রহণের হার চার কেজি। বিপরীতে বাংলাদেশে এ হার ১ দশমিক ৮০ কেজি। বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে ভারতও। দেশটিতে মাথাপিছু বিস্কুট গ্রহণের হার ২ দশমিক ২ কেজি, পাকিস্তানে ২ দশমিক ৫০ কেজি ও জাপানে পাঁচ কেজি। তবে বাংলাদেশে মাথাপিছু বিস্কুট গ্রহণের এ নিম্নহারকেই সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, ক্রমবর্ধমান নগরায়ণের পাশাপাশি বাড়ছে মানুষের দৈনন্দিন ব্যস্ততাও। এ কারণে মানুষের কাছে প্রক্রিয়াজাত খাবারের আবেদন বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। ফলে আগামী পাঁচ বছরে দেশের মানুষের মধ্যে বিস্কুট গ্রহণের হার দ্বিগুণে উন্নীত হতে পারে, যা নিশ্চিতভাবে খাতটির বিকাশে বড় ভূমিকা রাখবে।

দেশে বিস্কুট শিল্পসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন বিএবিবিএমএ জানিয়েছে, গত পাঁচ বছরে দ্রুতই বেড়েছে দেশের বিস্কুট খাত। বর্তমানে দেশে ছোট-মাঝারি ও বড় মিলিয়ে পাঁচ হাজারের বেশি বিস্কুট উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এর অধিকাংশই প্রতিষ্ঠা হয়েছে গত পাঁচ বছরের মধ্যে। এছাড়া ছোট পরিসরে ব্যবসা পরিচালনাকারী আগের অনেক প্রতিষ্ঠানই এ সময়ের মধ্যে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে বলেও জানায় সংগঠনটি।

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন