পাঁচ বছরে ৭০ হাজার কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল

  01-08-2017 08:49AM

পিএনএস ডেস্ক: ব্যাংক খাতের গ্রাহকদের অনেকেই সময় মতো ঋণ পরিশোধ করতে পারছেন না। বড় গ্রাহকদের মধ্যেই এ প্রবণতা বেশি। এ কারণে ব্যাংকগুলোকে প্রতিবছর বিপুল অঙ্কের ঋণ পরিশোধের সময়সূচি এবং কিস্তির অঙ্ক পুনঃনির্ধারণ করতে হচ্ছে। ব্যাংকিং পরিভাষায় এর নাম ঋণ পুনঃতফসিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদনের তথ্য মতে, গত পাঁচ বছরে বিভিন্ন গ্রাহকের ৭০ হাজার ৪৩০ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল করেছে ব্যাংকগুলো। গত বছর ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১০ দশমিক ৫০ শতাংশ অন্তত একবার পুনঃতফসিল হয়েছে। বিপুল পরিমাণের ঋণ পুনঃতফসিল ব্যাংক খাতের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন-২০১৬ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশিত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সভাকক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গভর্নর ফজলে কবির এই প্রতিবেদনের মোড়ক উন্মোচন করেন। ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অধিকাংশ ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ব্যাংক খাতের ঋণের বড় অংশই কয়েকটি খাতে কেন্দ্রীভূত। এর মধ্যে এককভাবে সবচেয়ে বেশি ঋণ রয়েছে বাণিজ্য খাতে। মোট খেলাপি ঋণের ২৩ দশমিক ৪০ শতাংশই বাণিজ্যিক ঋণ। খাত ভিত্তিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ খেলাপি ঋণ রয়েছে তৈরি পোশাক শিল্পে। মোট খেলাপি ঋণের ১২ দশমিক ৬০ শতাংশ এ খাতের। আর বৃহৎ শিল্পে খেলাপি ঋণ রয়েছে ৬ হাজার ১১০ কোটি টাকা। তবে গাড়ি কেনা, ক্রেডিট কার্ড, ব্যক্তিগত ও বাড়ি করার ঋণে খেলাপি ঋণের হার এক শতাংশের কম।

সম্ভাব্য খেলাপি হওয়া থেকে বিরত থাকতে এবং খেলাপি হওয়ার পর তা নিয়মিত করতে পুনঃতফসিল করেন ঋণগ্রহীতারা। পুনঃতফসিল করতে নির্ধারিত হারে নগদ ডাউন পেমেন্ট দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে ২০১৩ সালে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বিবেচনায় শিথিল শর্তে ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়। সাময়িক সময়ের জন্য ওই সুযোগ দেওয়া হলেও পরে বেশিরভাগ ঋণ শিথিল শর্তেই পুনঃতফসিল হয়েছে।

পুনঃতফসিল বেড়েছে ব্যাপকভাবে। গত বছর পুনঃতফসিলের ৫৪ দশমিক ২০ শতাংশ করেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানার তিনটি ও দুটি বেসরকারি ব্যাংক। পুনঃতফসিল হওয়া ঋণের ৪২ শতাংশই বৃহদাঙ্কের। মাঝারি মানের ছিল ২৫ শতাংশ। আর কুটির, অতি ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র ঋণের ১০ শতাংশের কম।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, বড় ঋণ ব্যাংক খাতের জন্য বেশি ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বড় ধরনের আধিক্য কমাতে কর্মসংস্থানমুখী ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে ঋণ বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে খেলাপি ঋণ সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আদায় জোরদারের পাশাপাশি ভালোভাবে যাচাই করে ঋণ বিতরণ করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা আল্লাহ মালিক কাজেমী বলেন, ব্যাংক খাত দুই পায়ে হাঁটছে। ঝুঁকি কমাতে এখন চার পায়ে হাঁটতে হবে। এক জায়গায় ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়লে চলবে না। এসকে সুর চৌধুরী বলেন, গত বছর ব্যাংক খাতের অগ্রগতি ছিল লক্ষণীয়। এ খাতের মূলধন পর্যাপ্ততার হার ছিল সন্তোষজনক। ঝুঁকি সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। ঋণ বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ঝুঁকি আরও কমাতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি ব্যাংকের বড় ১০ জন করে গ্রাহক খেলাপি হলে মূলধন ঘাটতিতে পড়বে ৩৭টি ব্যাংক। বড় ৭ জন করে গ্রাহক খেলাপি হলে ৩৩টি ব্যাংক মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হবে। একইভাবে তিনজন করে গ্রাহক যদি খেলাপি হন তাতে মূলধন ঘাটতি হবে ২৩টি ব্যাংকের। মোট খেলাপি ঋণের প্রায় ৫২ শতাংশ তথা ৩২ হাজার ১৮১ কোটি টাকা ছিল ৫ ব্যাংকে।

খেলাপি হওয়া এসব ঋণের ৮৪ দশমিক ৪০ শতাংশই হলো মন্দমানে শ্রেণিকৃত। প্রতিবেদনে ব্যাংকগুলোর নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণীকরণ প্রতিবেদন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, খেলাপি ঋণের শীর্ষ থাকা ৫ ব্যাংকের সব ক'টি সরকারি মালিকানার।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন