ডলারের ভয়াবহ সংকট

  30-11-2017 12:13PM


পিএনএস ডেস্ক: আমদানি পর্যায়ে বিল পরিশোধে ব্যাংকগুলোয় ডলার সংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। নিত্যদিনের চাহিদা মেটাতে ডলার কিনতে বাংলাদেশ ব্যাংকে ধরনা দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ব্যাংক বিক্রিও করছে। কিন্তু তাতে চাহিদা মিটছে না। এ সুযোগে কয়েকটি ব্যাংক ডলার বিক্রির অবৈধ বাজার বসিয়েছে। ঘোষিত দামের চেয়ে ৩ থেকে ৪ টাকা বেশি দরে অন্য ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে। এ অভিযোগে অন্তত ১১টি ব্যাংকে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে বাজারের ডলার চাহিদা পূরণে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের (ইডিএফ) আকার ২৫০ কোটি থেকে বাড়িয়ে ৩০০ কোটি ডলার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সের মাধ্যমে ব্যাংকগুলোয় ডলার জমা হয়। আমদানির মূল্য পরিশোধে ডলার খরচ হয়। সম্প্রতি আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের সংকট দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ১ হাজার ৯২০ কোটি ডলারের ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় যা ২৭ শতাংশ বেশি। একই সময়ে এলসি নিষ্পত্তি বেশি হয়েছে ২৪ শতাংশ। অথচ এ সময়ে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। অন্যদিকে টানা দুই অর্থবছর রেমিট্যান্স কমার পর চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত রেমিট্যান্সে ৬ দশমিক ৮৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। গত অর্থবছর আমদানিতে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বিপরীতে রপ্তানি বাড়ে মাত্র ১ দশমিক ৭২ শতাংশ। রেমিট্যান্স কমে ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ।

এলসি খোলায় ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিনিয়ত বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার চেয়ে আবেদন করছে ব্যাংকগুলো। গত মঙ্গলবার ১৮টি ব্যাংক ডলার চায়। ব্যাংকগুলোকে ৬ কোটি ডলার দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ কোটি ডলার বাজারে ছেড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসেনি।

এ সুযোগ বাজারে কারসাজি শুরু করেছে বড় কয়েকটি ব্যাংক। আমদানি পর্যায়ে ঘোষিত ডলারে মূল্য ৮৩ টাকার মধ্যে। আন্তঃব্যাংক লেনদেনে মূল্য ৮২ টাকা। খাতাকলমে এ রেট ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে আমদানিকারক ও অন্য ব্যাংকের কাছ থেকে ৮৪ থেকে ৮৫ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে কয়েকটি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী, রপ্তানি পর্যায়ে ডলার কেনা (টিটি ক্লিন) ও আমদানি পর্যায়ের ডলার বিক্রি (বিসি) মূল্যের ব্যবধান হবে সর্বোচ্চ ১ টাকা। টিটি ক্লিনে ডলার ৮২ টাকা ২৫ পয়সা হলেও বিক্রয়মূল্য হবে ৮৩ টাকা ২৫ পয়সা। কিন্তু ব্যাংক ৮৫ টাকায় ডলার বিক্রি করছে। কিন্তু তা ঘোষণা করা হচ্ছে না। এ কারসাজির বিষয়টি জানার পর ১১ ব্যাংকে নোটিশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড, মার্কেন্টাইল, এনসিসি, ইউসিবি, ব্যাংক এশিয়া, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক ইত্যাদি। গত মঙ্গলবার চিঠি দিয়ে তিন দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে বাজারে চাহিদা মেটাতে ইডিএফ আকার ৫০ কোটি বাড়িয়ে ৩০০ কোটি ডলার করা হয়েছে। রপ্তানিকারকরা কাঁচামাল আমদানিতে ছয় মাসের জন্য এ তহবিল থেকে ঋণ নিতে পারেন। ডলার সংকট কাটিয়ে উঠতে এ তহবিল বাড়ানো হয়েছে যেন বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থ নিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাস্তবিক কারণে কিছু ব্যাংকের ডলার সংকট হয়েছে। কিন্তু অনেক ব্যাংকেই ডলার বেশি রয়েছে। বেশি থাকা ব্যাংকগুলো কারসাজিতে লিপ্ত হয়েছে। তাদের ধরা হচ্ছে। এদিকে ডলার সংকট মেটাতে চাহিদা বিবেচনা করে ব্যাংকগুলোয় ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে। এ মুহূর্তে তাদের প্রয়োজন মেটাতে ইডিএফ বাড়ানো হয়েছে। ইডিএফ থেকে দ্রুত ঋণ ছাড় করা হচ্ছে।

এদিকে বৈদেশিক মুদ্রা আয় অনেক কমে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ নিম্নমুখী। রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করলেও এখন তা ৩২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। তাই বাজারে ডলার ছাড়ার বিষয়ে ব্যাপক সতর্ক বাংলাদেশ ব্যাংক। নিজেদের আয় অনুযায়ী আমদানিতে এলসি খোলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে ব্যাংকগুলোকে।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, সরবারহের চেয়ে চাহিদা বেশি থাকায় ডলারের দাম বাড়ছে। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানিতে ব্যয় অনেক বেড়েছে। এ ছাড়া বায়ার্স ক্রেডিট গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। ডলার বেশি থাকায় কয়েকটি ব্যাংকও বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। এক সময় ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ডলার বিক্রি করেছে। এখন প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করা উচিত। সূত্র: আমাদের সময়

পিএনএস/কামাল

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন