ইসলামী ব্যাংকের আকস্মিক নিয়োগ

  10-01-2017 07:14AM

পিএনএস : ইসলামী ব্যাংকের শীর্ষ পদে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে আকস্মিকভাবে। চেয়ারম্যানসহ এমডি ও ডিএমডি পদে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়। অতি দ্রুততার এসব নিয়োগের অনুমোদন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এক এমডি ও চার ডিএমডি নিয়োগের অনুমোদন নিতে রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি পাঠায় ইসলামী ব্যাংক। যাচাই-বাছাই শেষে নিয়োগের অনুমোদন করে রোববারই পাল্টা চিঠি পাঠানো হয় প্রতিষ্ঠানটিতে। সোমবার নতুন এমডি যোগদান করেছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদের সভায় পদত্যাগপত্র পাঠান ইসলামী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান। তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নতুন এমডি হিসেবে ইউনিয়ন ব্যাংকের এমডি আব্দুল হামিদ মিঞাকে নিয়োগের জন্য মনোনীত করে পর্ষদ। এ ছাড়া চার এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্টকে (ইভিপি) পদোন্নতি দিয়ে ডিএমডি নিয়োগ করা হয়। নতুন চার ডিএমডি হলেন কোম্পানি সচিব আবু রেজা মো. ইয়াহিয়া, করপোরেট ডিভিশন-১ প্রধান মোহন মিয়া, করপোরেট ডিভিশন-২-এর প্রধান মনিরুল মওলা ও মোহাম্মদ আলী।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ইসলামী ব্যাংকে কাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে। বিধি মোতাবেক পরিবর্তনের বিষয়টি জানানোর বিষয় আছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে তারা তা জানিয়েছে। যিনি নতুন ব্যাংকের চেয়ারম্যান হয়েছেন তিনি আগেও একটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন। এমডি পরিবর্তনের বিষয়ে তারা আমাদের কাছে অনুমোদন চেয়েছে, আমরা অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি।

ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী এমডি নিয়োগের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন প্রয়োজন হয়। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ডিএমডি নিয়োগেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক। গত ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে জনস্বার্থ, আমানতকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকর কার্যকলাপ প্রতিরোধে ইসলামী ব্যাংকে এ বাধ্যবাধকতা আরোপ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকের জন্য ক্ষতিকর ও বিতর্কিতরা যেন ব্যাংকে নিয়োগ না পান এজন্য যোগ্য লোককে নিয়োগ দিতে এ বিশেষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। নিয়মানুযায়ী এমডি ও ডিএমডি নিয়োগের অনুমোদন নিতে রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে চিঠি দেয় ইসলামী ব্যাংক।

ব্যাংকের শীর্ষ পদগুলোয় নিয়োগ ও নিয়োগ বাতিলে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে সার্কুলার জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সার্কুলারে বলা হয়, প্রধান নির্বাহী নিযুক্তির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহীকে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া বরখাস্ত, অব্যাহতি বা অপরসারণ করা যাবে না। তবে যদি কোনো এমডি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে পদত্যাগ করতে চান তাহলে তাকে কমপক্ষে এক মাসে আগে পদ ছাড়ার কারণ উল্লেখ করে অব্যাহতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের কাছে আবেদন করতে হবে। নোটিশের অনুলিপি বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠাতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ব্যতীত এমডিকে পদ থেকে কোনোভাবেই সরানো যাবে না।

ইসলামী ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান বৃহস্পতিবার শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে বৃহস্পতিবার বোর্ডে পদত্যাগপত্র পাঠান। বোর্ড তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে নতুন এমডি নিয়োগ করেন। এদিকে নতুন এমডি আবদুল হামিদ মিঞাকে অবশ্যই ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে পদত্যাগ করতে হবে। তার ক্ষেত্রে এক মাসের নোটিশ দেওয়ার বিধিবিধান প্রযোজ্য।

এ বিষয়ে শুভঙ্কর সাহা বলেন, ইসলামী ব্যাংকের এমডি শারীরিক অক্ষমতার কথা বলে পদত্যাগ করেছেন। তিনি যদি বাংলাদেশ ব্যাংকে কোনো অভিযোগ করেন তাহলে আমরা বিষয়টি দেখব। নিয়ম-কানুন মেনেই সব কিছু হয়েছে। নিয়মের ব্যত্যয় হলে সে বিষয়ে দেখবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এদিকে ব্যাংক সূত্র জানায়, সোমবার ইসলামী ব্যাংকে যোগদান করেছেন মো. আবদুল হামিদ মিঞা। এর আগে ইউনিয়ন ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও শিল্প ব্যাংকের (বর্তমানে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক) এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে গবেষণা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ টি বোর্ড, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংকে বিভিন্ন পদমর্যাদায় দায়িত্ব পালন করেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স এবং যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন।
উৎসঃআমাদের সময়

পিএনএস/হাফিজুল ইসলাম

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন