পিএনএস ডেস্ক: এক শ্রেণীর অসাধু মাছ ব্যাবয়ীরা বেশি লাভের আশায় যখন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফরমালিন যুক্ত মাছ বিক্রি করে যাচ্ছে। তখন ভিন্ন উদ্যোগ নিল মোহনপুর উপজেলার মাছ উৎপাদনকারী ও ব্যবসায়ীরা।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাছ চাষী ও ব্যবসায়ীরা ফরমালিন মুক্ত তাজা মাছ সরবরাহ করছে ঢাকার বিভিন্ন পাইকারী ও খুচরা বাজারগুলোতে। তাদের এই উদ্যোগে খুশি ক্রেতা ও বিক্রেতারা। তাই ফরমালিন মুক্ত তাজা মাছের ব্যাপক চাহিদা বেড়েছে রাজধানীর বাজারগুলোতে।
জানা গেছে, ফরমালিন যুক্ত মাছসহ বিভিন্ন ফলমূল না খাওয়ার জন্য সরকার জনগণকে সচেতন করার লক্ষে নানা পরিকল্পনা ও প্রচার করলেও এক শ্রেণীর অসাধু মাছ বিক্রেতারা বেশি মুনাফার জন্য মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় মৃত মাছ সরবরাহ করার জন্য বরফের বদলে মাছে বিষাক্ত কেমিক্যাল ফরমালিন ব্যবহার করছে। ফলে এই ফরমালিন যুক্ত মাছ খেয়ে মানব দেহে ক্যান্সারসহ জটিল ও কঠিন রোগের সৃষ্টি হয়ে থাকে। এমনকি বিশেষজ্ঞদের মতে, ফরমালিন যুক্ত মাছ খেলে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ বিষয়ে সরকার মৎস্য সেক্টরের মাধ্যমে মানুষকে বিষাক্ত কেমিক্যালযুক্ত মাছসহ অন্যান্য সামগ্রী পরিহার করার লক্ষে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ফরমালিন ব্যবহারকীদের আইনী শাস্তির বিধান থাকলেও এর ফাঁক দিয়ে অপরাধকারীরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থার মধ্যে মোহনপুরে উপজেলা মৎস্য চাষী ও বিক্রেতাদের এই রকম উদ্যোগ প্রসংশনীয় মনে করছে সচেতন মহল।
মোহনপুর উপজেলার কালীগ্রাম গ্রামের মৎস্য চাষী শুকুর আলী জানান, আগে আমরা মাছ পুকুর থেকে ধরে দূরের পাইকারদের কাছে বিক্রি করতাম। কিন্তু যখন জানতে পারলাম কিছু অসাধু পাইকাররা মাছ বহনের সময় বিষাক্ত কেমিক্যাল ফরমালিন ব্যবহার করে। সেই কারণে বর্তমানে মাছ পুকুর থেকে আহরণ করে উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহনে পানির ব্যবস্থা করে জীবন্ত মাছ সরবরাহ করছি। মৎস্য চাষী শরিফুল ইসলাম বলেন, তাজা মাছ বাজারজাত করলে একদিকে যেমন বাজারে মাছের মূল্য বেশি পাচ্ছি, তেমনি ক্রেতাদের মাঝে ফরমালিন মুক্ত মাছ দিতে পেরে আমরা আনন্দিত। এ পন্থায় বর্তমানে ক্রেতারা মৃত মাছ ক্রয় করতে অনিহা প্রকাশ করে।
বিদ্যাধরপুর গ্রামের মাছ চাষী আব্দুল আলিম তাজা মাছ পরিবহনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, প্রথমে পিকআপ ভ্যান অথবা ট্রাকের পেছনে ভেতরের অংশে ভাল ভাবে ত্রিপল/পলিথিলিন বিছিয়ে দিয়ে প্রযোজনীয় পরিস্কার বিশুদ্ধ নূলকুপের পানি দিতে হবে। পরবর্তীতে পানির গুণগত মান বজায় রাখার জন্য গ্লুকোজ এবং অক্সিফ্লো ব্যবহার করতে, তাজা মাছ পানির ভেতর রেখে ঢাকায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
মোহনপুর উপজেলা সহকারী মৎস্য কর্মকর্তা তারিক মাসুম রেজা বলেন, পরিবর্তনশীল বিশ্বে পরিবেশ বান্ধব মাছ চাষ যেমন গুরূত্বপূর্ণ বিষয়, তেমনি উৎপাদিত মাছ নিরাপদে ভোক্তার নিকট সরবরাহ করাও একটি গুরূত্বপূর্ণ বিষয়। বর্তমান অবস্থায় তাজা কার্পজাতীয় মাছ ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরের মৎস্য আড়ৎগুলোতে সরবরাহ পদ্ধতি চালু করার জন্য আমি উদ্যোগী চাষীদের সার্বিক সহযোগিতা করি এবং সাধুবাদ জানাই।
তিনি আরো বলেন, তাজা মাছ বাজারে সরবারহ করলে বিক্রেতারা বাজারে দামি বেশি পাচ্ছে। মাছের গুণগত মান, ক্রেতাদের আগ্রহ সৃষ্টি, মাছের প্রকৃত স্বাদ অক্ষুন্ন থাকে এবং পরিবহনের ক্ষেত্রে বরফ ব্যবহার না হওয়ায় বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়। এই পদ্ধতি দিনে দিনে মানুষের মাঝে আরো জনপ্রিয়তা হচ্ছে।
পিএনএস/আলআমীন
তাজা মাছের চাহিদা বাড়ছে রাজধানীর বাজারে
08-04-2017 02:52PM