জাইকা ছয় প্রকল্পে ১৩ হাজার কোটি টাকা দিচ্ছে

  03-07-2017 08:52AM


পিএনএন ডেস্ক: বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, সেতু নির্মাণ, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, পরিবহন ব্যবস্থা এবং পানিসম্পদ উন্নয়নের ছয় প্রকল্পে বাংলাদেশকে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান। গত বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ও জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) মধ্যে এ বিষয়ে ঋণ চুক্তি হয়েছে। চুক্তিতে ইআরডির ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী শফিকুল আজম ও জাইকার বাংলাদেশ-প্রধান তাকাতোসি নিশিকাতা সই করেন।

এসব প্রকল্পে জাইকার ঋণ আগে থেকেই অনুমোদন হয়েছিল। এখন চুক্তি হলো। জাইকার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ছয় প্রকল্পে মোট ১৭৮ দশমিক ২২৩ বিলিয়ন ইয়েন ঋণের (১ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার ৭২০ কোটি টাকা) চুক্তি স্বাক্ষর হয়। বার্ষিক দশমিক ৭০ শতাংশ সুদের এ ঋণ শোধ করতে বাংলাদেশ সময় পাবে ৩০ বছর। রেয়াতকাল (গ্রেস পিরিয়ড) ধরা হয়েছে ১০ বছর। অর্থাৎ চুক্তির প্রথম দশ বছর পর থেকে ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে।

ঋণের সবচেয়ে বড় অংশ যাচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণে নেওয়া প্রথম প্রকল্পে। ৭৬ দশমিক ৮২ বিলিয়ন ইয়েন বা পাঁচ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা দেওয়া হবে এ প্রকল্পে। আগামী জানুয়ারিতে জাইকা এ অর্থ ছাড় করবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন প্যাসেঞ্জার ও কার্গো টার্মিনাল করা হবে। বিমানবন্দরের ধারণক্ষমতা ও নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে, তা অব্যাহত থাকলে আগামী বছর এ বিমানবন্দরে বার্ষিক ৮০ লাখের বেশি আন্তর্জাতিক যাত্রী যাতায়াত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ২০৩৫ সালে যা দুই কোটি ২০ লাখে পেঁৗছাবে। এ ছাড়া কার্গো পরিবহন বাড়বে ১৪ শতাংশ হারে। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করা হবে।
কাঁচপুর, মেঘনা, গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ এবং বর্তমান সেতুর সংস্কার বাবদ জাইকা ৫২ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ইয়েন বা তিন হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা ঋণ দেবে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে যোগাযোগ বাড়াতে এ সেতু কার্যকর ভূমিকা রাখবে। কাঁচপুর, মেঘনা ও গোমতী প্রথম সেতু নির্মাণে জাইকা প্রায় ২৯ বিলিয়ন ইয়েন ঋণ দিয়েছিল।

ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পে ৫ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন ইয়েন বা ৪০০ কোটি টাকা ঋণের চুক্তি হয়েছে। এটিই দেশের প্রথম ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম। এ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজধানীর যানজট কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ তৃতীয় প্রকল্পে ১০ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ইয়েন বা ৭৭৫ কোটি টাকা ঋণের চুক্তি হয়েছে। কক্সবাজারের মহেশখালীর এ বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়ার আশা করছে সরকার। বিদ্যুতায়ন ও শিল্পায়নের কারণে দেশে বিদ্যুতের চাহিদা বছরে ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। প্রকল্পটি বর্ধিত চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গত বছরের জুনে জাইকা মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি পর্যায়ের জন্য ৩৩ কোটি ৬৬ লাখ ডলার দেওয়ার চুক্তি করলেও ১ জুলাই গুলশানে জঙ্গি হামলার পর দরপত্র প্রক্রিয়া স্থগিত করা হয়। জাইকার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, মাতারবাড়ী প্রকল্পের প্রাথমিক ক্রয়ের জন্য চলতি জুলাইয়ে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হবে। মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের জন্য ২০১৪ সালে ৩৬ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করে সরকার। সে সময় সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়, এ প্রকল্পে ২৯ হাজার কোটি টাকা দেবে জাইকা। বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ ২০২৩ সালের অক্টোবরে শেষ হবে বলে আশা করছে সরকার। অন্যদিকে ঢাকায় ভূগর্ভস্থ বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণে ২০ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ইয়েন বা এক হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাইকা। এ ছাড়া ছোট আকারে পানিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পে ১১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ইয়েন বা ৮৫৩ কোটি টাকা দিচ্ছে জাইকা।

জাইকার সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সস্তা শ্রম ও প্রচুর জনশক্তির কারণে বিদেশি বিভিন্ন কোম্পানির মতো জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। সে সঙ্গে বড় বাজার বাংলাদেশকে আগামী দিনের একটি সম্ভাবনাময় শিল্পকেন্দ্র ও বিনিয়োগ গন্তব্যে পরিণত করেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করার পথের 'বাধা অপসারণে' জাইকা বাংলাদেশের পাশে থাকবে।

বাংলাবিজনিউজ/আ.হোসেন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন