বিক্রি হয় ৮৭ পয়সায়, কিনতে হয় ১৮ টাকায়!

  09-12-2017 12:18PM

পিএনএস ডেস্ক: রাজধানীতে ভোক্তারা যে আলু প্রতি কেজি ১৮ টাকায় কিনছেন, কৃষক তা বিক্রি করছেন এক টাকারও কম দামে। এতে ভোক্তারা অধিক দামে আলু কিনলেও কৃষকরা লাভের পরিবর্তে গুনছেন লোকসান। তাই চলতি মৌসুমে তারা নতুন করে আলু চাষে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। এর জন্য চাহিদার চেয়ে যোগান বেশি হওয়ার পরও আলু রপ্তানি না করাকে দোষারোপ করছেন কৃষকরা।

যেসব জেলায় আলু সব চেয়ে বেশি উৎপাদিত হয় তার মধ্যে মুন্সীগঞ্জ জেলা অন্যতম। কিন্তু গত মৌসুমে উৎপাদিত আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। এমন মন্দা বাজার কথনোই হয়নি বলে দাবি এখানকার কৃষকদের। প্রতি বস্তা আলু উৎপাদনে যেখানে গড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা খরচ হয়, সেখানে কৃষক প্রতি বস্তায় দাম পাচ্ছেন ৭০ টাকা। সেই হিসেবে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করে কৃষক পাচ্ছেন ৮৭ পয়সা। এ কারণে অনেক চাষীই হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না।

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার বয়রাগাদি এলকার আলুচাষী আক্তার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার জীবনে এমন দেখিনি। আলুর দাম এত কম কোনো দিনই হয়নি। লাভ-উৎপাদন খরচ বাদ, এখন কত কম লোকসান হয় সেই হিসেবই করছি।’

তিনি জানান, ৮০ কেজির প্রতি বস্তা পুরনো আলু বিক্রি করছেন ৭০ টাকা দরে। অথচ প্রতি বস্তা আলু উৎপাদনে তার খরচ হয়েছে ৭০০ টাকার মতো।

আরেক কৃষক রিপন মাহমুদও জানালেন আলুর এমন মন্দা বাজার দরের কথা। রিপন বলেন, ‘ছোট থেকে বড় কৃষক সবাই লোকসান গুনছেন। যে যত বেশি জমিতে আলু চাষ করেছিল, সে তত বেশি লোকসানের মুখে পড়েছে। কৃষকরা প্রতি কেজি আলুতে ১ টাকা করেও পাচ্ছে না।’

এতে চলতি বছর কৃষকরা কম জমিতে আলু চাষ করবেন বলে জানান রিপন। তিনি বলেন, ‘এভাবে কৃষকরা লোকসান করতে চাইবেন না। আলুর পরিবর্তে তারা অন্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকবে।’
মুন্সীগঞ্জের মতো বগুড়া, নওগাঁসহ সারা দেশের কৃষকরাই নিজেদের আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। কোথাও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না কৃষক।

এলাকার কৃষকরা ন্যায্য দাম না পেলেও এদিকে রাজধানী ঢাকায় বেশি দামে আলু কিনতে হচ্ছে ভোক্তাদের। পাইকারী ও খুচরা দামে রয়েছে বিশাল ফারাক। মূলত মধ্যসত্ত্বভোগীদের কারণেই কৃষক থেকে ভোক্তা পর্যায়ে আলুর দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাচ্ছে।

রাজধানীর মিরপুরের পাইকারী বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান মা বাণিজ্য ভাণ্ডারের স্বত্তাধিকারী কানাই লাল জানান, এক বস্তা আলু ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বস্তায় ৮০ কেজি আলু থাকে। সে হিসেবে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ে ৬ টাকা ২৫ পয়সা।

কৃষক প্রতিকেজি আলু বিক্রি করে এক টাকাও পাচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে অন্য এক পাইকার জানান, যেসব জায়গায় আলু উৎপাদন হয় সেখান থেকে ঢাকায় আলু আনতে নানা ধরনের খরচ আছে। ট্রাক ভাড়া, শ্রমিক খরচ, বিভিন্ন ধরনের চাঁদা ইত্যাদি। মূলত এসব খরচের জন্যই আলুর দাম কিছুটা বেড়ে যায় বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অন্যদিকে পাইকারী বাজার থেকে মাত্র এক মিনিটের দুরত্বে খুচরা বাজার। সেখানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছিল ১৫ থেকে ১৮ টাকায়। অর্থ্যাৎ পাইকারি বাজার থেকে প্রায় তিনগুণ দামে খুচরা বাজারে আলু বিক্রি হয়। পাইকারি বাজার চেয়ে কেন এত বেশি দামে আলু বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে খুচরা বিক্রেতা বেলায়েত বলেন, ‘খুচরা বিক্রি করতে হলে তো দাম একটু বেশি রাখতেই হবে। দোকান ভাড়া আছে, অন্যান্য খরচ আছে। তা ছাড়া আমরা তো অনেক বেশি পরিমাণে বিক্রি করতে পারি না।’ রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর, মিরপুরসহ সব এলাকাতেই বর্তমানে প্রতি কেজি পুরনো আলু ১৫ থেকে ১৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

সূত্র: প্রিয়.কম

পিএনএস/আলআমীন

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন