লোকসানের ক্ষত নিয়ে মাঠে আলু চাষিরা

  08-12-2017 02:35PM


পিএনএস ডেস্ক: মাত্র আটদিন পরেই হিমাগার কর্তৃপক্ষ রক্ষিত আলু বের করে ফেলবে। রাজশাহীর বিভিন্ন হিমাগারে এমন আলুর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ বস্তা। প্রতিবস্তায় লোকসান গুণতে হচ্ছে সাতশো’টাকা। পুঁজি হারিয়ে সর্বস্বান্ত কৃষক লোকসানের ক্ষত নিয়ে এরই মধ্যে মাঠে নেমে পড়েছেন নতুন আলু চাষে।

মাঠ থেকে উঠানোর পরে চাষিরা একরকম লড়াই করে আলু রাখে হিমাগারে। আলু উঠার মৌসুম শেষ হয়ে গেলে আলুর দাম বাড়ে। আর সেই সময় আলু বাজারজাত করতে পারলে চাষিদের লাভের পরিমাণও বেশি হয়। তবে এবারের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো।

রাজশাহীর বাজারে প্রতিনিয়ত আলুর দাম নিম্নমুখী। হিমাগারে আলু মজুত রেখে বিপাকে পড়েছে প্রান্তিক চাষি ও ব্যবসায়ীরা। অনেক স্বপ্ন নিয়ে হিমাগারে রাখা আলুই এখন চাষিদের বুকের কাটায় পরিণত হয়েছে। এবারে হিমাগারে আলু রেখে নিজের তহবিলের পাশাপাশি ঋণের টাকাও হারিয়ে গেছে। অনেকে হিমাগারে আলু রেখে ঋণ পরিশোধে ঘরের টাকা ভূর্তুকি লাগায় তা অস্বীকার করছে।

মোহনপুর উপজেলার নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের আলুচাষি ও ব্যবসায়ী মোবারক হোসেন বলেন, আলু নিয়ে প্রায় প্রতিবারই হাসি-কান্না লেগেই থাকে। কিন্তু এবারে কান্না ছাড়া চাষিরা হাসি দেখতে পাইনি। অর্থাৎ হিমাগারে আলু রাখার পর থেকেই শুধু কমছে দাম। এবারে বৃহস্পতির বদলে শনি জুটেছে চাষির কপালে।

তিনি বলেন, এবার তার প্রায় ১০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। তার মতো হাজার হাজার চাষির একই অবস্থা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মোহনপুরের মৌগাছি এলাকার এক আলু ব্যবসায়ী বলেন, তার এখনো এক হাজার পঞ্চাশ বস্তা আলু এক হিমাগারে রয়েছে। তাকে বারবার হিমাগার কর্তৃপক্ষের লোকজন আলু বিক্রিতে তাগাদা দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি বরাবরই আলু নিতে অস্বীকার করছেন।

কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমান প্রতি বস্তা আলুর দাম সাতশো’টাকা। কিন্তু হিমাগার থেকে প্রতিবস্তায় ঋণ নেয়া আছে ছয়শো’টাকা। আর হিমাগার ভাড়া বাবদ প্রতিবস্তায় গুণতে হবে প্রায় চারশো’টাকা। তাহলে প্রতিবস্তায় আমাকে ঘর থেকে গুণতে হবে তিনশো’টাকা। এতে তার প্রায় সাড়ে তিন লাখ টাকা লেগে যাবে। সেজন্য তিনি আলু নিতে অস্বীকার করছেন।

প্রান্তিক চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভের আশায় জেলার ২৬টি হিমাগারে আলু রাখেন। এই সব হিমাগারে আলু মজুতের ধারণক্ষমতা প্রায় ৩৪ লাখ বস্তা (প্রতিবস্তায় ৮৫ কেজি)। বর্তমান বাজারে প্রতিবস্তায় চাষি ও ব্যবসায়ীদের কমবেশি ৭০০ টাকা করে লোকসান গুনতে হচ্ছে। এখনো প্রায় ১৩ লাখ বস্তা অবিক্রিত রয়ে গেছে হিমাগারে। সব মিলিয়ে সেই হিসেবে শুধু হিমাগারে রক্ষিত আলুতেই ১৪০ কোটি টাকা লোকসান গুণছে তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হিমাগারের মহাব্যবস্থাপক জানান, চাষিদের সাথে হিমাগার কর্তৃপক্ষের নভেম্বরের ৩০ তারিখ পর্যন্ত চুক্তিনামা থাকে। কিন্তু এবারে আলুর দাম না থাকায় এবং হিমাগারে ঋণ পরিশোধে হয়তো ১০ থেকে ১২ দিন বাড়িয়ে দিবে। এরপরেই হিমাগারে রক্ষিত আলু বের করে ফেলা হবে। লোকসান যাই হোক।

তিনি আরো জানান, এখনো রাজশাহীর বিভিন্ন হিমাগারে প্রায় ১৩ লাখ বস্তা আলু রক্ষিত আছে।

রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি আবু বাক্কার জানান, হিমাগারে আলু রাখার শর্তে এবার কৃষক-ব্যবসায়ীদের বিপুল অঙ্কের টাকা ঋণ দেয়া আছে। কিন্তু বাজার মন্দার কারণে কৃষক-ব্যবসায়ীরা আলু তুলতে হিমাগারে আসছেন না। এ অবস্থায় হিমাগার ভাড়ার পাশাপাশি ঋণ আদায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাজার চাঙা হওয়ার সময় নেই। চাষিদের কাছে হিমাগার কর্তৃপক্ষের বিপুল পরিমাণ টাকা অনাদায়ে রয়ে গেল।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক দেব দুলাল ঢালী জানান, কৃষি বিভাগ ফসলের উৎপাদন ও কৃষকদের বিভিন্ন লাভজনক ফসল চাষে উৎসাহিত করে থাকে। কোনো ফসলের দাম কম-বৃদ্ধির দেখভাল করে বাজার ব্যবস্থাপনা বিভাগ। বর্তমানে সত্যিই অন্যান্য সবজির তুলনায় আলুর দাম কম। আলুর দাম রিকোভারী হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলে তিনি জানান।

পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন