মার্জিন ঋণদাতাদেরই লোকসান ৮৭০০ কোটি টাকা

  06-08-2017 08:42AM


পিএনএস ডেস্ক: শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ হিসাবে মূলধনী লোকসান (নেগেটিভ ইক্যুইটি) জুন শেষে দাঁড়িয়েছে আট হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল ঋণই (প্রিন্সিপাল) ৬ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ও ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা সুদ। শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, দুই স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বিভিন্ন ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, এ লোকসানের পুরোটাই ঋণ প্রদানকারী ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকের। তবে মূলধনী লোকসানে থাকা বিও হিসাবের সংখ্যা ও এসব হিসাবধারী বিনিয়োগকারীর মোট আর্থিক লোকসানের পরিসংখ্যান কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান এখন পর্যন্ত করেনি।

মার্জিন ঋণধারী বিও হিসাবে মূলধনী লোকসানের অর্থ- এ হিসাবগুলোতে থাকা সব শেয়ার এখন বিক্রি করলে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারীরা এক টাকাও ফেরত পাবেন না। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীর পুঁজির পুরোটাই লোকসান হবে। সংশ্লিষ্টদের ধারণা, এর পরিমাণ অন্তত ২০ হাজার কোটি টাকা হবে। অন্যদিকে জুন শেষে ঋণ প্রদানকারী ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর লোকসান হবে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। বকেয়া সুদ হিসাব করলে যা দাঁড়াবে ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এপ্রিল শেষে এর পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা। যদিও গত ৩-৪ বছর অধিকাংশ লোকসানি হিসাবে সুদ আরোপ বন্ধ আছে।

শেয়ারবাজারে এখন ১১৫ মার্চেন্ট ব্যাংক ও ব্রোকারেজ হাউসের দেওয়া মার্জিন ঋণের পরিমাণ প্রায় ১৬ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর
মধ্যে কমপক্ষে পাঁচ কোটি টাকা ঋণ প্রদানকারী ৫৯ ব্রোকারেজ হাউসের মার্জিন ঋণ প্রায় ৯ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ৩০ মার্চেন্ট ব্যাংক মার্জিন ঋণ বাবদ পাবে ৬ হাজার ৩৮২ কোটি টাকা।

এর মধ্যে মূলধনী লোকসানে থাকা মার্জিন ঋণ হিসাব নিয়ে গভীর সংকটে আছে অন্তত ৪০ মার্চেন্ট ব্যাংক এবং ব্রোকারেজ হাউস। এর শীর্ষে আছে ব্যাংক বহির্ভূর্র্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ফাইন্যান্সের মালিকানাধীন ব্রোকারেজ হাউস পিএফআই সিকিউরিটিজ। তাদের দেওয়া মার্জিন ঋণ হিসাবে মূলধনী লোকসান প্রায় ৮৫ শতাংশ। প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের কাছে বকেয়া সুদসহ মার্জিন ঋণ বাবদ পাবে প্রায় ৮৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূলধনী লোকসান ৭৫০ কোটি টাকা।

পিএফআই সিকিউরিটিজের সিইও ফরিদউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, সুদের ৮০ শতাংশ মওকুফ করার প্রস্তাব দিয়েও গ্রাহকদের সাড়া মেলেনি। এ অবস্থায় কিছু হিসাবে ঋণ অবলোপন ও প্রতিষ্ঠানের মূলধন বাড়িয়ে সংকট উত্তরণের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত ২০১০ সালের ডিসেম্বরে শেয়ারবাজারে ধস নামার আগে যেসব বিও হিসাবে ঋণ দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোর বেশিরভাগ মূলধনী লোকসানে আছে। একই অবস্থা ধসের অব্যবহিত পরে দেওয়া ঋণ হিসাবগুলোতেও। মূলধন হারিয়ে হতাশাগ্রস্ত এসব বিনিয়োগকারী গত কয়েক বছর তাদের শেয়ারের খোঁজ-খবরও নিচ্ছেন না।

এদিকে ঋণ প্রদানকারী ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্টগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মার্জিন ঋণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা স্থগিত করে মূলধনী লোকসানে থাকা বিও হিসাবগুলোতে শেয়ার লেনদেন করার সুযোগ দেওয়া হয়। শেয়ারবাজারের সার্বিক স্বার্থে গত সাড়ে ছয় বছর এ সুবিধা প্রদান করে আসছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি। সংস্থাটির এক কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘ দিন এ সুযোগ দেওয়া হলেও তা খুব কাজে আসেনি। খুব কম প্রতিষ্ঠানই শেয়ার কেনাবেচা করে এসব হিসাবে লোকসান কমাতে পেরেছে। সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে পুনরায় এ সুযোগ দেওয়া হয়, যা শেষ হচ্ছে আগামী ১৮ আগস্ট। এ অবস্থায় ঢালাওভাবে সব প্রতিষ্ঠানের জন্য এ সুবিধা রাখা হবে কি-না, তা বিবেচনা করছে বিএসইসি।

তবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই ও সিএসই) পুনরায় মার্জিন ঋণ আইনের এ ধারা আরও এক বছরের জন্য স্থগিত রাখতে সুপারিশ করেছে।
ব্রোকারেজ হাউসগুলোর সংগঠন ডিবিএ সভাপতি আহমেদ রশীদ লালী মনে করেন, সুফল না মিললে কোনো আইন দীর্ঘ দিন অকার্যকর রাখা অযৌক্তিক। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, শেয়ারবাজার ধসের সাত বছর পরও যারা নেগেটিভ ইক্যুইটি সমস্যার সমাধান করতে পারেননি, তারা আর পারবেন বলেও মনে হয় না। এখন বিকল্প চিন্তা করতে হবে। তার মতে, ঋণ অবলোপন অথবা নতুন করে মূলধন জোগান দিয়ে সংকট সমাধান করা যেতে পারে।

মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠন বিএমবিএর সভাপতি ছায়েদুর রহমান অবশ্য ভিন্নমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আইন স্থগিত করার সুযোগ পাওয়া যায়নি- তা বলা যাবে না। এখন হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। এ লেনদেন বৃদ্ধিতে মূলধনী লোকসানে থাকা হিসাবগুলো থেকে হওয়া লেনদেনের ভূমিকা আছে বলে মনে করেন তিনি।

ছায়েদুর রহমান মনে করেন, এ ছাড়া এসব হিসাবে লেনদেনের সুযোগ প্রত্যাহার হলে বাজারে নেতিবাচক মনস্তাত্তি্বক সংকট তৈরি হতে পারে। তিনি বলেন, সুযোগটি পুরোপুরি প্রত্যাহার না করে এর সুফল কীভাবে নেওয়া যায়, তা নিয়ে ভাবা যেতে পারে।

জানতে চাইলে বিএসইসির মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, মেয়াদ বৃদ্ধির ফলাফল যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। তবে খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার মতো ফল মেলেনি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থার অপর এক কর্মকর্তা জানান, ঢালাওভাবে সুযোগ দেওয়ার বদলে কেস-টু-কেস ভিত্তিতে সংকটে থাকা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকেই পরিস্থিতি উত্তরণে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করার বিষয়ে ভাবা হচ্ছে। প্রয়োজনে সে ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে। তিনি জানান, শিগগির এ বিষয়ে ব্রোকারেজ হাউস ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর সংগঠনগুলোর সঙ্গে বৈঠক করবে বিএসইসি।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন