ব্যাংক আমানতের সুদের হার কমছেই, ক্ষুদ্র আমানতকারিদের মাথায় হাত

  13-03-2017 10:22AM

পিএনএস, নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যাংক আমানতের সুদ হার কমেই চলেছে। ২৫ সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকে মেয়াদী আমানতের (Fixed Deposit Reciept-FDR) সুদ হার গড়ে নেমে এসেছে পাঁচ শতাংশের কাছাকাছি। এর উপর আছে উৎসে আয়কর। এই কর কেটে নেওয়ার পর আমানতকারীর ভাগে পাঁচ শতাংশ মুনাফাও জোটে না।

অথচ অনেকে পেনশনের টাকা, জমি বা সম্পদ বিক্রির টাকা ব্যাংকে জমা রেখে তার সুদের টাকায় সংসার চালিয়ে থাকেন। ব্যাংক আমানতের সুদের হার কমে যাওয়ায় এরা পড়েছেন মহাসংকটে। ব্যাংকের বাইরে শেয়ারবাজার কিংবা অন্য কোনো খাতে বিনিয়োগকে অনেকেই ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। এছাড়াও আছে পদে পদে ঝক্কি, লোকসান কিংবা প্রতারণার ঝুঁকি। অনেকেই এ ঝুঁকি নিতে চান না। মুনাফা কম হলেও হন্যে হয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র খোঁজেন। ব্যাংকে টাকা রাখেন।

কিন্তু সুদের হার যে হারে কমিয়ে আনা হয়েছে তাতে ক্ষুদ্র সঞ্চয় কারিদের মাথায় হাত। অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী। পেনশনের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট (এফডিআর) করে রেখেছেন বেসরকারি একটি ব্যাংকে। এফডিআর থেকে তিন বছর আগে প্রতি মাসে মুনাফা হিসেবে উত্তোলন করতেন ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু ধারাবাহিক আমানতের সুদ বা মুনাফার হার কমায় এখন পাচ্ছেন মাত্র ১৩ হাজার টাকা। কিন্তু এ সময়ে জীবনযাত্রাসহ সব ধরনের ব্যয় বাড়লেও কমেছে ব্যাংকের মুনাফার হার।

ফলে সংসারের ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন আবদুল আলিম। সংসার নির্বাহে এখন মাঝে মধ্যেই তাকে ধারদেনা করতে হচ্ছে। বিনিয়োগ মন্দার কারণে ব্যাংকিং খাতে বাড়ছে অতিরিক্ত তারল্য ও অলস টাকা। ফলে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা ব্যয় ও মুনাফা সহনীয় পর্যায় রাখতে ধারাবাহিকভাবে কমানো হচ্ছে আমানতের সুদ বা মুনাফার হার। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ আমানতকারীরা। তাই আমানতের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে রাখা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকিং খাতে সার্বিক আমানতের সুদহার ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ। এর বিপরীতে ঋণের সুদহার ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। তবে সার্বিক আমানত হার ৫ শতাংশের ওপর থাকলেও বিদেশি ব্যাংকের সুদহার নেমেছে ৫ শতাংশের নিচে।

এমনকি অনেক ব্যাংক ১-২ শতাংশ সুদ বা মুনাফা দিচ্ছে আমানতকারীদের। আমানতের সুদহার ৫ শতাংশের নিচে থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত মালিকানাধীন অগ্রণী ও সোনালী ব্যাংক। ব্যাংক দুটির আমানতের হার ৪ দশমিক ১১ ও ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের আমানতের হার ৪ দশমিক ২২ শতাংশ, সিটি ব্যাংকের ৪ দশমিক ৬১, ইউনাইটেড কমার্সিয়াল ব্যাংকের ৪ দশমিক ৩২, পূবালী ব্যাংকের ৪ দশমিক ৮৩, উত্তরা ব্যাংকের ৪ দশমিক ৯৩, ইস্টার্ন ব্যাংকের ৪ দশমিক ৩৫, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ২ দশমিক ৪০, ট্রাস্ট ব্যাংকের ৪ দশমিক ৮৫, ব্র্যাক ব্যাংকের ৩ দশমিক ৯০ এবং আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ৩ দশমিক ০৯ শতাংশ। বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সুদের হার ১ দশমিক ১৯ শতাংশ, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ২ দশমিক ৭৪, হাবিব ব্যাংকের ৪ দশমিক ২৫, কমার্সিয়াল ব্যাংক অব সিলনের ৩ দশমিক ০৯, উরি ব্যাংকের ২ দশমিক ২৪, এইচএসবিসির ১ দশমিক ৫৩ এবং ব্যাংক আল ফালাহর ৪ শতাংশ।

দেশে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমানতের সুদ দিচ্ছে চতুর্থ প্রজন্মের ফার্মার্স ব্যাংক। আমানতকারীদের ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ সুদ দিচ্ছে ব্যাংকটি। আর সবচেয়ে কম সুদ দিচ্ছে বিদেশি সিটি ব্যাংক এনএ। ব্যাংকটি আমানতের হার মাত্র দশমিক ১৩ শতাংশ। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমানতের মুনাফা দিয়ে অনেকে জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করে থাকেন। তাই আমানতের সুদহার ৫ শতাংশের নিচে থাকা উচিত নয়। যেখানে দেশে বর্তমান মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের উপরে সেখানে আমানতের সুদহার ৫ শতাংশ বা তার নিচে থাকা অর্থনীতির জন্য ভালো নয়। এতে অর্থ অপ্রয়োজনীয় খাতে ব্যয় হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে আমানতের সুদহার কমপক্ষে ৬ শতাংশ রাখা উচিত বলে মত এ অর্থনীতিবিদের। আমানতের সুদ না কমিয়ে ব্যাংকগুলোর পরিচালন ব্যয় কমানো প্রয়োজন উল্লেখ করে সাবেক এ গভর্নর আরও বলেন, আমানতের সুদ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে ঋণের সুদ কমানোর কোনো যুক্তি হতে পারে না। ঋণের সুদ কমানোর জন্য স্প্রেড (আমানত ও ঋণের সুদহারের ব্যবধান) কমানো উচিত।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন