পিএনএস, এবিসিদ্দিক: পদ্মা সেতু ইস্যুতে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতি সরকার আবারোও ক্ষুব্ধ হয়ে হয়ে উঠেছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি হয়নি, এই মর্মে কানাডার আদালতে রায় হওয়ার পরই সরকার বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনা শুরু করে। অপরদিকে বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশ সরকারকে চলতি অর্থবছরে আর্থিক সাহায্য বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। গত অক্টোবর মাসে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মিঃ জিম ইয়ং কিম ঢাকা সফরকালে বাংলাদেশকে ঋণ বাড়ানোর কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাথে বৈঠককালে বলেন, “বিশ্ব ব্যাংক বিভিন্ন দেশে ঋণ সহায়তা ৫০ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তার অংশ হিসেবে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ সহায়তাও ৫০ শতাংশ বাড়ানো হবে।”এর বাইরে শিশু অপুষ্টি দূর করতে বাংলাদেশকে আগামী দুই বছরে বাড়তি ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।
বিশ্ব ব্যাংক তিন বছরের প্যাকেজে ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসিসটেন্স (আইডিএ) হিসেবে বাংলাদেশকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। এর আওতায় বাংলাদেশ এ পর্যন্ত ২৪ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে। ২০১৪-১৫ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আইডিএ-এর আওতায় চার বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিশ্ব ব্যাংক। এর মধ্েয ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ৯৪৪ মিলিয়ন এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার ছাড় করা হয়। পুরো প্যাকেজের প্রতিশ্রুতির মধ্যে মোট কী পরিমাণ পাওয়া গেল, তা হিসাব করা যাবে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছর শেষে বর্তমানে আইডিএ প্যাকেজের মেয়াদপূর্তির পর। কিমের ঢাকা সফরকে দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশের সাফল্েযর ‘স্বীকৃতি’ হিসেবে দেখেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী মুহিত বলেছিলেন, “বিশ্ব ব্যাংক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বাংলাদেশের যোগাযোগসহ সব খাতেই বিশ্ব ব্যাংক সহায়তা দিয়ে থাকে। পদ্মা সেতুতে যে তহবিল বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়ার কথা ছিল, তারা অন্যান্য প্রকল্পে সেটি দিয়েছে। এর মাধ্যমে বিষয়টির সমন্বয় হয়েছে।”পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে যে ‘জটিলতা’ ছিল, তা কেটে গেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
কিমের দিকে তাকিয়ে মুহিত বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকের কাছে আমাদের অনেক প্রত্যাশা। আশা করছি তারা সে প্রত্যাশা পূরণ করবে।” ২৯১ বিলিয়ন ডলারে ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল বিশ্ব ব্যাংকের। তবে প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে তারা মাঝপথে অর্থায়ন স্থগিত করলে শুরু হয় তিক্ততার। দীর্ঘ টানাপোড়েন শেষে ২০১৩ সালের শুরুতে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংককে ‘না’ বলে দেয়। নকশা অপরিবর্তিত রেখে নিজস্ব অর্থায়নেই এখন পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে। পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন বাংলাদেশ ফিরিয়ে দেওয়ার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে কিম বিষয়টি এড়িয়ে যান ।
তিনি বলেন, “আমরা বাংলাদেশের উন্নয়নের সঙ্গেই আছি। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রয়েছে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।” জিম ইয়ং কিম তার বক্তব্যের শুরুতেই বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। সেটি সেলিব্রেট করতেই আমি বাংলাদেশে এসেছি। দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্যের জন্যই এবার ‘বিশ্ব দারিদ্র্যেমুক্ত দিবস’ বাংলাদেশে পালন করছি।”
পিএনএস/আনোয়ার
বিশ্ব ব্যাংকের সমালোচনায় আর্থিক সহায়তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে নাতো?
17-02-2017 09:55AM