দুই লাখ বিদেশী প্রতি বছর নিয়ে যাচ্ছে ৪০ হাজার কোটি টাকা

  15-12-2017 08:52AM


পিএনএস ডেস্ক: দেশে বর্তমানে দুই লাখেরও বেশি বিদেশী নাগরিক কর্মরত রয়েছেন। প্রতি বছর এসব বিদেশী দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে ৫০০ কোটি মার্কিন ডলার, বাংলাদেশী মুদ্রায় যা ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এ বিদেশীদের বেশির ভাগ কাজ করছেন তৈরী পোশাক খাতে। বাকিরা চামড়া শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল ও বিদেশী কয়েকটি সংস্থায় কাজ করছেন। এসব বিদেশীর এখানে কাজ করার প্রধান কারণ হচ্ছে- তারা যেসব কাজ করছেন তা করার জন্য স্থানীয়ভাবে দক্ষ লোক পাওয়া যায় না। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই দেশের উদ্যোক্তরা বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্ট খাতে দক্ষ লোক এনে এখানে নিয়োগ দিচ্ছেন। আর এতে করে দেশ থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা। এ প্রবণতা ঠেকানোর জন্য দেশে দক্ষ লোক তৈরি করার জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পটির নামকরণ করা হয়েছে ‘স্কিল ফর এমপ্লয়মেন্ট ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (এসইআইপি)।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এসইআইপি প্রকল্পটি এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এডিএফ ঋণ, সুইস এজেন্সি ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড কো-অপারেশনের (এসডিসি) অনুদান এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ২০১৪ থেকে ২০২০ মেয়াদে দক্ষতা উন্নয়নে পাঁচ লাখ দুই হাজার জনকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে ৭০ শতাংশকে সংশ্লিষ্ট শিল্প সংগঠনের আওতাভুক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে সহায়তা করা হবে।

সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ১২টি সংগঠনের সাথে চুক্তি হয়েছে সেখানে মূলত বিভিন্ন কলকারখানার বিদ্যমান শ্রমিক ও সুপারভাইজরদের নিম্ন পর্যায়ের দক্ষতা বৃদ্ধিতে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এসব কারখানায় মধ্যম ও উচ্চপর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা বৃদ্ধিকল্পে এ প্রকল্প থেকে বর্তমানে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বাস্তবায়নে বিশ্ববিদ্যালয়পর্যায়ে একটি করে এক্সিকিউটিভ ডেভেলপমেন্ট সেন্টার স্থাপনের প্রস্তুতিমূলক কাজের জন্য যে চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে সেইপ প্রকল্প থেকে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবি অনুষদ (টেক্সটাইল উপখাত), টেক্সটাইল বিশ্ববদ্যালয়( টেক্সটাইল উপখাত) ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় (নিটওয়্যার উপখাত) ও ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় (পাদুকা ও চামড়াজাত শিল্পখাত)। এরই অংশ হিসেব গত মঙ্গলবার দুইটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এ জন্য বিশ^বিদ্যালয়গুলোকে দিতে হবে ২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের দেশে এখন বিপুল বিদেশী কাজ করছে। এতে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা বাইরে চলে যাচ্ছে। এ বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় দেশের কাজে লাগছে না। আমরা নিজেরাই দক্ষতা অর্জন করতে পারলে তা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরো গতিশীল করবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশের বৃহৎ চারটি শিল্পখাতের মধ্যম এবং নির্বাহী পর্যায়ে দক্ষ জনবলের অভাবে বিদেশীদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আর একারনে দেশ থেকে প্রতি বছর বৈদেশিক মুদ্রা চলে যাচ্ছে। মূল্যবান এ বৈদেশিক মুদ্রা বাঁচানোর পাশাপাশি উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে দেশে দক্ষ জনবল তৈরির কোনো বিকল্প নেই।

চলতি বছর অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এ সক্রান্ত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শ্রমশক্তির স্বল্প দতা উচ্চতর হারে প্রবৃদ্ধি অর্জনে প্রধান অন্তরায়। বাংলাদেশ শিল্পায়ন ও কাঠামোগত পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হলেও প্রবৃদ্ধি অনুযায়ী শ্রমশক্তির দতার মান সঙ্গতিপূর্ণ নয়। উচ্চতর পর্যায়ে দতার ঘাটতির কারণে প্রতি বছর দেশের মোট প্রবাসী আয়ের এক-তৃতীয়াংশ নিয়ে যাচ্ছে বিদেশী শ্রমিকেরা। সার্বিকভাবে দতার উন্নয়ন ও ক্রমশ বিদেশী কর্মীদের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ, উচ্চতর ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ইনকিউবেটর’ বা ‘উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও উন্নয়ন কেন্দ্র’ স্থাপন এবং ‘বিশেষায়িত স্কিলস বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপনের সুপারিশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘দতা উন্নয়ন : উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের অগ্রাধিকার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য দেয়া হয়েছে। এতে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘দেশের জিডিপি’র প্রবৃদ্ধিতে দেশজ শিল্পের অবদান প্রায় ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে কম। দীর্ঘ দিন ধরে এ দেশে শিল্প খাতের অগ্রগতি দ জনশক্তির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা শিল্প কলকারখানার চাহিদার উপযোগী নয়। প্রকৃত দতা চাহিদার সাথে দতা সরবরাহ ব্যবস্থায় অসামঞ্জস্যতা থাকায় বিদ্যমান ঘাটতি পূরণ হচ্ছে না।


পিএনএস/আনোয়ার

@PNSNews24.com

আপনার মন্তব্য প্রকাশ করুন