বেতন বাড়ানোয় মুনাফা কমেছে গ্রামীণ ব্যাংকের

  02-08-2017 08:41AM

পিএনএস ডেস্ক: পশুপালন খাতে ঋণ বিতরণ বাড়িয়েছে গ্রামীণ ব্যাংক। একই সঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদেরও বেশি করে ঋণ দিচ্ছে বিশেষায়িত এ ব্যাংক। গত ছয় মাসে ৫ লাখ নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ব্যাংকে। এতে ব্যাংকটির সামগ্রিক ঋণ বিতরণ বেড়েছে। যদিও গত ছয় মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকটির পরিচালন মুনাফা সামান্য কমেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বলছে, জাতীয় বেতন স্কেলের সঙ্গে সমন্বয় করে কর্মীদের বেতন-ভাতা দেওয়ায় গত বছরের তুলনায় মুনাফা কম হয়েছে। তবে এ অবস্থা সাময়িক। আগামীতে মুনাফা বাড়বে।

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে গ্রামীণ ব্যাংক ১০২ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে, যা ২০১৬ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ৮ কোটি টাকা কম। গ্রামীণ ব্যাংক গত বছরের জুলাই থেকে জাতীয় বেতন স্কেল ২০১৫ এর সঙ্গে সমন্বয় করে মূল বেতন দেওয়া শুরু করে। এরপর গত জানুয়ারি থেকে মূল বেতনের পাশাপাশি অন্যান্য ভাতাও দেওয়া শুরু করেছে। এ কারণে গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬১ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যয় হয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন কুমার নাগ গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারের পে-স্কেলের সঙ্গে সমন্বয় করে বর্ধিত বেতন-ভাতা কার্যকর করা হয়েছে। এতে ব্যাংকের সব পর্যায়ের কর্মীই উৎসাহ নিয়ে কাজ করছেন। এ ছাড়া ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সরেজমিনে মাঠ পর্যায়ের কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন। যে কারণে সামগ্রিক কর্মকাণ্ডও বেড়েছে। এতে আয় বেড়েছে। তবে সরকারের নতুন স্কেল অনুযায়ী বেতন-ভাতা দেওয়ায় খরচও বেড়েছে। এ জন্য আগের বছরের তুলনায় মুনাফা কম দেখা যাচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামীতে মুনাফা বাড়বে।

সূত্র জানায়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংকটি ১১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। শুধু জুন মাসে এক হাজার ৫৮২ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বিতরণ করা এসব ঋণের প্রায় ২৫ শতাংশ পশুপালন খাতে দেওয়া হচ্ছে। ২০১৬ সালের প্রথম ৬ মাসে ব্যাংকটি বিতরণ করেছিল ৯ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা। গত ছয় মাসে শুধু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ (এসএমই) খাতেই বিতরণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা। গত বছরের জুনের তুলনায় এ বছর জুন শেষে ব্যাংকটিতে ১৭ লাখেরও বেশি ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ গ্রহীতা বেড়েছে। ব্যাংকটির শুরু থেকে এ পর্যন্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা খাতে ঋণ বিতরণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি।

অন্যদিকে চলতি বছরে এ পর্যন্ত ব্যাংকে ৫ লাখ নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তবে এ সময়ে ব্যাংকটির সদস্য নন এমন ব্যক্তিদের আমানত কমেছে ২৯৭ কোটি টাকা। গত জুন শেষে সদস্য নন এমন ব্যক্তিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা, যা আগের বছর জুন শেষে ছিল ৬ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা।

এসব বিষয়ে রতন কুমার নাগ বলেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কিছু পুরনো ঋণ স্কিম চাঙ্গা করা হয়েছে। বিশেষত পশুপালন ঋণে জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ এখন ভারত থেকে গরু আসছে না। ফলে দেশে গরুর চাহিদা বেড়েছে। যে কারণে গ্রামীণ ব্যাংক গরু পালনে বেশি বেশি ঋণ দিচ্ছে। এতে দেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে। সদস্যরাও আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ ছাড়া ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণে জোর দেওয়া হয়েছে। কারণ অনেকেই বর্তমানে নিজস্ব উদ্যোগে কিছু করতে চাইছে। এসব ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে ঋণ দেওয়াসহ সামগ্রিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে মাঠ পর্যায়ের আঞ্চলিক ও শাখা ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে নিয়মিত স্কাইপিতে আলোচনা করা হচ্ছে। সময়োপযোগী কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

২০১৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক ১০০ কোটি টাকা নিট মুনাফা করে। গত বছর সদস্যদের ৩০ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছে ব্যাংক। এ বছরও কমপক্ষে ৩০ শতাংশ দেওয়ার আশা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের। ব্যাংকটির পরিশোধিত মূলধনের সরকারি অংশ ঠিক রাখতে গত জুনে ২২ লাখ টাকা দিয়েছে সরকার। ব্যাংকটিতে সরকারের ২৫ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। ২০১৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সরকার মুনাফা হিসেবে প্রায় ৬ কোটি টাকা পেয়েছে।

গ্রামীণ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ড. ইউনূসের অব্যাহতির বছরে অর্থাৎ ২০১১ সালে তার আগের বছরের তুলনায় মুনাফা কমে যায়। ২০১০ সালে মুনাফা ছিল ৭৬ কোটি টাকা। পরের বছর তা কমে দাঁড়ায় ৬৮ কোটিতে। কিন্তু পরের দু'বছর মুনাফা বেশ বাড়ে। ২০১২ সালে ১৪৫ কোটি ও ২০১৩ সালে ১৩৩ কোটি টাকা মুনাফা করে ব্যাংকটি। এরপর নানা অনিশ্চয়তার কারণে ব্যাংকটির মুনাফা ক্রমেই কমছিল। ২০১৪ সালে ৪৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করে। পরের বছর ২০১৫ সালে মুনাফা নেমে আসে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকায়। ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ ব্যাংকের বর্তমানে সারাদেশে শাখার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৬৮টি। শুরু থেকে গত জুন পর্যন্ত এক লাখ ৫৩ হাজার ১২৪ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন