ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি কমেই চলছে

  28-01-2017 06:58PM

পিএনএস, এবিসিদ্দিক : ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রফতানি কমেই চলছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ভারতে পণ্য রফতানি কমেছে ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো(ইপিবি) সূত্রে জানা যায়, এসময়ে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আর প্রকৃত রফতানি দাড়ায় ৬৮৯ দশমিক ৬২ মিলিয়ন ডলার। আগের অর্থবছরের একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রফতানি হ্রাস পায় ৪ দশমিক ২৮ শতাংশ। ভারত থেকে বার্ষিক পণ্য আমদানিতে ব্যয় (গত ৫ বছরের গড় হিসাবে) প্রায় ৭ হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার, আর ভারতের বাজারে রফতানি হয় ৭ শত মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চেয়েও কম। সার্বিক বিবেচনায় ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েই চলছে।

ভারতীয় পণ্যের জন্য বাংলাদেশের বাজার উম্মুক্ত হলেও বাংলাদেশি পণ্য ভারতের বাজারে রফতানিতে আছে নানা বাধা। ভারতের বাজারে বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় মাত্র ৬ টি পণ্য। আর সেগুলো হচ্ছে-পাট ও পাটজাত পণ্য, তৈরি পাশাক, নীটওয়্যার, প্লাষ্টিক পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য এবং হোমটেক্স। অপরদিকে ভারত থেকে বৈধ আর অবৈধ পথে কত রকমের পণ্য আসে তার কোন সঠিক হিসাব নেই। বৈধভাবে ভারত থেকে আসে বাস, ট্রাক, ট্রাক্টর, কার, অটোরিকশা (সিএনজি), মোটরসাইকেল, কেমিক্যাল, ক্লিংকার, ইলেকট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল পণ্য, ভারী যন্ত্রপাতি, গার্মেন্ট মেশিনারিজ, ডাল, চিনি, চাল, ডাল,পেয়াজ, রসুন, নানা রকম মসলা, ওষুধ, গম ,মেডিকেল ইকুইপমেন্ট, রাইস মিলের যন্ত্রপাতি, ছাপাখানার যন্ত্রপাতি, বিভিন্ন ধরনের বস্ত্র, ইমিটেশন গহনা, নানা ধরনের ফলমূল, স্টিলের তৈজসপত্র, ডায়িং সামগ্রী, জুটমিল-টেক্সটাইল মিলের যন্ত্রপাতি, ওষুধকারখানার কাঁচামাল, কয়লা, কাঠ, লোহাসহ বিভিন্ন ধরনের ধাতব বস্তু ইত্যাদি।

ব্যবসায়ীদের অভিমত, প্রতিবছর ৪-৫ হাজার কোটি টাকার পণ্য চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে আসছে। অন্যদিকে দেশ থেকে চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত যায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে আমদানি করা পণ্য। এর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেল, ভোজ্যতেল, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী। প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে সারও চোরাচালানের মাধ্যমে ভারতে যাচ্ছে। চোরাচালানে যায় ইলিশ মাছও। ১৯৭২ সালে ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু শুরু থেকে এ পর্যন্ত ভারতের সাথে বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বাংলাদেশের প্রতিকূলে রয়েছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির সুবাদে ভারতের সব ধরনের পণ্য বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করতে পেরেছে। কিন্তু ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও সব পণ্য ভারতের বাজারে অবাধে প্রবেশ করতে পারেনি। আবার যেসব পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশ করতে পেরেছে সেগুলো বেশি করে সেখানে নিলে ডাম্পিংয়ের অভিযোগ তুলে সমস্যা সৃষ্টি করা হয়। বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ‘রহিমআফরোজ’র ব্যাটারির ব্যাপক চাহিদা থাকায় এই ব্যাটারি বেশি পরিমাণে ভারতে রপ্তানি করা হলে রহিমআফরোজের বিরুদ্ধে ডাম্পিংয়ের অভিযোগ তুলে মামলা করা হয়। এ মামলা ভারতের হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল।

অতীতে ভারতের পণ্য যেভাবে অবাধে বাংলাদেশে আসতে পেরেছে তেমনি বাংলাদেশের পণ্য যদি অবাধে ভারতে প্রবেশ করতে পারত, তা হলে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি এত ব্যাপক হতো না বলে দেশের ব্যবসায়ী মহল মনে করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের মধ্য দিয়ে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতার সম্পর্কে যে নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছে তার ভিত্তিতে বাংলাদেশ বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর ক্ষেত্রে বিভিন্ন সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে আমাদের রপ্তানি বাড়াতে এবং আমদানি কমাতে হবে। সরকার ভারতের সকল অংশে রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির সম্ভাবনাকেও কাজে লাগাবে। ভারত-বাংলাদেশ এই দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য আনতে প্যারাট্যারিফ ও ননট্যারিফ প্রতিবন্ধকতা পরিহারে আন্তরিকভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।

সাফ্টা চুক্তির আওতায় ভারত বাংলাদেশের ২৫টি আইটেম ছাড়া সকল পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার দিলেও স্থানীয়ভাবে শুল্কারোপ করায় বাংলাদেশি পণ্য ভারতে প্রবেশ করতে পারছে না। বাংলাদেশ ভারত থেকে প্রায় ৩ হাজার আইটেম পণ্য আমদানি করছে। তিনি টেকসই আঞ্চলিক উন্নয়নের স্বার্থে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব প্রদান করেন।

পিএনএস/মো: শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন