ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে টাকা

  27-03-2017 09:46AM


পিএনএস ডেস্ক: মার্কিন ডলারের বিপরীতে ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে টাকা। দর বাড়ছে ডলারের। গত এক বছরে প্রতি ডলারের দর এক দশমিক ৫৩ শতাংশ বেড়ে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে এখন ৭৯ টাকা ৬৩ পয়সা। ডলারের দরবৃদ্ধি রফতানিকারক ও রেমিট্যান্স গ্রহীতাদের জন্য খুশির খবর হলেও কিছুটা চাপে পড়েন আমদানিকারকরা। কেননা, তাদের পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। চাহিদার তুলনায় ডলারের সরবরাহ কম থাকায় ডলারের এ শক্তিশালী অবস্থান। ডলারের বাড়তি চাহিদা মেটাতে দীর্ঘসময় পর কেন্দ্রীয় ব্যাংক ৮০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে।

রফতানিকারকদের সংগঠন এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, অনেক দেশ রফতানিকারকদের প্রতিযোগীর সক্ষম করতে ডলারের বিপরীতে নিজেদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন করেছে। পার্শ্ববর্তী ভারত ৪০ শতাংশ এবং তুরস্ক ৬৯ শতাংশ অবমূল্যায়ন করেছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন এ ধরনের দাবি থাকলেও তা করা হয়নি। এখন বাজার চাহিদার প্রেক্ষাপটে ডলারের দর বৃদ্ধিটা রফতানিকারকদের জন্য ইতিবাচক। তিনি বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশের রফতানি বাড়ছে। নীতি সহায়তার মাধ্যমে রফতানি আরও কীভাবে বাড়ানো যায়, তা ভাবতে হবে।

বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজনে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে হস্তক্ষেপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। অভ্যন্তরীণ চাহিদার ফলে দীর্ঘ সময় পর গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ৮০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। অবশ্য একই সময়ে বাজার থেকে কিনেছে ৩৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। আগের ত্রৈমাসিকে বাজার থেকে ১৫১ লাখ ডলার কিনলেও কোনো ডলার বিক্রির প্রয়োজন পড়েনি। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থবছর ৪১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। তার আগের অর্থবছর কেনা হয় ৩৪০ কোটি ডলার। বিপুল পরিমাণের এ ডলার কিনলেও আগের দুই অর্থবছরে বাজারে কোনো বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রির প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে চলতি মাসের শুরুর দিকে প্রতি ডলার বিক্রি হয়েছিল ৭৯ টাকা ৩৯ পয়সা দরে। তবে প্রায় প্রতিদিনই একটু একটু বেড়ে গত বৃহস্পতিবার দর ওঠে ৭৯ টাকা ৬৩ পয়সায়। আগের মাসের ঠিক একই দিন প্রতি ডলার বিক্রি হয় ৭৯ টাকা ৩০ পয়সায়। মূলত গত ৯ জানুয়ারির পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই দু-এক পয়সা করে ডলারের দর বাড়ছে। ওইদিন প্রতি ডলার ৭৮ টাকা ৭০ পয়সা দরে বিক্রি হয়। এর আগে দীর্ঘ সময় ধরে দর ওঠানামার মধ্যে ছিল। আমদানি, রফতানি, বিল কালেকশন ও রেমিটাররা আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে বিদ্যমান দরের কাছাকাছি দামে ডলার পেলেও ক্যাশ বা নগদ বেচাকেনায় বেশ পার্থক্য থাকে।

বেসরকারি খাতের ব্যাংক এশিয়ার এমডি আরফান আলী বলেন, ডলারের বিপরীতে বিশ্বের অনেক দেশের মুদ্রামান কমলেও দীর্ঘদিন ধরে টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে। এখন ধীরে ধীরে টাকার বিপরীতে ডলার শক্তিশালী হওয়াটা ভালো। এতে রফতানিকারকরা সুবিধা পাবেন। যদিও অনেক সময় এ ধরনের প্রবণতা আমদানি ব্যয় বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ তৈরি করে। তবে বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বেশিরভাগ পণ্যের দাম সহনীয় রয়েছে। ফলে সে ধরনের আশঙ্কা আপাতত নেই।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সম্প্রতি গত অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকের তথ্যের আলোকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রফতানি প্রবৃদ্ধি মন্থর হওয়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ নিন্মগামী হওয়ায় এবং আমদানি বেশ বেড়ে যাওয়ায় বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থেকে ডিসেম্বরে ঘাটতিতে পড়েছে। টাকার ওপর যা অতিমূল্যায়ন চাপ উপশম করে রফতানিকারকদের সামর্থ্য বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) প্রবাসীরা ৮১১ কোটি ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেশে পাঠিয়েছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ১৬৬ কোটি ডলার কম। ২০১৫-১৬ অর্থবছরেও রেমিট্যান্স কমেছিল ৩৯ কোটি ডলার। একই সময়ে রফতানি আয় হয়েছে দুই হাজার ২৮৪ কোটি ডলার। আগের বছরের চেয়ে যা মাত্র ৭১ কোটি ডলার বেশি। গত জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে আমদানি বেড়েছে ৯ শতাংশের বেশি। অন্যদিকে, রফতানি বেড়েছে ৩ শতাংশ। এ সময় রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ শতাংশ। এতে করে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে যে প্রবৃদ্ধি হয়েছে, ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে তার চেয়ে বেশি। এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে নেওয়া প্রচুর বিদেশি ঋণ পরিশোধে ডলারের বাজারে কিছুটা চাপ তৈরি হওয়ায় দাম বাড়ছে।

বাজার থেকে ডলার কিনলে স্বাভাবিকভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ বা রিজার্ভ বাড়ে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে ডলার কেনার প্রবণতা কমে যাওয়ায় রিজার্ভ আগের মতো বাড়ছে না। গত নভেম্বর থেকে রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল হয়ে আছে। গত বৃহস্পতিবার দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩২ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। আগের মাসের একই দিন শেষে যা ৩২ দশমিক ৫৬ বিলিয়ন ডলার ছিল। সূত্র: সমকাল

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন