নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার পর সাধারণ ভোক্তার উপরই চাপটা পড়বে

  16-03-2017 09:42AM


পিএনএস, এবিসিদ্দিক: আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন ভ্যাট আইন। ১৯৯১ সালের তৎকালিন অর্থমন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান ভ্যাট চালু করেছিলেন। তখন প্রধান বিরোধী দল এর তীব্র সমালোচনা করেন। এখন ভ্যাটই হচ্ছে রাজস্ব আদায়ে প্রধান উৎস। নতুন ভ্যাট আইনে রাজস্ব মোট রাজস্ব আদায়ের হার ৪০ শতাংশের উপরে নিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য।
চলতি অর্থবছরে এখাত থেকে রাজস্বর ৩৫ দশমিক ৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। এছাড়া আমদানি শুল্ক বাবদ ১১ দশমিক ১ শতাংশ, আয়কর ৩৫ দশমিক ৪ শতাংশ, সম্পুরক শুল্ক ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ আর অন্যান্য খাত থেকে ধরা হয়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে সর্বাধিক রাজস্ব প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ভ্যাট থেকে যার পরিমান ৭২ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের মূল বাজেটে এখাত থেকে প্রাপ্তি ধরা হয়েছিল ৬৪ হাজার ২৬২ কোটি টাকা যা পরে সংশোধিত বাজেটে কমে আসে ৫৩ হাজার ৯১৩ কোটি টাকায়।

তার আগের অর্থবছরে(২০১৪-১৫) এখাত থেকে রাজস্ব আসে ৪৫ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা। ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার অভিযোগ আছে। সংবাদ মাধ্যমের খবর-চার মোবাইল কোম্পানীর ২ হাজার ৪৯ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকি, বাণিজ্য মেলায় ৭০ শতাংশ ভ্যাট ফাঁকি, ভূয়া চালানে ভ্যাট ফাঁকি ওয়েস্টার্ন গ্রিলের, কে জেড জুয়েলারির ভ্যাট ফাঁকি, সাড়ে ৫ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি বসতি হরাইজন ভবনের, ৫৭ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকি গোল্ডেন হাউসের এধরণে খবর নিত্য-নৈমিত্যিক। কিছু কিছু ব্যবসায়ী ঢাকা শহরে প্রকাশ্যে দিবালোকে ভ্যাট চালান (মূসক-১১ ও মূসক-১১/ক) ছাড়া পণ্য পরিবহন করে থাকে, যা ব্যাপক ভ্যাট ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতারই বহির্প্রকাশ। ডুপ্লিকেট বা নকল ভ্যাট চালান ব্যবহার করা। একই ভ্যাট চালান একাধিক বার ব্যবহার করা। পণ্য বিক্রির তথ্য বিক্রয় রেজিস্ট্রারে সঠিক উল্লেখ না করা বা আংশিকভাবে লিপিবদ্ধ করা। হিসাবযন্ত্র বা ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্ট্রার (ইসিআর) ও পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিন ব্যবহার না করা। ইসিআর এবং পিওএস নষ্ট করে রাখা।

আবার ইসিআর বা পিওএস চালান ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা থাকলেও, সে চালান এবং মূসক-১১ চালান দুটোই ব্যবহার করা, দাখিলপত্র প্রদানের সময় ইসিআর এবং পিওএস চালান সংযুক্ত করা। নিজস্ব বিক্রয় ভাউচার ব্যবহার ও ভোক্তাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে তার একটি বড় অংশ সরকারি কোষাগারে জমা না দেওয়া বা সময়মতো প্রদান না করা। সেবা খাতের হোটেল, রেস্টুরেন্ট, চাইনিজ রেস্তোরাঁ, ফাস্টফুডের দোকান, ক্যাটারিং সার্ভিসং, বিরিয়ানি হাউস, বিউটি পার্লার, মিষ্টির দোকান, ডেকোরেটর ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান প্রতিদিনের বিক্রয় তথ্য ছোট ছোট কাঁচা স্লিপে রাখে, এই তথ্যপ্রমাণাদি যাতে খুঁজে না পাওয়া যায়— সে জন্য লুকিয়ে রাখেন ব্যবসায়ীরা। ক্রয়-বিক্রয় রেজিস্ট্রার ও ভ্যাট চালানসহ কোনো ধরনের হিসাব এবং দলিলাদি ব্যবহার বা সংরক্ষণ না করা। জানা গেছে, সারা দেশে ২৫ লাখ দোকান আছে।

কিন্তু ভ্যাট দেন মাত্র ৬০ হাজার দোকান মালিক। এই ভ্যাট ফাঁকি বন্ধে সারা দেশের সব দোকানে ইসিআর ও পিওএস মেশিন স্থাপনের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি বাধ্যতামূলক করেছে সরকার। দোকান মালিকদের, তাদের ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে ইসিআর মেশিন স্থাপন নিশ্চিত করতে বলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

তবে যেসব দোকান মালিক ইসিআরের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি না করে ভ্যাট ফাঁকি দেবেন, তাদের চিহ্নিত করতে মাঠে সক্রিয় রয়েছেন ভ্যাট গোয়েন্দারা। তথ্যমতে, দোকান বা বিক্রয় প্রতিষ্ঠানে পণ্য বিক্রিতে হিসাবযন্ত্র হিসেবে ইসিআর ও পিওএস ব্যবহার করা হয়। এ দুই যন্ত্রের মাধ্যমে দোকানে প্রতিদিন কত টাকা বিক্রি ও কত টাকা ভ্যাট আদায় করা হয়েছে, তার হিসাব রাখা হয়। কিন্তু দেশের অধিকাংশ দোকান মালিকই তাদের প্রতিষ্ঠানে হিসাব-যন্ত্রের ব্যবহার করেন না। কেউ কেউ ব্যবহার করলেও, ভ্যাট ফাঁকি দিতে গিয়ে রাজস্ব প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কখনো কখনো বলেন, তার ইসিআর মেশিনটি নষ্ট। ভ্যাট দেয় সাধারণ মানুষ। সব শ্রেণীর পণ্য ক্রেতারাই ভ্যাট দেন, কিন্তু পকেট ভরে বিক্রেতাদের। আর যিনারা আদায় করেন তাদেরও।

আসছে নতুন আইনে ভ্যাটের পরিমান বাড়ানো হবে, ক্রেতা সাধারণ বেশি টাকা দেবে আর পকেট ভরবে বিক্রেতাদেরই।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন