পাইকারি বাজারে কমছে চালের দাম

  21-09-2017 08:26PM

পিএনএস : বিদেশ থেকে সরকারের চাল আমদানি, বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়াতে শুল্ক কমানো ও মিলমালিকদের সঙ্গে বৈঠকসহ সরকারের নানা উদ্যোগের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পাইকারি চালের বাজারে। গত মঙ্গলবার মন্ত্রীদের কাছে মিলমালিকরা দাম কমানোর আশ্বাস দেওয়ার পর পাইকারি আড়তে কেজিপ্রতি প্রায় দুই টাকা কমেছে চালের দাম। তবে খুচরা বাজারে এখনো এর প্রভাব পড়েনি।

বিক্রেতারা বলছেন, বাড়তি দামে কেনা স্টকের চাল শেষ হলেই খুচরা বাজারে দাম কমবে। রাজধানীর কলতাবাজার এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আলাওল হোসেন বলেন, ‘আড়তদারের প্রভাবে আমাদের পাইকারি বাজারেও কমতে শুরু করেছে চালের দাম। কিছুদিনের মধ্যে আরও কমবে। বাইরে থেকে অঢেল চাল ঢুকছে বাজারে।’

এদিকে খোলাবাজারে (ওএমএস) সরকারের চাল বিক্রি শুরু হয়েছে, যদিও ওএমএসের আতপ চাল কেনায় ক্রেতাদের কোনো আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। আতপ চালের ভাত খেতে অভ্যস্ত নয় তারা। অন্যদিকে চালের মজুদ ঠেকাতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আজ ঢাকার বেশ কয়েকটি চালের আড়ত ঘুরে দেখা যায়, ঈদের পর কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে যাওয়া চালের দাম কমতে শুরু করেছে। গত মঙ্গলবার খাদ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীদের সঙ্গে মিলমালিকদের বৈঠকে চালের দাম কমানোর অশ্বাস দেয়ার পর আজ দু-এক টাকা কমেছে চালের দাম। তবে খুচরা বিক্রেতারা এখনো মোটা চাল ৫২-৫৪ এবং সরু চাল ৬৮-৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন।

রাজধানীর বাবুবাজার এলাকার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সবে মাত্র চালের দাম কমতে শুরু করেছে। তবে খুচরা ব্যবসায়ীরা এখনো নতুন করে চাল কেনা শুরু করেনি। সেই কারণে বাজারে দাম কমার প্রভাব ক্রেতাদের কাছে সেভাবে পড়েনি। তবে খুচরার স্টক শেষ হলেই বাজারে এর প্রভাব পড়তে শুরু করবে।’

খুচরা চাল বিক্রেতা কারওয়ান বাজারের মেসার্স মতলব ট্রেডার্সের কর্ণধার এম এ রাইয়ান জগল বলেন, ‘বাজারে চালের দাম কমতির দিকে। এর পেছনে দুটি কারণ। একদিকে সরকারের খোলাবাজারে চাল বিক্রি, অন্যদিকে অবৈধ মজুদদারদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান পরিচালনা।’ এ অভিযান অব্যাহত থাকলে চালের দাম দু-তিন দিনের মধ্যে সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

বিভিন্ন পর্যায়ের চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চাল আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২ শতাংশ করা এবং বিনা পুঁজিতে আমদানি ঋণপত্র (এলসি) খোলার সুযোগ পেয়ে ব্যবসায়ীরা প্রচুর চাল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছেন। আবার সরকারিভাবেও ১০ লাখ টন চাল আমদানি হচ্ছে।

নতুন করে এলসি খোলা চাল এখনো দেশের বাজারে না এলেও আগেই যারা ভারত থেকে চাল আমদানির এলসি খুলেছিলেন এবং বিভিন্ন স্থল ও নৌবন্দরে যেসব চাল খালাসের অপেক্ষায় ছিল, শুল্ক কমানোর পর এসব চাল দ্রুত খালাস করা হয়েছে। ঈদের আগে মোটা চালের ওপর দামের প্রভাব পড়লেও ঈদের পর আবার বেড়ে যায়। তবে গত মঙ্গলবার মিলমালিকদের আশ্বাসের প্রভাবে পাইকারি বাজারে দাম ইতোমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে খুচরা বাজারেও পড়বে।

হাতিরপুল কাঁচাবাজারে আজ মোটা চাল বিআর-২৮ কেজিপ্রতি ৪৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঈদের আগেও এসব চাল ৪২-৪৩ টাকা পর্যন্ত কেজিতে বিক্রি হয়। এ ছাড়া গুটি ও স্বর্ণা কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৫২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক নম্বর মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা। সাধারণ মানের মিনিকেট ও নাজিরশাইল ৬২ থেকে ৬৫ টাকা।

খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, মিলমালিক ও পাইকারি আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছেন। তাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন সরকারের কিছু মানুষ। সরকার যদি দুই মাস আগে শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিত তাহলে সিন্ডিকেটকারীরা জনগণের পকেট থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ছিনিয়ে নিতে পারত না।এদিকে হঠাৎ করে চালের দাম কমতে থাকায় আগে বাড়তি দামে কেনা চাল নিয়ে তারা বিপাকে পড়েছেন বলেও জানান খুচরা বিক্রেতারা।

পিএনএস/মোঃ শ্যামল ইসলাম রাসেল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন